মিরাজ খন্দকার
বাংলাদেশে এখন গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হলো প্রতিরক্ষা চুক্তি। জঙ্গী সমস্যার মূলেও রয়েছে এই চুক্তি এমনটাই মনে করেন অনেকে। ভারতের এই চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য উঠে পড়ে লাগার কারণ হিসেবে নিরাপত্তা বিশারদরা নিন্মোক্ত কারণগুলোকে দায়ী করছেন।
ক. চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং-এর বাংলাদেশ সফরের কার্যকারিতা,
খ. চীন থেকে বাংলাদেশের দুটো সাবমেরিন ক্রয়,
গ. ভারতের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমেই সম্প্রসারিত সামরিক শক্তি,
ঘ. বাংলাদেশকে চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতাহীন করার পরিকল্পনা ও
ঙ. বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলেও যাতে ভারতের প্রতি বাধ্যবাধকতা থাকে।
স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পরে যখন ভারতে এই প্রথমবারের মতো হিন্দু মৌলবাদী শক্তি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে, তখন এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর দেশপ্রেমিক নাগরিক সাধারণকে বিচলিত না করে পারে না। যেখানে ভারত নিজেই একটি অর্থসঙ্কটে নিপতিত দেশ তারা কি স্বার্থে বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার প্রতিরক্ষা ঋণ দিতে রাজি হয়েছে। এ চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে যৌথ সহযোগিতায় প্রতিরক্ষা সরাঞ্জাম তৈরি হবে। এ ছাড়া সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ আরো নিবিড় করা হবে। বিভিন্ন সামরিক প্রশিক্ষণ শিবির আরো বাড়ানো হবে। বাংলাদেশের জন্য সামরিক নৌযান নির্মাণেও ভারত সাহায্য করবে। দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে বেশ কয়েক বছর ধরেই যৌথ মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে এর পরিধি আরো বাড়ানো হবে। সর্বতোভাবে বাংলাদেশকে বিশেষত এর সেনাবাহিনীকে প্রকারান্তরে নিয়ন্ত্রণে নেয়াই ভারত সরকারের উদ্দেশ্য। বিগত দীর্ঘ বছরগুলোতে ভারতের তরফ থেকে এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব কখনোই আসেনি।
যদিও একাত্তরে প্রবাসী সরকারের সাথে ইন্দিরা গান্ধির এমনই একটা চুক্তি হয়েছিল। পরবর্তিতে সেটা নস্যাৎ হয়ে যায় শেখ মুজিবুর রহমান রাজি না হওয়ার কারণে।
চুক্তিগুলো হলো-
১. ভারতীয় সেনা বিশেষজ্ঞদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে একটি প্যারামিলিটারী ফোর্স বা আধা সামরিক বাহিনী গঠন করতে হবে।
২. ভারতীয় সেনা বিশেষজ্ঞদের অধীনে যাবতীয় সামরিক সরঞ্জামাদি ক্রয় করতে হবে। সমস্ত সামরিক যান ও যন্ত্রপাতি ভারতের কাছ থেকেই কিনতে হবে।
৩. ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে ও তত্ত্বাবধানে স্বাধীন বাংলাদেশের যাবতীয় ব্যবসায়িক কর্মকান্ড পরিচালিত হবে।
৪. ভারতীয় পরিকল্পনাবিদগণই বাংলাদেশের উন্নয়নের ফর্মুলা ও পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন।
৫. বাংলাদেশের সমস্ত বৈদেশিক ও কূটনৈতিক কর্মকান্ড ভারতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হবে এবং তা কোনভাবেই ভারতের জাতীয় স্বার্থকে ক্ষুন্ন করতে পারবে না।
৬. ভারতের অনুমোদন ছাড়া বাংলাদেশ কারো সাথে কোন চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারবে না।
৭. এই চুক্তিটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার চলমান যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের আগে স্বাক্ষরিত হলো এবং চুক্তি অনুযায়ী ভারতীয় সৈন্য ভারতীয় সেনারা যে কোন সময় বাংলাদেশে প্রবেশ করে তাদের প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করতে পারবে।
