অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
স্বীকৃতি নিয়ে বেশ কিছু দিন যাবত দ্বিধাবিভক্ত আন্দোলন করে আসছে কওমী মাদরাসার আলেম-ওলামাগন। এক গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ ও আরেক গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন হেফাজতে ইসলামের আমির ও চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফী।
২০১৩ সালের ৫ মে’র শাপলাচত্বরের ঘটনার পরই মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদের নেতৃত্বে তথাকথিত কিছু আলেমদের মাঠে নামিয়ে হেফাজতকে কোনঠাসা করার চেষ্টা করেছে সরকার। পরে আবার হেফাজত ও কওমী আলেমদেরকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার লক্ষ্যে স্বীকৃতির দাবিতে ফরিদ উদ্দিন মাসুদের নেতৃত্বাধীন গ্রুপটিকে মাঠে নামায় সরকার। আল্লামা শফীর নেতৃত্বাধীন গ্রুপটি বিরোধীতা করলেও শেষ পর্যায়ে এসে তারাও সরকারের টোপে পড়ে যায়। গত মঙ্গলবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেন হেফাজত নেতা আল্লামা আহমদ শফী। ওই বৈঠকেই কওমী মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে কোনো শর্ত ছাড়াই মাস্টার্সের মান প্রদানের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। আর প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এ স্বীকৃতি নিয়েও আরেক ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলেই কওমী মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে আরবী সাহিত্য ও ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ের মাস্টার্সের মান প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে একাধিকবার সংসদে কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতির পক্ষে দাবি তোলা হয়। আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীও বেশ কয়েকবার সংসদে এই নিয়ে কথা বলেছেন। তৎকালীন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ কওমী মাদরাসার স্বীকৃতির বিষয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুককে অনুরোধ করেন। জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, ইসলামী ঐক্যজোটের তৎকালীন চেয়ারম্যান শায়খুল হাদীস আল্লামা আজীজুল হক ও মুফতি ফজলুল হক আমিনীরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
এরপর ২০০৬ সালে কওমী মাদরাসাকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বছরের ২৯ আগস্ট এবিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করে সরকার। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ২৯ আগস্ট ২০০৬ তারিখের শখা:১৬/বিবিধ-১১(৯)/২০০৩(অংশ)-৮৮৭ সংখ্যক প্রজ্ঞাপন মাধ্যমে কেবলমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আরবী সাহিত্য ও এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে শিক্ষকতা, কাজীর দায়িত্ব/মসজিদে ইমামতির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে-দেশের কওমী মাদরাসার দাওরা ডিগ্রী এমএ (ইসলামিক স্টাডিজ/আরবী সাহিত্য) ডিগ্রীর সমমানের হিসেবে বিবেচিত হবে মর্মে নীতিগত সিদ্ধান্ত জ্ঞাপন করা হয়। পরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল থাকায় জোট সরকার এটা আর বাস্তবায়ন করে যেতে পারেনি।
এখন নতুন করে কওমীকে মাদরাসাকে শেখ হাসিনার স্বীকৃতি প্রদানের ঘোষণার পর এনিয়ে সারাদেশে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে ব্যাপক আলোচনা।
অধ্যাপক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান তার ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, “যে স্বীকৃতি ২০০৬ সালে দেয়া হয়েছে তা আবারো ২০১৭ সালে দেয়া হচ্ছে- ‘ধর্ম নিয়ে রাজনীতি’।”
রাজনীতিক বিশ্লেষক ও শিক্ষাবিদরা বলছেন, বর্তমান সরকারের দায়িত্ব হল আগের সরকারের দেয়া স্বীকৃতিকে বাস্তবায়ন করা। যে বিষয়ে একবার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এটাকে আবার নতুন করে স্বীকৃতি দেয়ার কিছু নেই। তাদের মতে, এ স্বীকৃতির মাধ্যমে একদিকে সরকার কৃতিত্ব নিল আর অপরদিকে হেফাজত ও কওমী আলেমদেরকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করলো।
জানা গেছে, শেখ হাসিনার দেয়া এ স্বীকৃতি নিয়ে কওমী আলেমদের একটি বড় অংশও প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছে। তবে, তারা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারছেন না। তাদের বক্তব্য হল, কিছু দাবি-দাওয়া মেনে সরকার হীন স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। আল্লামা শফীও না বুঝে সরকারের ফাঁদে পা দিয়েছে। এক সময় ভুল বুঝতে পারবেন তিনি।
Discussion about this post