এবার সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ও এটার ২৩ নাবিককে নিয়ে চরম মিথ্যাচারে নেমেছে প্রতিবেশী দেশ ভারতের গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইন্ডিয়া টুডে, দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ভারতীয় বার্তা সংস্থা ইন্দো এশিয়া নিউজ সার্ভিস (আইএএনএস), ফার্স্ট পোস্ট এবং নিউজ ১৮-সহ দেশটির আরও কিছু সংবাদমাধ্যম।
ভারতের নৌবাহিনীর রণতরী এবং টহল বিমান অভিযান চালিয়ে এমভি আব্দুল্লাহকে উদ্ধার করেছে বলে গণমাধ্যমগুলো প্রচার করছে। মজার বিষয় হল-ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো তাদের শিরোনামে এমভি আব্দুল্লাহকে ভারতীয় নৌবাহিনী উদ্ধার করেছে বলে দাবি করলেও প্রতিবেদনের ভেতর এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রমাণ তার দিতে পারেনি।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন, ভুয়া সংবাদ ছড়িয়ে বাংলাদেশি নাবিক ও জাহাজটিকে উদ্ধারের কৃতিত্ব নেয়ার চেষ্টা করছে ভারত। বাংলাদেশি জাহাজ ও নাবিকদের জিম্মি করার বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও এ বিষয়ে এখন বেশ সরব আছে। কিন্তু জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহকে উদ্ধারের তথ্য এখন পর্যন্ত ভারতীয় গণমাধ্যম ছাড়া আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে আসেনি। ভারত মিথ্যাচার করে অতিরিক্ত ভালবাসা দেখাতে গিয়ে ধরা পড়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস একটি প্রতিবেদনে দাবি করেছে যে ”ছিনতাইকৃত বাংলাদেশের-পতাকাবাহী জাহাজ উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী”। কিন্তু তাদের প্রতিবেদনে কোনও তথ্যই পাওয়া যায়নি। বরং প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত মহাসাগরে ছিনতাইয়ের শিকার বাংলাদেশি পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজকে জরুরি সহায়তার অনুরোধে সাড়া দিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। এই অঞ্চলে ভারতীয় নৌবাহিনীর এই ধরনের ধারাবাহিক অভিযানের সর্বশেষ ঘটনা এটা।
মজার বিষয় হল-এই প্রতিবেদনেই আবার বলা হয়েছে মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর অবস্থান শনাক্ত করার পরপরই ভারতের নৌবাহিনী দূরপাল্লার সামুদ্রিক টহল বিমানটি মোতায়েন করে। ক্রুদের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য জাহাজটির সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টাও করেছিল নৌবাহিনী। এর মানে তারা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল। মানে যোগাযোগ করতে পারেনি। আর শিরোনাম করেছে উদ্ধার করেছে।
দেশটির আরেক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেও ”ছিনতাইকৃত বাংলাদেশের-পতাকাবাহী জাহাজ উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী” শিরোনামে খবর প্রকাশ করেছে। কিন্তু প্রতিবেদনের ভেতর বলা হয়েছে, সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুদের হাতে ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজ থেকে জরুরি সহায়তা চাওয়ার ঘটনায় সাড়া দিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। এমভি আব্দুল্লাহকে উদ্ধার করে কোথায় আনা হয়েছে এমন কোনো তথ্য দেয়নি ইন্ডিয়া টুডে।
তারপর, ভারতীয় বার্তা সংস্থা ইন্দো-এশীয় নিউজ সার্ভিস (আইএএনএস)ও ”জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি নাগরিকদের উদ্ধার করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি নাগরিকদের উদ্ধার করা হয়েছে বলে শুক্রবার ভারতীয় নৌবাহিনী জানিয়েছে। অন্য গণমাধ্যমের সঙ্গে এই নিউজেরও কোনো মিল নাই।
দেশটির আরেক সংবাদমাধ্যম ফার্স্ট পোস্টও ”সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুদের হামলা থেকে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজকে রক্ষা করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিন্তু প্রতিবেদনে এমভি আব্দুল্লাহকে উদ্ধারের বিষয়ে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। বরং ইন্ডিয়া টুডে ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনটিই প্রায় অবিকল প্রকাশ করেছে ফার্স্ট পোস্ট।
ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসও ”এডেন উপসাগরে বাংলাদেশি জাহাজকে উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতেও বলা হয়েছে, এডেন উপসাগরে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর সহায়তা চেয়ে করা অনুরোধে দ্রুত সাড়া দিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ। ভারতীয় নৌবাহিনীর বিবৃতির বরাত দিয়ে দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, ”এলআরএমপি বিমানটি অনুরোধ পাওয়ার পরপর তাৎক্ষণিকভাবে মোতায়েন করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশি জাহাজটির অবস্থান শনাক্ত করার পর ক্রুদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করে ভারতের নৌবাহিনী। তবে বাংলাদেশি জাহাজ থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এই প্রতিবেদনেও এমভি আব্দুল্লাহকে উদ্ধারের বিষয়ে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। তবে শিরোনামে বাংলাদেশি জাহাজকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে দেশটির এই সংবাদমাধ্যম। এছাড়াও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডব্লিউআইএন, হ্যান্স ইন্ডিয়া, নিউজ ১৮-সহ আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এমভি আব্দুল্লাহকে ভারতীয় নৌবাহিনী উদ্ধার করেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে।
Discussion about this post