এর মধ্যে ১,২ এবং ৭ নং বর্তমান প্রতিরক্ষা চুক্তির সাথে মিলে যায়। শেখ মুজিব যে চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছেন তারই মেয়ে সেই চুক্তি করে দেশ বিক্রীর ব্যবস্থা করছে।
# প্রতিরক্ষা চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো উভয়পক্ষ সক্রিয় এবং পারষ্পরিকভাবে প্রতিরক্ষা বিষয়ে কাজ করবে
প্রতিরক্ষা তিনভাবে হতে পারে-
ক) বাইরের থেকে আক্রমণ
খ) দেশের ইন্টারনাল সমস্যা
গ) আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ।
ক) বাইরের থেকে আক্রমণঃ
বাইরের আক্রমণের ব্যাপারে বাংলাদেশের কোন সমস্যা নেই। পৃথিবীতে আমাদের কোন শত্রুরাষ্ট্র নেই। তাই কেউ আক্রমন করবে সে সমস্যা আমাদের নেই। তদুপরি আমরা ভারত দ্বারা ঘেরাও হয়ে থাকার কারণে আমাদেরকে কেউ আক্রমণ করতে হলে ভারতকে টপকাতে হয়। তাই কোন কারণে আমাদের শত্রু সৃষ্টি হলেও আক্রমণ সহজ নয়। এক্ষেত্রে মূল সমস্যা ভারতের। ভারতের শত্রু অনেক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পাকিস্তান ও চীন। কোন কারণে পাকিস্তান ও চীন দ্বারা আক্রান্ত হলে ভারত বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করবে। এতে অযথা আমাদের শত্রু বাড়বে। এখানে ২য় বিশ্বযুদ্ধের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। মূল শত্রু জার্মান হলেও আমেরিকা জাপানের উপর আক্রমণ করে জার্মানকে সতর্ক করেছে। চীন ও পাকিস্তানও সে রকম সুযোগ নিতে চাইবে। তারা বাংলাদেশে বড় ধরণের আক্রমণ করে ভারতকে সতর্ক করবে। তারা যদি পরমাণু অস্ত্র ভারতে চার্জ করে তাহলে যুদ্ধ বন্ধ হওয়া বা সমঝোতায় আসার সম্ভাবনা নেই। ভারত তার প্রতিশোধ নিবেই। কিন্তু বাংলাদেশে আক্রমনটাই এখানে ভারতের শত্রুদের জন্য ভালো স্থান হবে। বাংলাদেশকে আক্রমণ করে ভারতকে চাপে ফেলতে চাইবে।
খ) দেশের ইন্টারনাল সমস্যাঃ
আমাদের দেশে যে জলদস্যু কিংবা সন্ত্রাসী, মাদক চক্র সবগুলো আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রন সম্ভব। আমাদের পাহাড়ে যে সমস্যা তাও আমাদের সেনাবাহিনী দিয়েই নিয়ন্ত্রন সম্ভব। আমাদের ইন্টারনাল সমস্যা যা আছে তা সবই আমাদের নিয়ন্ত্রনে। এর মধ্যে আমরা মনে করি ভারত যদি সম্পৃক্ত হয় তাহলে আমাদের সমস্যা কমার চাইবে বাড়ার সম্ভাবনাই বেশী। আমাদের পাহাড়ে মাঝে মাঝে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয় তার মূল কারণ ভারত। সস্ত্রীক নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার মাছরাঙ্গা টিভির সাংবাদিক সাগর সারোয়ারের কর্ণেলকে আমি যেমন দেখেছি বইতে তিনি এমনই ইঙ্গিত করেছেন। এছাড়া আমরা শ্রীলংকার তামিল টাইগারের কথা জানি, নেপাল, ভূটানের সাথে ভারতের সম্পর্কও জানি। সে সমস্ত বিষয় থেকে আমরা যদি শিক্ষাগ্রহন করি সেক্ষেত্রে ভারত আমাদের ইন্টারনাল সমস্যায় জড়িত হলে আমাদের জন্যই যে অকল্যাণকর হবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আবার ভারতে নানান ধরণের ইন্টারনাল সমস্যা রয়েছে। আন্তর্জাতিক মাদক চক্র রয়েছে। মাওবাদী সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে তারা যদি আমাদের ব্যবহার করে তবে তা হবে আমাদের জন্য ক্ষতিকর। এর মাধ্যমে আমরা অহেতুক কিছু রাষ্ট্রের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়বো। সেক্ষেত্রে যারা ভারতের শত্রু তারাও আমাদের শত্রুতে পরিণত হবে। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে আমরা জড়িত হলে চীনের সাথে আমাদের সম্পর্কের অবনতি হবে। আবার বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষেই মাওবাদীদের আস্তানা। আসাম, মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ইত্যাদি অঞ্চলে থাকা মাওবাদীরা আমাদের শত্রুজ্ঞান করে আমাদের দেশেও সন্ত্রাস চালাবে। যেটা আমাদের জন্য নতুন সমস্যা সৃষ্টি করবে। এটা আমাদের প্রতিরক্ষার জন্য হুমকি হবে। আর বিষয়টা এমন না যে একটা যৌথ অভিযানের মাধ্যমে তাদের নির্মূল করা সম্ভব। এটা ভারতের একটা স্থায়ী সমস্যা। প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে ভারত সেই সমস্যাটা আমাদের উপর চাপিয়ে দিবে।
