সমঝোতা স্মারক (এমওইউ)-এর মোড়কে ভারতের সঙ্গে বড় আকারের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পথে হাটতে চলেছে বাংলাদেশ। আজ (৭ এপ্রিল) নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চারদিনব্যাপী সফর শুরু হয়েছে। এই সফরকালে দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দু’টি সমঝোতাপত্রসহ বেশকিছু এমওইউ ও চুক্তি সই হবে। আর ভারত থেকে সমরাস্ত্র কেনার জন্য বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ-সাহায্য দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভূকৌশলগত রাজনীতিতে নয়াদিল্লি বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় পৌঁছতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব জয়শঙ্কর বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য চুক্তিগুলোর সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এ সময় তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে শেখ হাসিনার এবারের দিল্লি সফরের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতিগুলোর অন্যতম হবে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার রূপরেখা। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার ও আফগানিস্তানের সঙ্গে এমন সহযোগিতা থাকলেও এত দিন বাংলাদেশের সঙ্গে কেন তা হয়নি, সে প্রশ্নও তিনি তোলেন। তবে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত তিস্তা চুক্তি সইয়ের জন্য আরও সময় প্রয়োজন বলে তিনি জানিয়েছেন।
জয়শঙ্কর বলেন, এ বছর ভারতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের যেসব সফর হচ্ছে, তার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শেখ হাসিনার সফর। ইতোমধ্যে দুই নিকট প্রতিবেশীর সম্পর্কে যে অগ্রগতি হয়েছে, শেখ হাসিনা দিল্লিতে এসে সেটিকে নতুন পর্যায়ে নেবেন।
ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাদা ব্রিফিংয়ে সেদেশের পররাষ্ট্র দফতরের যুগ্মসচিব সুপ্রিয়া রঙ্গনাথন জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে যে দুটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হচ্ছে তার একটি হবে দু’দেশের মধ্যে চলতি সামরিক সহযোগিতাগুলোকে একটি ছাতার নিচে নিয়ে এসে একটি সামগ্রিক ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ তৈরি করা। এর মধ্যে রয়েছে সাবমেরিন-প্রশিক্ষণ, তথ্য সহযোগিতা, উপকূলরক্ষীদের মধ্যে সহযোগিতা, সেনাপ্রধান পর্যায়ে আদানপ্রদানের মতো বিষয়। আর, দ্বিতীয়টিতে রয়েছে ভারত থেকে সমরাস্ত্র ও সামরিক প্রযুক্তি কেনার জন্য বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়া।
তিস্তা চুক্তি না হলেও এবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সব মিলিয়ে কমবেশি ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে সংবাদ মাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়। শনিবার (৮ এপ্রিল) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষ বৈঠকে বসছেন।
প্রায় সাত বছর পর শেখ হাসিনার এবারের দিল্লি সফরটিকে নানা কারণেই দেশ-বিদেশে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বেইজিং-ঢাকা অক্ষ নয়াদিল্লির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে বলে উল্লেখ করে তা মোকাবেলায় ভারত উদ্যোগী হয়েছে বলে কোন কোন বিশেষজ্ঞ মনে করছেন।
২০০২ সাল থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সামরিক সহযোগিতা চুক্তি রয়েছে। সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এলাকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের সক্রিয়তা বেড়েছে। আর সেই পরিকল্পনা রূপায়ণে চীন বাংলাদেশকে কাছে পেতে চায় বলে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
চীন গত বছর প্রেসিডেন্ট শি জিনপিনের ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশের সঙ্গে ২৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ চুক্তি করে। পদ্মা সেতুসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে চীন বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে। এরই প্রেক্ষাপটে হাসিনার আসন্ন সফরে প্রতিরক্ষা নিয়ে সমঝোতাপত্রে সই-এর বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ দিল্লির কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তবে বাংলাদেশের বিরোধীদলগুলো ভারতের সঙ্গে এ ধরনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিরুদ্ধে। তারা মনে করছে ভারতের সঙ্গে এ ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি দেশের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করবে। বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বৃহস্পতিবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করে এমন কোন কিছু জনগণ মেনে নেবে না।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরি নিউএজ পত্রিকাকে বলেন, প্রতিরক্ষা খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। কোন দল বা গোষ্ঠী একা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর
Discussion about this post