২০২২ সালের জুলাই মাসে আব্দুর রউফ তালুকদারকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পরই অ্যানালাইসিস বিডিতে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে রাষ্ট্রের সকল আর্থিক খাত শেষ করে এখন হাসিনার চোখে পড়েছে ব্যাংক খাতে। আর হাসিনা তার অনুগত ব্যবসায়ীদের দিয়ে ব্যাংক খাত থেকে লুটপাট করতেই আব্দুর রউফ তালুকদারকে অর্থসচিব থেকে এনে গভর্নরের পদে বসিয়েছেন। আর আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরই ঋণ খেলাপিদের সুবিধা দিয়ে একটা মাষ্টার সার্কুলার জারি করেছিল। এরপর থেকে একের পর এক বিভিন্নভাবে তিনি ব্যবসায়ীদেরকে সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন। আর ব্যবসায়ীরাও এ সুযোগে নামে বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। এসব ঋণ জালিয়াতির ফলে ব্যাংকগুলো ক্রমেই ভয়াবহ তারল্য সংকটে পড়েছে।
আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে যোগদানের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন-তারা ১২টি ব্যাংককে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু দেড় বছর পর সেই দুর্বল ব্যাংকের সংখ্যা বেড়ে এখন ৩৮টিতে দাড়িয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গোপন প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৫৪টি ব্যাংকের অবস্থা বিশ্লেষণ করে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ মোট ৩৮টি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ব্যাংক এখন দুর্বল। ‘রেড জোনের’ ব্যাংকগুলো সবচেয়ে খারাপ (পুওর) এবং ইয়েলো জোনের ব্যাংকগুলো দুর্বল (উইক) অবস্থায় রয়েছে। আর ‘গ্রিন জোনের’ ব্যাংকগুলো ভালো মানের (গুড)। ৫৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১২টির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, যার ৯টি ইতিমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। ইয়েলো জোনে আছে ২৯টি ব্যাংক; এর মধ্যে ৩টি ব্যাংক রেড জোনের খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে মাত্র ১৬টি ব্যাংক গ্রিন জোনে স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ৮টিই বিদেশি ব্যাংক। অর্থাৎ গ্রিন জোনে দেশীয় ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র ৮টি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে চারটি ব্যাংক (বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক), চারটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক (পদ্মা ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এবি ব্যাংক) এবং একটি বিদেশি ব্যাংক (ন্যাশনাল ব্যাংক অভ পাকিস্তান) রেড জোনে পড়েছে।
৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ইয়েলো জোনে পড়েছে (বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক)। এই ব্যাংকগুলোর অবস্থান রেড জোনের কাছাকাছি।
ইয়েলো জোনে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, ১৯টি প্রচলিত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ৮টি শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক রয়েছে।
এই ব্যাংকগুলো হলো: সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ওয়ান ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।
লক্ষণীয় বিষয় হল-ব্যাংকগুলোর অবস্থা এতটা খারাপ হওয়া সত্ত্বেও বিষয়টা কঠোরভাবে গোপন করে রাখছে হাসিনার অনুগত গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই প্রতিবেদনই প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের পুরো ব্যাংক খাত একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে। আর এমনটা হওয়ার পেছনে মূল ভুমিকা পালন করেছে হাসিনার উপদেষ্টা দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমান ও এস আলম গ্রুপের কর্ণধার শরীফুর আলম। এই দুই ব্যবসায়ীর মাধ্যমেই মূলত হাসিনা ব্যাংক খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
Discussion about this post