অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গতকাল রোববার রাতভর পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলে। মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে কে বা কারা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এসময় সেখানে কয়েকটি গাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
গভীর রাতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ঘটনাস্থলে গিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের আলোচনায় বসার বার্তা দেন। নানকের যাওয়ার কিছু সময় আগেই ভিসির বাড়িতে আগুন ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
আন্দোলনকারীরা বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) বাসভবনে যাঁরা ভাঙচুর করেছেন, তাঁরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কেউ নন। অন্য কেউ এর সঙ্গে যুক্ত। সিসি ক্যামেরার ছবি দেখে তাঁদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা এই ঘটনার নিন্দাও জানিয়েছেন।
আজ সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা এ কথা বলেন।
সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনে হামলাকারীরা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নন। তাঁদের আমরা চিনি না।’ তাঁর দাবি, একজনকে বাসভবনের বিভিন্ন স্থানে আগুন দিতে দেখা গেছে। যেহেতু উপাচার্যের বাসভবনে সিসি ক্যামেরা আছে, তাই সেখান থেকে ফুটেজ নিয়ে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া উচিত।
রাত আনুমানিক ১ টার দিকে ঢাবি ভিসির বাসভবনে আগুন দেয়া হয়েছে। কয়েকটি টিভি চ্যানেলের লাইভে দেখা গেছে ভিসির বাসভবনের সামনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং বাসার ভিতরে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়েছে। তখন ভিসির বাড়ির সামনে আন্দোলনকারী কিছু শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মারধর করতে দেখা গেছে।
এমন অবস্থায় ঢাবি ভিসির বাসায় কারা আগুন লাগিয়েছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। সন্দেহের তীর যাচ্ছে ছাত্রলীগের দিকে। মধ্যরাতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দপায় দপায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে আগুন দেয়া ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার একটু পরই জাহাঙ্গীর কবির নানক ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। নানকের আগমনের আগে একটি পরিবেশ তৈরি ও আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বক্তব্যের ক্ষেত্রে তৈরি করতেই ছাত্রলীগকে দিয়ে এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
আন্দোলনকারীদের অনেকে বলছেন, আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের নগ্ন হামলাকে বৈধতা দিতেই পরিকল্পিতভাবে ভিসির বাড়িতে আগুন ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ছাত্রলীগই ভিসির বাসায় আগুন দিয়েছে। আগুন লাগানোর সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা সেখানেই অবস্থান করছিলেন।
এছাড়া হামলাকারীদের যাতে চিহ্নিত করা না যায় সেজন্য সেখানকার সিসি ক্যামেরাগুলোও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধন আছে বলে প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। সেই প্রপাগাণ্ডাকে জোরালো করতেও ভিসির বাসায় এমন হামলা হতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।
সেই প্রোপাগাণ্ডার প্রমান মিললো জাহাঙ্গীর কবির নানকের বক্তব্যেও। সোমবার বিকেলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে নানক বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পেছনে অশুভ শক্তির হাত আছে। এর মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করে নানক বলেন, ‘আমরাও ছাত্র আন্দোলন করেছি। যৌক্তিক দাবিতে, নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। কিন্তু গতকাল কোটা সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলন হলো সেটা কোন ধরনের?’‘গান পাউডার দিয়ে বিভিন্ন জিনিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ভিসির বাসভবনে হামলা হয়েছে।
গভীর রাতে রাস্তার সব বাতি বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রীদের উপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এসময় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয় এবং অনেকেই বিভিন্নস্থানে আটকা পড়ে। এমন অন্ধকারেই ভিসির বাসভবনে আগুন দেয়া ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটানো হয়।
এদিকে বাসভবনে আগুন ও ভাংচুর বিষয়ে স্বয়ং ভিসির বক্তব্যও প্রমাণ করে এই ঘটনা আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। তিনি বলেছেন সরকার পতনের জন্যই সেখানে হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, লাশের রাজনীতি করার জন্য বিডিআর বিদ্রোহের মত এই হামলা চালানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রাতভর দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলে। টিয়ার শেল, জলকামান ও লাঠিপেটা করে পুলিশ বারবার আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে আবারও তাঁরা জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় শাহবাগ থানার সামনে থেকে টিএসসি পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে মিলে আন্দোলনকারীদের উপর দফায় দফায় হামলা চালায়। আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় টিকতে না পেরে আন্দোলনকারীদের উপর দোষ চাপাতে ছাত্রলীগ ভিসির বাড়িতে আগুন ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে বলেই মনে করেন আন্দোলনকারীরা।