অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
জাতিসংঘ মহাসচিব অন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমার বাহিনীর হত্যা নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দেখতে বাংলাদেশে এসেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফরকে বাংলাদেশ সরকার ঐতিহাসিক সফর হিসেবে উল্লেখ করেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এরপর তিনি কক্সবাজার গেছেন স্বচক্ষে রোহিঙ্গাদের দুঃখ কষ্ট দেখার জন্য। সেখানে গিয়ে তিনি রোহিঙ্গাদের কথা শুনেছেন। শুনেছেন মিয়ানমার বাহিনীর হত্যা নির্যাতনের কাহিনী। সব কিছু শুনে তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে আমার হৃদয়-মন ভেঙ্গে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর ইতিমধ্যে রাজনীতিক বিশ্লেষকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করেছেন। তার এ সফরের ফলাফল কী? রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে তার এ সফর কী আদৌ কোনো ভুমিকা রাখবে? এমন সব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে।
তবে, বিশেষজ্ঞরা এটাও বলছেন যে জাতিসংঘ মহাসচিবের এ সফর রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কোনো ভুমিকা রাখবে না। কারণ, জাতিসংঘ প্রকাশ্যে রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বললেও মিয়ানমারের নেত্রী সুচি ও তার বাহিনীর সকল কার্যক্রমে গোপনে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ মিয়ানমারের সঙ্গে একটি গোপন চুক্তিও করেছে, যেটাতে রোহিঙ্গাদের নাগরিত্ব ফিরিয়ে পাওয়ার কোনো নিশ্চিয়তা নেই। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্স তাদের এই গোপন চুক্তি ফাঁস করে দিলে এনিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠে। এর আগেও মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সঙ্গে গোপন সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গাদের দুর্দশা, দুঃখ-কষ্ট দেখে মর্মাহত হলেও মিয়ানমারের নেত্রী সুচির বিরুদ্ধে তিনি কিছুই বলতে চান না। বিবিসির পক্ষ থেকে তাকে সুচির বিষয়ে প্রশ্ন করলেও তা এড়িয়ে গেছেন। এর মানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সুচির ওপর তিনি চাপ প্রয়োগ করতে চান না। আর হত্যা-নির্যাতনের জন্য সুচিকে তিনি জবাবদিহিতার মধ্যেও আনতে চান না।
অন্যান্যদের মতো তিনিও রোহিঙ্গাদের পক্ষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আর তিনি বলেছেন, আমি বিচারক নই। তাহলেতো স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, অসহায় রোহিঙ্গা আর জাতিসংঘের মধ্যে পার্থক্য কী? মিয়ানমারের কাছেতো জাতিসংঘ অসহায়। তাহলেতো তারাও এক প্রকার রোহিঙ্গা। এখন অনেকেই বলছেন, এক রোহিঙ্গা আরেক রোহিঙ্গাকে দেখতে এসেছেন।