অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কোটা আন্দোলনের নেতা মুহাম্মদ রাশেদ খানকে আটকের পর ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। শাহাবাগ থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলেও মিন্টো রোডের অফিসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ। তবে রিমান্ডেও মনোবল হারাননি তিনি। বুধবার ডিবি অফিসের সামনে রাশেদের সঙ্গে দেখা হয় তার মা ও স্ত্রীর। তখন রাশেদ তাদেরকে বলেছে যে, তোমরা চিন্তা করো না, আমি ভালো আছি।
রাশেদ খানের মা সালেহা বেগম বলেন, সে তো সকল ছাত্র সমাজের জন্য আন্দোলন করেছে। সে তো ইচ্ছা করে নেতা হতে যায়নি। সবাই তারে নেতা বানিয়েছে। সে তো কোনো অন্যায় করেনি। তাহলে তার হাতে কেন হাতকড়া পরানো হলো। তাকে বিনা দোষে কেন জেলে নেয়া হলো। তাকে কেন ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হলো।
রাশেদের স্ত্রী রাবেয়া খান বলেন, আমাদের একটাই দাবি, আমার স্বামী তো কোনো অন্যায় করেনি। বিনা কারণে তাকে জেলে নিয়ে যে নির্যাতন করা হচ্ছে এটা কেন? কি দোষ করেছে রাশেদ আমরা জানতে চাই। এমনকি রাশেদকে মঙ্গলবার আদালতে উঠানোর পর তাকে কোথায় রাখা হয়েছে সেটা পর্যন্ত আমরা জানি না। গতকাল সারা সকাল শাহবাগ থানার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করেছি। কিন্তু রাশেদের কোনো সন্ধান মিলেনি। শাহবাগ থানায় যেহেতু মামলা হয়েছে তাই সেখানকার কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারদের কাছে বারবার রাশেদের বিষয়ে জানতে চেয়েছি। তাদের একটাই কথা আমরা জানি না। এরপর অনেক সাহস করে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে বসে ছিলাম। এ সময় হঠাৎ করে দেখতে পাই পুলিশের লোকদের পাহারায় রাশেদকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তখন একজন অফিসার রাশেদের মাকে বললো এই দেখেন আপনার ছেলে ভালো আছে। এ সময় রাশেদকে তারা হাতকড়া পরিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। রাশেদ শুধু এতোটুকু কথাই বলছিল, তোমরা চিন্তা করো না, আমি ভালো আছি।
ডিবির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এডিসি নাজমুল ইসলাম একটি জাতীয় পত্রিকাকে জানিয়েছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের টাকা আসতো বেশ কয়েকটি বিকাশ ও রকেট অ্যাকাউন্টে। রাশেদকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তারা এই তথ্য জানতে পেরেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসব অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছে।
ডিবির এমন বক্তব্য সম্পর্কে আন্দোলনকারীরা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন হলো সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের একটি স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আন্দোলনকারী ও সাধারণ মানুষদের পাঠানো টাকাতেই এই আন্দোলনের খরচ যোগানো হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত এই সহায়তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আন্দোলনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এই অপচেষ্টার নিন্দা জানাই।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক নেতা নুরুল হক নূর ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলায় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়। প্রশাসনের চাপে গভীর রাতে নূরকে অসুস্থ অবস্থায়ই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বের করে দেয়। এখন তিনি কোথায় আছে কেউ জানে না। এছাড়া আন্দোলনের আরেক নেতা ফারুক হোসেনকে ছাত্রলীগ তুলে নিয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ সময় নিখোঁজ থাকার পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং পুলিশের গাড়ি পোড়ানোর একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার, রিমান্ড নির্যাতন ও ছাত্রলীগের অব্যাহত হামলার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা। বুধবার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের ৩টি হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। এসময় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসে ছাত্রলীগ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে।
বেগম রোকেয়া হলে রাত সাড়ে ১০টা, শামসুন্নাহার হলে রাত সাড়ে ১১টা এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
কেন যৌক্তিক দাবির জন্য নিরপরাধ ছাত্র রাশেদকে রিমান্ডে নেয়া হবে? কেন আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা হবে? যাদের জেলে নেয়া হয়েছে এখনও কেন তাদের ছেড়ে দেয়া হয়নি? আন্দোলনকারী এক মেয়ের গায়ে কেন হাত তোলা হবে? এমন প্রশ্ন রাখেন বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, ‘ছাত্রলীগ আমাদের নিরাপরাধ ভাই-বোনদের ওপর হামলা করেছে। আমরা এর বিচার চাই। একই সঙ্গে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় আটক রাশেদ ভাইসহ সকলের মুক্তি চাই।’ তারা বলেন, ‘রাশেদ ভাইকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। আমরা অবিলম্বে তার মুক্তি চাই। আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। আমাদের আন্দোলনকে রাজনৈতিক ইস্যু বানানোর চেষ্টা হচ্ছে। আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলছি।’
বিক্ষোভে ‘আর নয় ভয়, এবার হবে জয়’, আমার ভাই নিখোঁজ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, হামলা-মামলা হুলিয়া, নিতে হবে তুলিয়া’, ‘রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন রুখ দাঁড়াও ছাত্র সমাজ’ স্লোগান দেন ছাত্রীরা।
এর আগে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন করেন। এ সময় দেয়া বক্তৃতায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা ‘মৃত্যুপুরী’তে পরিণত হয়েছে। এ ‘মৃত্যুপুরী’র অবসান কে ঘটাবে। এখন আর সময় নেই। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন আর মানববন্ধন, বিবৃতি- এগুলোর সময় নেই। এখন আমাদের সরাসরি কর্মসূচিতে যেতে হবে। একজন হোক, দুজন হোক তাদের নিয়ে মাঠে থাকতে হবে।