গ) আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদঃ
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একমাত্র রাষ্ট্র যারা তাদের উগ্রবাদী সমস্যা সম্পূর্ণভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে আরেকটি পর্যবেক্ষন হলো ২০০৫ সালে সারাদেশে বোমা হামলার মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করা সন্ত্রাসী সংগঠন জেএমবি মূলত র’ এর তত্ত্বাবধানে সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মনে করেন। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে ভারতের সাহায্য নেয়া মানে হবে শেয়ালের কাছে মুরগী বর্গা দেয়া। বাংলাদেশে যতবারই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের ইস্যু এসেছে ততবারই র’ এর নাম এসেছে। আরেকটি পর্যালোচনা হচ্ছে এদেশের ভৌগলিক অবস্থান ও জলবায়ু জঙ্গিবাদের জন্য সহায়ক নয়। এদেশের পারিবারিক বন্ধন, আর্থ-সামাজিক অবস্থা কোনটাই জঙ্গীবাদের জন্য সহায়ক নয়। এদেশের ইসলামপন্থী সকল গ্রুপ, পুরো আলেম সমাজ জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে। যখন জেএমবির উত্থান হয়েছিল তখন প্রতিটি মসজিদ থেকেই জেএমবির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুরু হয়েছে। তাই এই কথা মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা চলে এদেশে জঙ্গীবাদ স্থায়ী কোন সমস্যা নয়। এদেশে জঙ্গীবাদের পক্ষে কোন জনসমর্থন নেই। তাই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের বেগ পেতে হবে না। বাংলাদেশে কোন এই ধরণের জঙ্গীবাদ সৃষ্টি হয়নি হবেও না। জঙ্গীবাদ পুরোটাই সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর চক্রান্ত। এক্ষেত্রে ভারতও কম দায়ী নয়।
# প্রতিরক্ষা চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো প্রতিরক্ষা খাতে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি
আমরা না চাইতেই ভারত প্রতিরক্ষা খাতে আমাদেরকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে চায়। এটা ভারতের একটা কৌশলগত চালাকি। ওরা জানে আমরা রাষ্ট্র হিসেব দরিদ্র। এখানে প্রতিরক্ষা খাতে আমরা খুব সামান্যই ব্যয় করি এবং করবো। ওরা আমাদের ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেবে অস্ত্র ক্রয় করার জন্য। এই অস্ত্র আবার ক্রয় করতে হবে ভারত থেকেই। ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক রাষ্ট্র। ওরা নিজেরাই নিজেদের অস্ত্রের কোয়ালিটির ব্যপারে আস্থাবান নয়। তারা অস্ত্র রপ্তানি করতে চাইলেও সারাবিশ্বের কেউ সাড়া দেয়নি। এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে তারা সেই নিন্মমানের সরঞ্জাম আমাদের উপর চাপিয়ে দেবে। নেপালের সাথে ১৯৫০ সালে ভারতের যে সামরিক চুক্তি হয়, তাতে উল্লেখ আছে, নেপাল ভারতের অনুমতি ছাড়া তৃতীয় কোন দেশ থেকে অস্ত্র ক্রয় করতে পারবে না। ভারত সিকিমের সাথেও সামরিক চুক্তি করেছে। এরপর ভারত সিকিমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশটি দখল করে নেয়। শ্রীলঙ্কার সাথেও ভারত অনুরূপ আচরণ করেছে।
চুক্তিতে আমাদের সমস্যাঃ
১- আমরা ভারত ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে পারবো না।
২- ভারতের নিম্নমানের অস্ত্রতেই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
৩- ভারত আমাদের অস্ত্রের সক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকবে।
৪- রাশিয়া এবং চীন যাদের থেকে আমরা নিয়মিত অস্ত্র ক্রয় করি তাদের সাথে সম্পর্কের ঘাটতি হবে।
৫- ভারত ভিন্ন আমাদের আর মিত্র থাকবে না। যা আমাদেরকে ভারতের উপর নির্ভরশীল করে তুলবে।
৬- আমরা ওদের থেকে অস্ত্র কিনতে বাধ্য থাকবো বিধায় ভারতের নির্ধারিত মূল্যেই আমাদের ক্রয় করতে হবে।
