রাহমান বিপ্লব
যেই মুসলিম জাতি শত শত বছর দোর্দণ্ড প্রতাপের সাথে শাসন করেছিলো পুরো বিশ্বকে। সেই মুসলিম জাতি আজ বিশ্বজুড়ে নির্যাতিত নিপীড়িত। গোটা বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন মানবিকতার সংকটে আরো বেশি করে পতিত হচ্ছে তারা। যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইরাক , আফগানিস্তান, সিরিয়া, ফিলিস্তিনে তো দীর্ঘমেয়াদি সংকট চলছেই। এগুলোর পাশাপাশি যেসব দেশে যুদ্ধ ছাড়াই মুসলিমরা চরম সংকটে সেসব দেশের কিছু চিত্রই তুলে ধরা হলো আজকের প্রতিবেদনে।
চীন
উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অধিকার দমন করতে ১৫ টি আচরনকে নিষিদ্ধ করে নতুন আইন পাশ করেছে চিন। সেখানে বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় আইনের পরিবর্তে ধর্মীয় আইন মেনে চলাকে নিষিদ্ধ ঘোষণার মত বিষয় রয়েছে। এছাড়া খাবার গ্রহণে হালাল-হারাম নির্বাচন, শিশুর ইসলামি নামকরন, রাষ্ট্রীয় টিভি না দেখা, পরিবার পরিকল্পনা অনুসরন না করা ইত্যাদিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিবাদে বরাবরের মত রাজপথ বেছে নিয়েছেন চরম নিপড়নে থাকা মুসলিমরা।
মায়ানমার
‘মায়ানমারে সুচির সরকার সেনা বাহিনীর ইচ্ছার বাইরে সরকার টেকাতে পারবে না, ফলে সুচি কখনই রোহিংগাদের জন্য কাজ করতে পারবে না’- আরাকান রোহিংগা স্যালভেশন নেতা আতা উল্লাহ্। সম্প্রতি রয়টার্স একটি স্বাক্ষাতকার গ্রহন করে। যেখানে আরাকান বিদ্রোহী এই নেতা অনেক খোলামেলা কথা বলেন। গত বছর বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালিয়ে ৯ জন নিরাপত্তা সদস্যকে হত্যা করে তারা। সে কথা স্বীকার করে কারন হিসেবে আতা উল্লাহ্ বলেন, একটু পর পর চেকপোষ্ট। আমরা এখানে রাতে টর্চ জ্বালাতে পারবো না। দিনে চলাফেরা করতে সীমাহীন চেক। এটা মানুষের জীবন হল? তিনি বলেন, ১০ লাখ ১৫ লাখ বা বাকী সব রোহিংগাও প্রয়োজনে জীবন দেবে, তবুও অধিকার আদায় করবে।
ফ্রান্স
প্যারিসের উপকন্ঠে নামাজের স্থান বাতিল করে মাল্টিমিডিয়া লাইব্রেরি চালুর প্রতিবাদে ফ্রান্সের মুসলমানরা রাজপথে নামাজ আদায় করে প্রতিবাদ করেন। গত শুক্রবার বিপুল পুলিশের উপস্থিতিতেই রাস্তায় মুসলিমরা ব্যাপক গণোজমায়েত করে সালাত আদায় করেন। অবিলম্বে নামাজের স্থান তাদের বরাদ্দ দিতে অনুরোধ করেন তারা। ক্লিচি নগরীর মেয়র সম্প্রতি বরাদ্দকৃত কক্ষ নতুন করে বরাদ্দ না দিয়ে লাইব্রেরির অনুমোদন করায় এই প্রতিবাদে নামেন মুসলিমরা।
কান্না ফুরায় না ভারতীয় মুসলিমের
২০০ বছরের গোলামী ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়কে রাজা থেকে পথের ভিখারীতে পরিনত করেছে। পথের ভিখারীর যদি ন্যূনতম মানবিক অধিকার থাকে ভারতীয় অঞ্চলের মুসলিমদের তা নেই! বিশেষত বর্তমান ভারতে বন্দি (মানবাধিকারহীন) মুসলিম সম্প্রদায় দিনের পর দিন আইনত পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট বলে গণ্য হচ্ছেন।
গুজরাট
গুজরাটের আদালত ধর্মীয় বৈচিত্রকে স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে ব্যর্থ হচ্ছে। অতিসম্প্রতি গুজরাতের আদালত মুসলিমদের ধর্মীয় মতে বৈধ খাদ্য গরুর মাংসকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে একে ‘গো-হত্যা’ বলে অভিহিত করে। এবং বিচার হিসেবে গরু জবেহ করলে মুসলিমদের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান জারি করেছে! মুসলিমদের রক্তরঞ্জিত বাবরি মসজিদের শহর গুজরাতের তীব্র সাম্প্রদায়িক মনোভাব আজও স্পষ্ট!
