অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দলীয় বিবেচনায় বিশেষ কর্মকর্তা পদে ছাত্রলীগের ১২ নেতাকর্মীকে একচেটিয়া নিয়োগ দিয়ে আবারো আলোচনায় এসেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কট্টর আওয়ামীপন্থী ভিসি ড. মিজানুর রহমান। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হলেও তিনি দলীয় পরিচয় দিতেই বেশি পছন্দ করেন। তিনি একসময় আওয়ামী যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন। এর আগেও বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন ড. মিজান।
বিশেষ করে ২০১৬ সালের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের একজন কাউন্সিলর হতে পেরে নিজেকে খুব গর্বিত মনে করেছিলেন। কুমিল্লা থেকে কাউন্সিলর হয়ে তিনি কার্ডটা তার ফেসবুকে পোস্টও করেছিলেন। এনিয়ে তখন রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। অনেকে তখন ফেসবুক স্ট্যাটাসে শিক্ষকতা ছেড়ে তাকে রাজনীতি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
ড. মিজানুর রহমান এবার বললেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কারো চাকরি হবে না। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই তিনি দলীয় বিবেচনায় ছাত্রলীগের ১২ নেতাকর্মীকে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই বিশেষ কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এবং অন্যরা এই বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের শুধু নিয়োগ দিয়েই ক্ষ্যন্ত হননি ড. মিজানুর রহমান, ধাম্ভিকতার সঙ্গে বলেছেন, নিয়োগপ্রাপ্ত ওই ১২ জন কঠোর পরিশ্রমী নেতা-কর্মী ছিলেন। এর মধ্যে দুজন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা। এটাই তাঁদের সবচেয়ে বড় পরিচয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্র বা চাকরিপ্রার্থী বলতে কিছু নেই। এখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই চাকরি পাবেন। এটাই তাঁদের বিশেষ যোগ্যতা।
জানা গেছে, ২০১২ সাল থেকে এপর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ৩১ জন নেতা-কর্মী নিয়োগ পেয়েছে।
এদিকে, কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই দলীয় বিবেচনায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই পাইকারি হারে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়ার ঘটনা প্রকাশের পর এনিয়ে রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ, আইনজীবি, সাংবাদিক, বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন শ্রেনি-পেশার মানুষ প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করছে। রাজনৈতিক অঙ্গন ও শিক্ষাঙ্গনসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে বইছে সমালোচনার ঝড়।
অনেকেই বলছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কি ছাত্রলীগের পৈতৃক সম্পত্তি? এখানে দলমত নির্বিশেষে যোগ্যতা অনুযায়ী সবার চাকরি পাওয়ার অধিকার আছে। ভিসির পদটি দখল করে রাখতেই ড. মিজান ছাত্রলীগের অযোগ্যদেরকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই চাকরি দিয়েছেন। অনেকে আবার ড. মিজানুর রহমানকে সরকারের পদলেহনকারী দালালসহ বিভিন্ন অশালীন শব্দে গালাগালি করছে।
অপরদিকে, অনেকে আবার চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ের ভিসি ড. ইফতেখার উদ্দিনের বিষয়টিও সামনে টেনে আনছেন। সরকারের অতি দালালী ও ছাত্রলীগ বেশি আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার কারণে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর তাকে কড়া ভাষায় সতর্ক করেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় ওবায়দুল কাদের চবি ভিসিকে উদ্দেশ্যে করে বলেছিলেন, ছাত্রলীগ কি আপনাকে ভিসি বানিয়েছে? নাকি ছাত্রলীগ আপনাকে চেয়ারে রাখতে পারবে। আপনি কোন পক্ষ নেবেন না। আপনার এত পার্টিজান হওয়ার দরকার নেই তো। রাজনৈতিক দল কিংবা আদর্শের প্রতি আপনার সমর্থন থাকতে পারে। সেটা অন্যায় কিছু নয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে তো আপনাকে নন পার্টিজান হতে হবে।
কোনো নিয়ম-নীতি ছাড়াই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের চাকরি দেয়ায় এখন ওবায়দুল কাদের জবি ভিসি ড. মিজানকে সতর্ক করবেন কিনা এমন প্রশ্নও তোলেছেন কেউ কেউ।
Discussion about this post