৭- এই চুক্তি ২৫ বছরের জন্য হওয়া মানে কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভারতের একটি প্যারামিলিটারি বাহিনীতে পরিণত হবে।
এই চুক্তিতে ভারতের সুবিধাঃ
১- আমাদের সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা
২- নিম্নমান ও অচল অস্ত্র উচ্চমূল্যে বিক্রয় করতে পারা
৩- মিত্রবিহীন বাংলাদেশকে ইচ্ছেমত ব্যবহার
৪- আমাদের অস্ত্র ও জনবল দিয়ে তাদের প্রতিরক্ষা সমস্যা সমাধান করা।
# সেনাবাহিনীর যৌথ প্রশিক্ষণ
প্রতিরক্ষা চুক্তির আরেকটি দিক হলো দুই দেশের সেনাবাহিনীর যৌথ প্রশিক্ষণ হবে। শক্তির দূর্বলতায় আমরাতো ভারতকে প্রশিক্ষণ দিতে পারবো না, বরং ভারতই আমাদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে তাদের বাংলাদেশভীতি দূর করবে।
সমস্যাঃ
১- বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও কৌশল সম্পর্কে পুরো ধারণা ভারত পেয়ে যাবে।
২- প্রশিক্ষণে ও কৌশলে মৌলিকত্ব বলে কিছু থাকবে না।
৩- বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ব্যাপকহারে র’ এর প্রভাব সৃষ্টি হবে।
৪- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অন্যান্য দেশের সাথে যৌথ কার্যক্রমে ভারত বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
৫- মোট কথা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভারতের অধিনস্থ একটা বাহিনীতে রুপান্তরিত হবে।
# চুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো উভয়পক্ষ পারষ্পরিক ডিফেন্স তথ্য আদান প্রদান করবে।
এটা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অনেক বড় একটা সংকট সৃষ্টি করবে। এখানে যদিও বলা হয়েছে উভয়পক্ষ তথ্য আদান-প্রদান করবে কিন্তু এটা মোটেই বিশ্বাস যোগ্য নয়। কারণ যে ভারত গঙ্গা চুক্তির পর এই পর্যন্ত একবারও ঠিকমত পানি দেয় নি সেই ভারত তাদের ডিফেন্স তথ্য বাংলাদেশকে দিবে এটা বিশ্বাস করা পাপ। এর মাধ্যমে চুক্তির দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের ডিজিএফআইকে হাত করবে ভারত। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা বলে আর কিছু থাকবে। ভারতকে সব তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে বাংলাদেশ। এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ একটি পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত হবে। চুক্তি করা মানে আমাদের জান মালের নিরাপত্তা ভারতের কাছে বন্ধক রাখা।
সবচেয়ে বড় কথা হলো স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোন পারষ্পরিক বিষয়ে ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করতে পারেনি। প্রতিটা ক্ষেত্রে আমাদের শোষন করেছে। প্রতিটা চুক্তিতে আমাদের থেকে প্রাপ্তি বুঝে নিয়েছে কিন্তু আমাদের হিস্যা দেয় নি। মৈত্রী চুক্তি, গঙ্গা চুক্তি এগুলোর অন্যতম। ভারত আমাদের থেকে বেরুবাড়ি বুঝে নিয়েও তিন বিঘা করিডোর দেয় নি। কথা ছিল ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে আমাদের তিস্তা চুক্তির মাধ্যমে পানির নায্য হিস্যা বুঝিয়ে দেবে। অথচ নতজানু হাসিনা সরকার ভারতকে সব সুবিধা (বিনা শুল্কে ট্রানজিট ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার) দিয়েও আজ পর্যন্ত তিস্তা চুক্তি করতে পারেনি। এক তিস্তা চুক্তির মূলা দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করে নিচ্ছে। হাসিনা ৭ এপ্রিল ইন্ডিয়া যাচ্ছে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে সেই সাথে ইন্ডিয়ার সহায়তায় নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে। হাসিনা জনগণ দ্বারা নির্বাচিত নয় তাই জনগণের ইচ্ছার মূল্য এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে ভূলন্ঠিত করতে সে কুন্ঠাবোধ করে না।
লেখক: লেখক ও গবেষক
Discussion about this post