ছত্তিশগড়
গুজরাটের একধাপ ওপরে উঠে এলেন ছত্তিশগড়ের মূখ্যমন্ত্রী রমন। গুজরাটে গোহত্যার দন্ড যাবজ্জীবন ঘোষণার পরই এবার রমন সিং বললেন গোহত্যায় ফাসি দেয়ার কথা! ‘জো গাই কো মারেগা উনকো লটকা দেঙ্গে’- এমন প্রকাশ্য মন্তব্য করে ছত্তিশগড় মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে নিদারুন ভীতির সঞ্চারে মনোযোগী হলেন রমন।
উত্তরপ্রদেশ
ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশে মুসলমানদের চরম ভীতিকর পরিবেশের উল্লেখ করে মোদিকে চিঠি দিয়েছেন দিল্লী শাহী জামে মসজিদের ইমাম বোখারী। ইতিপূর্বে ভারতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে চলা রাষ্ট্রীয় পীড়নে সাহসী ভূমিকার জন্য দিল্লী মসজিদের এই ইমামের নাম বিশ্বময় ছড়িয়েছে। ইমাম বোখারী মোদিকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, উত্তর প্রদেশে বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর মোদি ভাষণে বলেছিলেন (সাবকা সাথ সাবকা বিকাশ) ‘সকল সম্প্রদায়ের উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে’। এটি যেনো মোদি মনে রাখেন।
কাশ্মীর
সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পার হচ্ছে কাশ্মীরে! সংবাদ মাধ্যম গুলো ক্রমাগত নাজুক পরিস্থিতির কাশ্মীরকে ভুলে গেলেও নিয়মিত যুদ্ধাবস্থা ভুলেনি কাশ্মীরকে। সম্প্রতি পুলিশের গুলিতে মারা গেছে সাধারন মানুষ ও দুইজন তরুন। পুলিশের দাবী জঙ্গিদের সাথে তাদের সংঘর্ষের সময় এই লোকগুলো পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছিলো। পুলিশ ঘোষণা দিয়েছে, তরুনরা যেন পুলিশের ওপর পাথর ছোড়া বন্ধ করে। কাশ্মীরের মূখ্যমন্ত্রীও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে সন্তানদের ঘরে বেধে রাখার অনুরোধ করেন। প্রশাসন বলছে- পুলিশের সংঘর্ষ স্থানে যাওয়া মানে অত্মহত্যা করা। আর তার দায় তারা নেবে না। অন্যদিকে কাশ্মীরে চলমান সহিংসতায় নেতৃত্ব দেয়া সংগঠন থেকে বলা হচ্ছে তারা কখনই কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবী থেকে সরে আসবেন না। উল্লেখ্য, কাশ্মীর আন্দোলন আরো তীব্র হচ্ছে। একই সাথে পুলিশ দেখলেই এলাকার তরুনদের সংঘবদ্ধ হয়ে পাথর ছোড়ার সংস্কৃতি ব্যাপক ভাবে চালু হয়েছে। সাধারনত এই দৃশ্য দেখা যেত ফিলিস্তিন অঞ্চলে!
Discussion about this post