অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের লিভ টু আপিল গ্রহণ করেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে আগামী ৮ মে পর্যন্ত হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেছেন আদালত।
সোমবার (১৯ মার্চ) সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনসহ অন্য আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
এদিকে আদালতের এমন সিদ্ধান্তের পর এক সংবাদসম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে সরকার বাধা দিচ্ছে। এর আগেও এক বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেছেন, আদালতের রায়ে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটছে।
উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীরা তাদের বক্তব্যে অব্যাহতভাবেই বলে আসছে যে খালেদা জিয়া জামিন পেলেও মুক্তি পাবেন না। এছাড়া খালেদাকে ছাড়া নির্বাচনে যেতে বিএনপির সমস্যা কোথায় এমন বক্তব্যও তারা দিয়ে আসছেন।
সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে আপিল বিভাগের চার বিচারপতি এজলাসে প্রবেশ করেন। এরপর অন্য এক মামলার শুনানি শেষে কার্যতালিকার (কজলিস্ট) ২ ও ৩ নম্বরে থাকা এ মামলার আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
আদেশের শুরুতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমরা (আপিল বিভাগের চার বিচারপতি) সর্বসম্মতিক্রমে এ আদেশ দিচ্ছি।’
এরপর আদালত খালেদা জিয়াকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ ২২ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন এবং রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের লিভ টু আপিল গ্রহণ করে আপিল শুনানির জন্য মামলার সারসংক্ষেপ (নথিপত্র) চার সপ্তাহের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মামলার সারসংক্ষেপ জমার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি চার সপ্তাহ পরে আপিলটি শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ থাকবে বলে জানান আদালত।
আদেশের পর আপিল বিভাগ তার নিয়মিত কার্যক্রম অনুসারে অন্য মামালার শুনানি শুরু করেন। এর কিছুক্ষণ পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, ‘মাই লর্ড, আমি দুঃখিত। আপনি কী আদেশ দিয়েছেন সেটা বুঝতে পারিনি।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা সর্বসম্মত হয়ে এ আদেশ দিয়েছি।’ জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘‘আমি ‘সর্বসম্মত’ এটা জানতে চাইনি। কোন যুক্তিতে লিভ (লিভ টু আপিল) গ্রহণ করেছেন, সেটা জানতে চাই।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা নথি পর্যালোচনা করেছি।’ তখন জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা তো মেরিটে (মামলার মূল বিষয়বস্তুতে শুনানি করিনি) বলিনি।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপিলে বলতে পারবেন।’
এরপর জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আপনারা সর্বোচ্চ আদালত। আপনারা যে আদেশ দেবেন শিরোধার্য। তবে ২২ মে অনেক দূর। আজকে যেভাবে লিভ (লিভ টু আপিল) গ্রহণ করলেন, এটা নজিরবিহীন। অতীতে এ জাতীয় ক্ষেত্রে কোনও দিন লিভ (লিভ টু আপিল) গ্রহণ করা হয়নি। তাহলে তো সবই (অতীতের সব মামলায়) লিভ (লিভ টু আপিল) গ্রহণ করা উচিত ছিল।’ তখন প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ অফিসারকে ডেকে চার সপ্তাহের জায়গায় দুই সপ্তাহ করে দিতে নির্দেশ দেন।
এ পর্যায়ে জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, ‘ঠিক আছে, আপনি দুই সপ্তাহ করলেন। ২২ মে তারিখের ওই সময়টা এগিয়ে আনার অনুরোধ করছি।’ এ সময় ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আদালতে বলেন, ‘সরকার যে উদ্দেশ্যে এটা করেছে….। দুদক আর সরকার তো একাকার হয়ে গেছে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়।’ এরপর জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সময়টা কমিয়ে দেন। এপ্রিলে করে দেন।’ তখন বিচারপতি ইমান আলী বলেন, ‘তখন তো ভ্যাকেশন (সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি)।’ তখন মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘ভ্যাকেশনের আগে দেন।’ বিচারপতি ইমান আলী তখন বলেন, ‘আফটার ভ্যাকেশন।’ জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আফটার ভ্যাকেশন হলে, দিন নির্ধারণ না করলে তো একই থাকলো?’ তখন প্রধান বিচারপতি ৮ মে পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত রাখার পাশাপাশি ওইদিন আপিল শুনানির দিন নির্ধারণ করেন।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পেয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের পর গত ১৩ মার্চ তাকে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন হাইকোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন আপিল করে। চেম্বার জজ তা খারিজ করে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখে শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠান। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনানি ১৮ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত রেখে উভয় পক্ষকে লিভ টু আপিল করার নির্দেশ দেন। তথ্যসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন ও যুগান্তর।