অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
‘আব্বা বাহিনী’। শুভাঢ্যা ইউনিয়নে গঠিত হওয়া একটি গুন্ডা বাহিনীর নাম। বাহিনী পরিচালনা করে আফতাব উদ্দিন রাব্বি। রাব্বির বাবাই হলো ‘আব্বা বাহিনী’ মূল হোতা। তার নাম বাছের উদ্দিন। সে বুড়িগঙ্গার ওপারে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। শুভাঢ্যা ইউনিয়নকে ঘিরেই আব্বা বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলতে থাকে। আফতাব উদ্দিন ছিল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। কেরানীগঞ্জের সমস্ত অপকর্মের সাথে আব্বা বাহিনীর পরিচালক রাব্বি জড়িত।
আব্বা বাহিনী গড়ে উঠতে শুরু করে বছর দশেক আগে। ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন ও তাঁর ভাই বাছের (রাব্বির বাবা) বহু আগে থেকেই দলবল নিয়ে চলতেন। সেই দলবলই পরে বাহিনীতে রূপ নেয়। সেটির মূল ব্যক্তি এখন বাছের। মাঠে বাহিনীর নেতৃত্ব দেন তাঁর ছেলে রাব্বি। প্রশ্রয়দাতা ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল।
সর্বত্র চাঁদাবাজী তাদের মূল কাজ। এর পাশাপাশি বিএনপি- জামায়াত নেতাকর্মীদের হয়রানী, তাদের জমি দখল অন্যতম কাজ। আব্বা বাহিনী আলোচনায় আসে ১০ জানুয়ারি। আব্বা বাহিনীর এক সদস্য সাইফুল ইসলাম রাসেলের সাথে বাহিনী প্রধান রাব্বির চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। বিরোধের এক পর্যায়ে রাব্বির উপস্থিতি ও তার নির্দেশে বাহিনীর সদস্যরা মিলে রাসেলকে উচিত শিক্ষা দেয়। এই উচিত শিক্ষা দিতে গিয়ে তারা রাসেলকে খুন করে ফেলে।
খুনের পর বাহিনীর মূল হোতা বাবা বাছির, ছেলে রাব্বিসহ অন্যান্য গুন্ডাপান্ডারা এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। রাসেলের স্ত্রী মামলা করে খুনীদের বিরুদ্ধে। এখানে উল্লেখ্য যে, রাসেলের ওপর নির্যাতনের সময় খুনীরা ভিডিও করে এবং সেই ভিডিও ফেসবুকে তারা পাবলিশ। তারা বুঝতে পারে নাই কিছুক্ষণ পরেই রাসেল মারা যাবে। যাই হোক, রাসেলের নির্যাতনের ভিডিও থাকায় হত্যাকারী শনাক্তে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না।
কিন্তু পুলিশ দ্বিধায় থাকে। তারা বুঝতে পারে না আসামীদের এরেস্ট করা ঠিক হবে কিনা। ভিডিও থাকায় সর্বত্র সমালোচনা তৈরি হয়। আব্বা বাহিনীর বিরুদ্ধে থাকা আওয়ামী লীগের অন্যান্যরা বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়। অবশেষে পুলিশ বাধ্য হয়ে রাব্বিসহ বাহিনীর ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। নিহত রাসেলের স্ত্রী বলেন, আব্বা বাহিনীর মূল বাছের তাঁর (রাসেলের স্ত্রী) পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে বাছেরসহ আব্বা বাহিনীর সাথে সংযুক্তরা এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে মার্চের শুরু থেকে। কারণ এর মধ্যে পুলিশ ম্যানেজ করে ফেলেছে আব্বা বাহিনী। নতুন মোড় নিয়েছে রাসেল হত্যাকান্ড। রাসেল হত্যাকাণ্ডে উঠে এসেছে তিন সহোদর ভাইয়ের নাম। তারা এই ইউনিয়নেরই ছিলেন। এই তিন ভাই ও তাদের বাবা বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত।
শুভাঢ্যার চর মীরেরবাগ এলাকায় একটি জমি কেনার বিরোধকে কেন্দ্র করে ২০২৩ সালের এপ্রিলে তাঁদের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন আব্বা বাহিনীর সদস্যরা। সেই টাকা না দেওয়ায় হামলা চালিয়ে তিন ভাইকে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে তাঁদের বাসায় লুটপাট চালিয়ে ২ লাখ টাকা ও ১০ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার লুট করেন আব্বা বাহিনীর সদস্যরা। আব্বা বাহিনীর হামলায় তিন ভাই গুরুতর আহত হন। প্রাণভয়ে তারা এলাকা ছেড়ে রাজধানীর শ্যামপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।
এখন বাংলাদেশের বীর পুলিশ বাহিনী, সন্ত্রাসী বাছেরের সাথে হাত মিলিয়ে নিরাপরাধ তিন ভাইকে খুনের আসামী বানিয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের গ্রেফতারও করেছে। তাদেরকে দিনের পর দিন রিমান্ডে নিয়ে রাসেল হত্যার স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। অথচ রাসেল হত্যার ফুটেজ সবার কাছে বিদ্যমান। সেখানে এই ভাই কেউই ছিল না। থাকার কথাও না।
হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া তিন ভাইয়ের মধ্যে আসাদুজ্জামান শুভাঢ্যা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাঁর ভাই ফেরদাউস রহমান শুভাঢ্যা ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য। আতাউর রহমান শুভাঢ্যা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সহসভাপতি। তাঁদের বাবা মিজানুর রহমান শুভাঢ্যা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সহসভাপতি ছিলেন। চারজনের বিরুদ্ধে একাধিক রাজনৈতিক মামলাও রয়েছে।
বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় তিন সহোদরের ‘আব্বা বাহিনী’র হাতে যুবক খুনের মামলায় জড়িয়ে পড়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মামলার এজাহারেও তাঁদের নাম ছিল না। রাসেলের স্ত্রী জানান, রনি (আসাদুজ্জামান) ও বাবুকে (ফেরদাউস রহমান) গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের কথা জানেন না। তাঁদের তিনি চেনেন না। রাসেলকে নির্যাতনের যে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেখানে এই তিনজনের কাউকে দেখা যায়নি বলেও তিনি জানিয়েছেন।
‘আব্বা বাহিনী’র খুনের দায় বিএনপি নেতাদের ওপর! এ যেন উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে!
Discussion about this post