ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশের সাথে বিদ্যমান সামরিক সহযোগিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতেই প্রতিরক্ষা চুক্তি করা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে উচ্চতর আস্থার সম্পর্কের কারণে চুক্তির জন্য এই সময়টাকে বেছে নেয়া হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর এ কথা জানান।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের ওপর এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এতে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতে হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা উপস্থিত ছিলেন।
জয়শঙ্কর বলেন, মাঠ পর্যায়ে বাংলাদেশের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতা রয়েছে। আমাদের সেনা প্রধান সবেমাত্র বাংলাদেশ সফর করে এসেছেন। ভারতের কোনো প্রতিরক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি প্রথমবারের মত বাংলাদেশ সফরে গিয়েছেন। গত দুই বছরে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভারতে এসেছেন। কিন্তু কোনো কারণে এই সহযোগিতাকে রুপরেখার আওতায় এনে প্রাতিষ্ঠানিক করা হয়নি। অথচ প্রতিবেশী সব রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমান, আফগানিস্তান, এমনকি চীনের সাথেও ভারতের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার রুপরেখা চুক্তি রয়েছে। তাই বাংলাদেশের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তিটি ছিল সময়ের ব্যাপার। এখন দুই দেশের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক অনেক উচ্চতর অবস্থানে রয়েছে। বিগত কয়েক বছরে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সবকিছুই ইতিবাচক দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাই এই সময়টিই প্রতিরক্ষা সহযোগিতারকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়ার ভালো সুযোগ হিসাবে বেছে নেয়া হয়েছে।
প্রতিরক্ষা খাতে দেয়া ৫০ কোটি ডলারের সহায়তার আওতায় ভারত কোন ধরনের সমরাস্ত্র সরবরাহ করবে- জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এখনো এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পছন্দকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
বাংলাদেশকে দেয়া ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার আওতায় কি ধরনের প্রকল্প নেয়া হবে- জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মংলা ও পায়রা বন্দর, রেল, সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়নে এই ঋণের আওতায় মোট ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, বাংলাদেশকে যে ঋণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে তাতে অবশ্যই ভারতের স্বার্থ রক্ষা করা হবে।
বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে শীর্ষ পর্যায়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুই দেশের মধ্যে বৈধভাবে চলাচলকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ জন্য ভারতীয় ভিসা ব্যবস্থাকে সহজতর করা হয়েছে।
একই প্রশ্নের জবাবে শ্রিংলা বলেন, ভারতীয় ভিসার ক্ষেত্রে ই-টোকেন ঠিকভাবে কাজ করছিল না। এজন্য বিমান, রেল বা বাসের টিকেট নিয়ে এলে আমরা ওয়াক-ইন ভিত্তিতে ভিসার আবেদন জমা দেয়ার সুযোগ দিয়েছি।
তিস্তা চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আস্থার কারণ কি- জানতে চাওয়া হলে জয়শঙ্কর সরাসরি উত্তর এড়িয়ে বলেন, এ ব্যাপারে শীর্ষ বৈঠকের পর দেয়া বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকেই আপনার শুনেছেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সাথে ভারতের জোরালো সহযোগিতা রয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। জঙ্গিবাদ ও জালমুদ্রা ঠেকাতে দুই দেশের সরকারে বিভিন্ন স্তরে কাঠামোগত সহযোগিতা রয়েছে।
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, এটা বর্তমানের না, বেশ কিছুদিন ধরে চলে আসা সমস্যা। বাংলাদেশে এখন উদারপন্থী একটি সরকার রয়েছে। এই ইস্যুতে সব সময়ই আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
বেসামরিক পরমানু চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে কি ধরনের সহায়তা দেয়া হবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রাশিয়ার সহায়তায় বাংলাদেশে পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। আমাদের সাথে চুক্তির আওতায় এ খাতে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়ানো হবে।
বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে ভারতের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলে জানান শ্রিংলা।
দুই দেশের মধ্যে কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি পেলে অশুল্ক বাধা অনেকাংশে কেটে যাবে বলে মন্তব্য করেন জয়শঙ্কর।
সূত্র: নয়াদিগন্ত
Discussion about this post