কমপিউটার হ্যাকাররা ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নেয়ার পর এই ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অন্ধকারে রেখে সমস্যাটি অভ্যন্তরিকভাবে সমাধানের জন্য ভারতীয় নাগরিক রাকেশ আসতানা’র মালিকানাধিন প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ার্ল্ড ইনফরমিক্স সাইবার সিকিউরিটি’কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। তদন্তকারীরা সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন।
ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)’র কর্মকর্তারা জানান যে, ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মামলা দায়েরের মাত্র একদিন আগে এ বিষয়ে তাদেরকে অবহিত করা হয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা পুরো পরিস্থিতি তুলে ধরে অবিলম্বে মামলা দায়েরের জন্য অনুরোধ জানান।
সিআইডি’র মুখপাত্র মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় রাকেশ আসতানাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সন্দেহভাজন।
সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান যে, ২০১৬ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়লে বাংলাদেশ ব্যাংকের একদল কর্মকর্তা রাকেশ আসতানাকে নিয়ে আগারগাওয়ে তাদের অফিসে আসেন।
ওই কর্মকর্তা জানান যে, চুরির ঘটনা ঘটার প্রায় এক মাসের মধ্যে সংবাদ মাধ্যমে তা প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত ‘বাংলাদেশ সাইবার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম’ (বিসিআইআরটি)’র কারো কাছে সাহায্যের জন্য অনুরোধ জানানো হয়নি।
আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান যে, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তারা একটি ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করার পরও তাদেরকে চুরির বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
সিআইডি’র একজন তদন্তকারী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকল্পে রাকেশ আসতানার যোগদানের কথা ছিলো ২০১৬ সালের এপ্রিলে। কিন্তু তাকে জরুরিভিত্তিতে ডেকে আনা হয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অন্ধকারে তাকে সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দেয়া হয়।
কর্মকর্তা জানান, সরকারের কোন আইটি টিম সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হলে পুলিশ তৎক্ষণাত ইন্টারপোল বা যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই’র সহায়তা চাইতে পারতো। প্রতিষ্ঠান দুটি অবশ্য পরবর্তীতে সহায়তা দিয়েছে।
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা জুবায়ের বিন হুদা ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় একটি মামলা করেন। ২০১৬ সালের ৪-৫ ফেব্রুয়ারি নয় ঘন্টা সময়ের মধ্যে হ্যাকাররা নিউ ইয়র্কে ফেডারেল রির্জাভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০১ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয়। ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকি কর্পোরেশন ও শ্রীলংকার প্যান-এশিয়া ব্যাংকিং কর্পোরেশনের মাধ্যমে এই রিজার্ভ সরিয়ে নেয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান যে, শ্রীলংকায় সরিয়ে নেয়া ২০ মিলিয়ন ডলার পরে উদ্ধার করা গেলেও ফিলিপাইনে সরিয়ে নেয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা যায়নি।
সিআইডি’র এক কর্মকর্তা জানান যে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ১৩টি সার্ভার ও প্রায় দুই ডজন পরিত্যাক্ত কমপিউটার রাখা দেখতে পান। পরিত্যক্ত কমপিউটারগুলো ভাইরাসে আক্রান্ত।
বাংলাদেশ ব্যাংক, সিআইডি ও আইসিটি বিভাগের একটি তদন্ত দল ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যায় এবং রাকেস আসতানার সঙ্গে কথা বলে। তখন আসতানা রিজার্ভ চুরির জন্য ব্যাংকের দুর্বল সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দায়ী করেন।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, তারা তদন্ত শুরুর আগ পর্যন্ত রাকেস ওই সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করেন এবং যেসব কর্মকর্তা এই অবহেলার জন্য দায়ী ছিলেন তাদের কাউকেই ডিউটি থেকে বিরত রাখা হয়নি।
তদন্তকারীরা গিয়ে দেখতে পান যে সব ধরনের ইলেক্ট্রনিক প্রমাণ মুছে ফেলা হয়েছে। এগুলো কে করেছে তদন্তকারিরা তা নিশ্চিত হতে পারেননি। কারণ, তদন্তকারীরা অপরাধ ক্ষেত্রে প্রবেশের আগে রাকেশ সেগুলো নিয়ে কাজ করেছে। তবে প্রমাণ উদ্ধার করা যেন সম্ভব হয় তা নিয়ে এখনো কাজ চলছে বলে জানা যায়।
সিআইডি’র মুখপাত্র মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় শুধু রাকেশ আসতানা নয়, সংশ্লিষ্ট সবাই সন্দেহভাজন।
ইতোপূর্বে রয়টার্সের এক রিপোর্টে বলা হয় যে তদন্তকারিরা দায়িত্বে অবহেলা ও অসতর্কতার জন্য কেন্দ্রিয় ব্যাংকের পাঁচজন কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করেছেন।
তবে, সরকার ওই তদন্ত রিপোর্ট এখনো জনসম্মুখে প্রকাশ করেনি।
সূত্র: নিউএজ (ভাষান্তর: সাউথ এশিয়ান মনিটর)রি
Discussion about this post