অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপ নির্বাচনে বিএনপি এখনো চূড়ান্তভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেনি। সোমবার খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ২০ দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় প্রার্থী বিএনপি এককভাবে দিবে না, জোটের পক্ষ থেকেই প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।
এমন অবস্থায় জোটের প্রার্থী কে হতে পারেন সেটা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা গুঞ্জণ। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালের নাম শুনা গেলেও নানা কারণে তার ব্যপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট।
একটি সূত্র জানায়, রাজনৈতিক অঙ্গনের লোক না হওয়া, বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে রাজধানী কিংবা কোথাও কোনো অবদান না থাকা, সম্প্রতি প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারিতে পিতাপুত্রের নাম আসা ও গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নিজেকে ভালোভাবে তুলে ধরতে না পারায় জোটের পক্ষ থেকে তাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা নাও করা হতে পারে।
সূত্র আরও জানায়, দলের একটি অংশ সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে তার নাম প্রচার করলেও বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি তিনি। এমনকি তাবিথ আউয়ালের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েও কোনো তৎপরতা নেই। ২০১৫ সালে নির্বাচনের পর মাঠ পর্যায়ে তাকে সক্রিয় দেখা যায়নি। এজন্য প্রার্থীতা নিয়ে দ্বিধায় আছেন বেগম খালেদা জিয়া নিজেও।
এমন অবস্থায় জামায়াতের মনোনিত প্রার্থী সেলিম উদ্দিনকেই জোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার সম্ভাবনা বাড়ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আরো যোগ্য প্রার্থী থাকার পরও জামায়াত প্রার্থীকে বাছাই করার সম্ভাবনাকে অনেকেই উড়িয়ে দিলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে কিছু হিসাব নিকাশের কারণেও জামায়াতকে হয়তো এক্ষেত্রে ছাড় দিতে পারে বিএনপি।
জানা যায়, বিএনপির সাথে জামায়াতের খুব ভালো অবস্থা যাচ্ছে না বেশ কিছুদিন ধরেই। কারো পক্ষ থেকে জোট থেকে বের হয়ে যাবার চেষ্টা দেখা না গেলেও জোটে থাকা না থাকা নিয়ে জামায়াতকে অনেকটা ডেমকেয়ারই মনে হয়েছে। অনেকটা এরকম যে জোটে না থাকলেও জামায়াতের কিছু যায় আসে না। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনে জয় লাভ , আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা কিংবা আন্দোলনের স্বার্থেই জামায়াতকে খুব ভালোভাবেই পাশে চায় বিএনপি। যেহেতু এই নির্বাচন বিএনপির জন্য অনেকটা অস্তিত্বের প্রশ্ন। এজন্যও ডিএনসিসিতে জামায়াতকে ছাড় দিতে পারে বিএনপি।
যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে রাজধানী ঢাকা ব্যপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটা অনস্বীকার্য যে, বিগত আন্দোলনগুলোতে রাজধানীতে বলা যায় বিএনপির চাইতেও ভালো ভূমিকা রেখেছে জামায়াত। জামায়াতের মূল নেতৃত্ব কারাগারে বন্দি থাকায় এক্ষেত্রে সেলিম উদ্দিনরাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে।
এছাড়া সাবেক শিবির সভাপতি হওয়ায় ছাত্রাবস্থায়ও সেলিম উদ্দিন আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সবমিলিয়ে পুরুদস্তুর একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হলেন সেলিম উদ্দিন। বর্তমানে তিনি জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
জামায়াতের একটি সূত্র অ্যানালাইসিস বিডিকে জানায়, ঢাকা উত্তর সিটিতে তাদের প্রায় ৫ লক্ষাধিক দলীয় ভোটার রয়েছে। তাছাড়া দলটির নেতাকর্মীদের উপর আওয়ামী লীগ সরকারের অতিমাত্রায় জুলুম নির্যাতন এবং বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলে দলটির দুইজন নেতার মন্ত্রণালয় দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের একটা বিশাল অংশও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। এ অবস্থায় বিএনপি যদি ছাড় দেয় তাহলে সেলিম উদ্দিনের জয়লাভ করা কঠিন হবে না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন নির্বাচনি জরিপেও জামায়াতের প্রার্থী সেলিম উদ্দিনের পক্ষে ভালো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে পুরো উল্টো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে তাবিথ আউয়ালের পক্ষে। সবাই জোটের পক্ষ থেকে এমন একজন প্রার্থীকেই আশা করছেন যিনি হবেন সৎ, যোগ্য, পুরোদস্তুর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও নতুন মুখ।
তবে আগামী ১৩ জানুয়ারিই সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটবে। কারণ ওই দিন জোটের পক্ষ থেকে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব ও জোটের সমন্বয়ক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে জোটের প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা না করা হলেও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সাবেক বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকও ছিলেন সাবেক বিজিএমইএ সভাপতি। তাঁর যায়গায় তাঁরই মত একজন ক্লীন ইমেজের প্রার্থীকে খুঁজবে আওয়ামী লীগ সেটাও স্বাভাবিক। সে হিসেবে আতিকুলই আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া আতিকুল দাবিও করেছেন তাঁকে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে।