মানুষ ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি চাচ্ছে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে দেশের স্বার্থহানিকর প্রতিরক্ষা চুক্তি বা এ বিষয়ে কোনো সমঝোতা স্মারক সই করা ঠিক হবে না।
গতকাল সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ভারতের সঙ্গে তাঁরা বন্ধুত্ব চান। কিন্তু বন্ধুত্বের নামে অধীনতা চান না। দেশের স্বার্থ বিকিয়ে কোনো ধরনের সমঝোতা চান না। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই বিনীতভাবে প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করতে চাই, সারা দেশের মানুষ এগুলো চাচ্ছে না। যা চাচ্ছে, তার পক্ষে দাঁড়ান। যা চাচ্ছে না, তার পক্ষে দাঁড়াবেন না, দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন না। যাবেন, ফিরে আসবেন, তারপর এই বাংলাদেশ এ রকম থাকবে না। যদি সত্যি সত্যি দেশের স্বার্থবিরোধী অবমাননাকর কোনো চুক্তি বা সমঝোতা তিনি করে আসেন, তাহলে এর বিরুদ্ধে দাঁড়াব।’
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রীকে সীমান্তে হত্যা বন্ধ ও সব নদীর পানিবণ্টন (তিস্তাসহ) চুক্তি করার কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা হবে সম্পূর্ণভাবে ভারসাম্যমূলক। কৃতজ্ঞতায় গদগদ হয়ে সবকিছু দিয়ে দেব, এই মনোভাব সবাইকে পরিহার করতে হবে। আমি বলব, ভারতের সঙ্গে আমাদের ভারসাম্যহীন এবং নতজানুমূলক সম্পর্ক একটা অনন্য মাত্রায় পৌঁছেছে।’
প্রতিরক্ষা চুক্তি প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, প্রতিরক্ষা চুক্তি বা সমঝোতা এমন একটি দেশের সঙ্গে করবেন, যে দেশের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি বা যুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা নেই। যে দেশের সঙ্গে ভবিষ্যতে সংঘাত ঘটতে পারে, সে দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে যায়?
সভায় আরও বক্তব্য দেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাজ্জাদ জহির চন্দন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।
বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি
দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: সমতা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পথ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, কৌশলগত কারণে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের মনোযোগ বেড়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়। তাদের মধ্যে ঐক্য ও সংঘাত দুটোই বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি। এ ঝুঁকি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো জনসমর্থিত নিজস্ব অ্যাজেন্ডা ঠিক রাখা।
মতবিনিময় সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন খান, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য আবদুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমেদ কামাল, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সূত্র: প্রথম আলো
Discussion about this post