অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মহাসড়কে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ঈদে ঘরমুখো মানুষ। ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগ থেকেই মহাসড়কে যানজটের শুরু হয়। ১ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ১০-১৫ ঘণ্টা। রোজা রেখে মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
প্রথম দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ যানজট সীমাবদ্ধ ছিল। গত এক সপ্তাহ যাবত এমন কোনো দিন নেই যে, এ দুই মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়নি। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ৬০ কি.মি. পর্যন্ত যানজট লেগেছে। এই দুই মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট আজও অব্যাহত আছে। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ মহাসড়কে আবদুল্লাপুর পার হয়ে টঙ্গী থেকে গাজীপুরের ভোগড়া পর্যন্ত যানবাহন চলছে একেবারে ধীরগতিতে। মহাসড়কে যানজটের কারণে বেশির ভাগ বাসই সময়মতো আসছে না। রাজধানীর গাবতলীসহ বিভিন্ন কাউন্টারে ঈদে ঘরমুখো মানুষ বসে বসে বাসের অপেক্ষা করছেন।
এরপর এই যানজট সৃষ্টি হতে থাকে ঢাকা-আরিচা-আমিনবাজার ও নবীনগর মহাসড়কে। সকালে গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো প্রথমেই যানজটে আটকে যায় এ সড়কে। অন্যান্য দিনের মতো আজও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নবীনগর পর্যন্ত যানবাহন চলেছে একেবারেই ধীরগতিতে।
এদিকে, গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক পরিদর্শনে গিয়ে নিজের চোখে ঈদে ঘরমুখো মানুষের চরম ভোগান্তি দেখেছেন। ওই সময় যানজট নিরসনে দেশের সকল মহাসড়কে দলের তরুণ নেতাকর্মীদেরকে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওবায়দুল কাদেরের এই নির্দেশের পর দেশের কোনো মহাসড়কে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে যানজট নিরসনে কাজ করতে দেখা যায়নি। বরং অভিযোগ রয়েছে, ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৫০ স্থান দখল করে বাসস্ট্যান্ড, টেম্পুস্টেন্ড, গ্যারেজ ও দোকানপাট নির্মাণ করেছে। মহাসড়ক দখলের প্রভাব পড়েছে ঈদ যাত্রায়। তীব্র যানজটে ভোগান্তির শিকা হচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ। মহাসড়ক অবৈধ দখলের কারণে যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। ঘটছে দুর্ঘটনাও। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় দখল বাণিজ্য চললেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা প্রশাসন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, যারা এগুলো করছে তারা সবাই সরকারি দলের।
অপরদিকে, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে এই যানজট ততই অন্যান্য মহাসড়কগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া অংশের ১৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিন ও রাতভর থেমে থেমে যানজট থাকলেও শুক্রবার সকাল থেকে তা তীব্র আকার ধারণ করে। গজারিয়া অংশের প্রায় পুরোটা জুড়েই মহাসড়কের উভয় পাশে যানজট রয়েছে। সময়ের সাথে সাথে যানজটের তীব্রতা আরও বাড়ছে। দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন ঘরমুখো যাত্রীরা।
এরপর যানজট সৃষ্টি হয়েছে মাওয়া সড়কেও। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটার পথ যানজটের কবলে পড়েছে। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার পদ্মার শিমুলিয়া ঘাটে পার হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে শত শত গাড়ি।
জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে যাওয়ার সবগুলো মহাসড়কেই এখন গাড়ির দীর্ঘ লাইন। চরম ভোগান্তিতে নাকাল ঈদে ঘরমুখো মানুষ। কিন্তু, এরপরও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ বললেন ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা স্বস্তিদায়ক হচ্ছে।
শুক্রবার সায়বাদ টার্মিনালে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আজকে আমার ভালো লাগছে যে, ‘এই দৌড়াদৌড়ি করে মানুষের ভোগান্তি লাঘব করতে পেরেছি। আজকে কোথাও যানজট নেই।’
ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এনিয়ে ওবায়দুল কাদেরের কঠোর সমালোচনাও করছেন তারা। একদিকে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট, আর অন্যদিকে ওবায়দুল কাদের বলছেন ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক হচ্ছে। তার এ বক্তব্যকে বছরের সেরা কৌতুক বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে বলছেন, মন্ত্রীর এ বক্তব্য ভোগান্তির শিকার মানুষের সঙ্গে চরম উপহাস।
Discussion about this post