সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের কক্ষে সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের গড়ে তোলা ‘টর্চার সেলে’ তালা দিয়েছে পৌর আওয়ামী লীগ। রবিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মানিক মোল্লার নেতৃত্বে এই তালা দেওয়া হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে মানিক মোল্লা বলেন, ‘সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র সংসদের কক্ষ অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দখল করে রেখেছিল। এছাড়া তারা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওই কক্ষে নিয়ে আটকে রেখে টর্চার করতো। ছাত্রীদের ইভটিজিং ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করে দিয়ে কলেজের ভেতরে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতো। সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমানের কাছে একাধিকবার কলেজের শিক্ষক ও বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। তার অনুরোধে রবিবার সকালে সাভার পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রাশেদ খান মেনন, সহ-প্রচার সম্পাদক আব্দুল মজিদসহ পৌর আওয়ামী লীগের অর্ধশত নেতাকর্মী নিয়ে আমি ওই কক্ষটিতে তালা দিয়েছি।’
কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বলেন, সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ভেতরে ছাত্র সংসদের জন্য একটি কক্ষ বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। দীর্ঘ দিন যাবৎ ওই কক্ষটি অবৈধভাবে দখল করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ব্যবহার করতো। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ওই কক্ষের ভেতরে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। মিছিলে বা ছাত্রলীগের কোনও কর্মসূচিতে কোনও ছাত্র না গেলে তাদের ধরে নিয়ে এসে ওই কক্ষে মারধর করা হতো। বিভিন্ন সময় তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হতো। ওই কক্ষে কলেজের মেয়েদের ডেকে নিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করা হয়েছে। এ কারণে কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষরাও ছাত্রলীগের ব্যবহৃত অফিস কক্ষটি ‘টর্চার সেল’ হিসেবেই জানতো।
ভাইস প্রিন্সিপাল হেনা আফরোজ বলেন, ‘সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘ দিন ধরে ছাত্র সংসদের কক্ষটি অবৈধভাবে ব্যবহার করে সেখানে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতো। কলেজের শিক্ষার্থীদের জোর করে মিছিলে নিয়ে যাওয়া হতো। কোনও শিক্ষার্থী মিছিলে যেতে না চাইলে ওই টর্চার সেলে নিয়ে মারধর করা হতো। এছাড়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজের ভেতরে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মেয়েদের ইভটিজিংও করে আসছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গত ২১ নভেম্বর অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা চলাকালীন সভাপতি অমিত দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক তাজুল ছাত্রলীগের প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মী নিয়ে এসে এক শিক্ষার্থীর হাতে নকল তুলে দেয়। এ কারণে তিনি বিষয়টি পৌর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জানান।’
সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহম্মেদ তাজুল বলেন, ‘আমরা কলেজের ছাত্র সংসদের কক্ষটি ব্যবহার করে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতাম। তবে কলেজের কোনও শিক্ষার্থীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হতো না। স্বেচ্ছায় তারা ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নিতো। ছাত্রলীগের মিছিলে কোনও শিক্ষার্থী যেতে না চাইলে তাকে ওই কক্ষে নিয়ে মারধর ও নির্যাতন চালানো হতো না। কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা সব সময় ভালো আচরণ করতাম। এরপরও পৌর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেন আমাদের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন, তা আমরা বুঝতে পারছি না।’
ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। তবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যদি এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post