অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
জনপ্রিয় ইসলামি সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরব শিল্পীগোষ্ঠীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রখ্যাত শিল্পী মরহুম আইনুদ্দীন আল আজাদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনটি সম্প্রতি একজন সিনিয়র শিল্পীকে বহিষ্কারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ভাঙনের পর তাদের দুই গ্রুপই পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণা করেছে।
জানা যায়, গত ৫ এপ্রিল কলরবের তৎকালিন কমিটির এক বৈঠকের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সংগঠনটির সিনিয়র শিল্পী ও যুগ্ম সহকারী পরিচালক আবু সুফিয়ানকে কলরব থেকে বহিষ্কার করা হয়। আবু সুফিয়ান জন্মলগ্ন থেকেই সংগঠনটির সাথে কাজ করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে কলরবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচারের অভিযোগ আনা হয়। তবে আবু সুফিয়ান তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন।
আবু সুফিয়ানের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত সংগঠনটির অধিকাংশ শিল্পীই মেনে নিতে পারেনি। পরবর্তীতে আবু সুফিয়ান ও তার সমর্থিত শিল্পীরা সংগঠিত হয়ে নিজেদেরকে সত্যিকারের কলরব শিল্পীগোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা করে। ঘোষণার পর তারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে কলরব শিল্পীগোষ্ঠী’র রেজিস্ট্রেশনও করিয়ে নেয়। যার রেজিষ্ট্রেশন নং-০৯-৭২৫৩। রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করায় এখন আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বের কলরবকেই আসল কলরব হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে পূর্বের কমিটির কলরব অর্থাৎ যেই কমিটি আবু সুফিয়ানকে বহিষ্কার করেছিলো সেই কমিটি ২০১৭-১৯ সেশনের জন্য নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করে, যা ৫ আগস্ট কিছু পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই কমিটির কর্মকর্তারা হলেন প্রধান পরিচালক রশিদ আহমাদ ফেরদৌস, পরিচালক শাহ ইফতেখার তারিক, যুগ্মপরিচালক ইমতিয়াজ মাসরুর, নির্বাহী পরিচালক সাঈদ আহমাদ এবং যুগ্মনির্বাহী পরিচালক মুহাম্মাদ বদরুজ্জামান।
এই কমিটি ঘোষণার তিনদিন পর অর্থাৎ ৮ আগস্ট আবু সুফিয়ান কলরবের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আহমাদ ফেরদৌসের নেতৃত্বাধিন কমিটিকে বাতিল ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে রেজিষ্ট্রেশনকৃত সংগঠন কলরবের প্রধান পরিচালক আবু সুফিয়ান বলেন- ‘জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরব এর নতুন একটি ভুয়া কমিটি নিয়ে সংস্কৃতিপ্রেমীদের মধ্যে প্রোপাগান্ডা ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, যে কমিটির কোন ভিত্তি বা সংশ্লিষ্টতা কলরবের সাথে নেই। জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরব, যার রেজিঃনং ০৯–৭২৫৩ এর পক্ষে আমি আবু সুফিয়ান স্পষ্টভাবে ঘোষনা করছি যে, বিভিন্ন অনৈতিক আচরণ ও সংগঠনের বিশেষ বিশেষ নিয়ম ভঙ্গ, বিভিন্নভাবে অর্থ ও অনৈতিক কেলেংকারীর দায়ে এবং জাতীয়ভাবে এ সংগঠনটি চালাতে ব্যার্থ হওয়ায় যথাক্রমে – রশিদ আহমাদ ফেরদৌস, সাইদ আহমাদ, বদরুজ্জামান ও আবু রায়হানকে জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরব থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার এবং আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হলো এবং শীঘ্রই তাদের বিষয়ে আইনী ব্যাবস্থা নেয়া হবে সরকারের সহযোগিতায়।’
সংবাদ সম্মেলনে আবু সুফিয়ান আগামী তিন বছরের জন্য (২০১৭-২০২০) সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। নতুন কমিটির নেতারা হলেন- চেয়ারম্যান মাওলানা সালাউদ্দিন জাহাঙ্গীর, প্রধান পরিচালক আবু সুফিয়ান, নির্বাহী পরিচালক মো: আনোয়ার শাহ, সঙ্গীত পরিচালক শাহজাহান সিরাজ, সহকারী পরিচালক এনামুল হক, রেজাউল করিম ও রিয়াজুল ইসলাম , শিশু কিশোর পরিচালক মাসুম বিল্লা ইলিয়াস প্রমুখ।
জানা যায়, কলরব শিল্পীগোষ্ঠী জন্মলগ্ন থেকেই একটি স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছিলো। শিল্পিগোষ্ঠীটির শিল্পিীরা চরমোনাই পীরের সমর্থক হওয়ায় পীর সাহেবের দল ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ যখন থেকে রাজনৈতিক প্লাটফর্মে তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করে তখন থেকেই তারা সংগঠনটিকে তাদের প্লাটফর্মে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে থাকে। এ কারনে কলরবের শিল্পীদের মধ্যে বেশি কিছুদিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলে আসছিলো। কলরবের ভাঙনের জন্য এটিও একটি প্রধান কারন বলে জানা যায়। জানা গেছে বর্তমানের রেজিষ্ট্রেশন বিহীন অর্থাৎ রশিদ আহমাদ ফেরদৌস, সাঈদ আহমাদদের নেতৃত্বাধিন কলরবের অংশটির পক্ষে আছে চরমোনাই পীরের দল।
আরো জানা যায়, কলরবের ইউটিউব চ্যানেলে তাদের বিভিন্ন ইসলামি গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ভিডিওর ভিউ থেকে গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে যেই আয় হচ্ছিলো সেটার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে এবং কলরবের বিভিন্ন শিল্পীদের মধ্যে মেয়েলি ব্যপার নিয়েও কিছু সমস্যা ও দ্বন্দ্ব চলে আসছিলো বেশ কিছুদিন ধরে। এসব সমস্যাও সংগঠনটির বিভক্তির কারন। এমন অবস্থায় এই জনপ্রিয় শিল্পীগোষ্ঠীটির ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
Save
Discussion about this post