অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
এদেশের বেশিরভাগ মানুষ ইসলামপ্রিয়। এদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বিএনপি’র এই জনপ্রিয়তার মূলে রয়েছে আওয়ামীলীগের ইসলাম বিরোধীতা। বাংলাদেশের অভ্যুদয়কালে সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আওয়ামীলীগ তার স্বৈরাচারী আচরণ ও ইসলামবিরোধী চরিত্র জনগণের সামনে উপস্থাপন করে। শেখ মুজিব তথা আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তা তলানিতে চলে আসে।
নানান ঘটনা ও উপঘটনার মধ্য দিয়ে ১৯৭৫ সালে সিপাহী বিপ্লব সংঘটিত হয়। জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন। তাঁর এই দলে দেশের ইসলামপন্থী ধারার মানুষ ও ডানপন্থীরা যুক্ত হতে থাকে। শাহ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলাম পার্টির অধিকাংশ নেতাকর্মী বিএনপিতে যোগদান করেন। মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুর পর তাঁর দলের প্রধান হন মশিউর রহমান যাদু মিয়া। যাদু মিয়ার নেতৃত্বে ন্যাপের অধিকাংশ নেতা কর্মী বিএনপিতে যোগ দেন। যদিও তারা সাম্যবাদী ছিলেন তবে ন্যাপের ঐসকল নেতাকর্মীরাও মাওলানা ভাসানীর মতো ডানপন্থী ছিলেন।
ঐতিহাসিকভাবে বিএনপি এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলামপ্রিয় মানুষদের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। কিন্তু গত কয়েকবছরে বিএনপি নেতৃত্ব অধিকতর ভারতঘেঁষা অবস্থান নেওয়ায় ডানপন্থীরা দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও কারাবন্দী হওয়ার সুযোগে দলের বামপন্থীরা বিএনপিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঠেলে দিয়েছে। এই পুরো বিষয়টার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক বাম রাজনীতিবিদ মির্যা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুধু বিএনপি -জামায়াতের নেতাকর্মীরা নয়, এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ চায় বিএনপি ও জামায়াত একাসাথে থেকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করুক। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়তে এই জোটের বিকল্প নেই। কিন্তু বিএনপি জামায়াতকে বিচ্ছিন্ন করে আওয়ামী বিরোধী জোটের শক্তিক্ষয় করেছে। বিএনপি’র এই জামায়াত বিরোধীতা এখন ইসলামবিরোধীতায় রূপ নিয়েছে। এর মূলে বন্ধুবেশে থাকা বামপন্থীরা।
শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আন্দোলনকে আরো বেগমান করার জন্য সরকারবিরোধী ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন নিয়ে গঠন করা হচ্ছে ছাত্রঐক্য। যার নেতৃত্বে থাকছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এ লক্ষ্যে গত ২৭ আগস্ট বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১৯ টি ছাত্র সংগঠন বৃহত্তর ছাত্রঐক্য গঠনের লক্ষ্যে মতবিনিময় করে। কিন্তু গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রর ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার ব্যক্তিগত চাহিদার কাছে নতুন জোটের ইসলামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
মতবিনিময়ে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনও অংশগ্রহণ করে। সেই মিটিংয়ে একমাত্র ছাত্র ফেডাররেশন ও ছাত্রলীগ(আ স ম রব) এ বৃহত্তর ছাত্রঐক্যের বিরোধিতা করেন। পরবর্তীতে ছাত্রঐক্যের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু গণতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দ বিএনপির লিয়াজু কমিটির সাথে মিটিং করে ছাত্রদলের সাথে শুধুমাত্র মঞ্চভুক্ত সংগঠনের ছাত্রঐক্য করার প্রস্তাব দেয়। বিএনপি সাড়া না দিলে আরো কিছু সংগঠনকে যুক্ত করার প্রস্তাব দেয় তারা। পরে জোনায়েদ সাকি ও মান্নাসহ গণতন্ত্র মঞ্চনেতারা বিএনপির জহির উদ্দিন স্বপন ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক বকুলের সাথে মিটিং করে কোন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে কোন ধরনের আলাপ আলোচনা না করেই আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) সকাল ১০টায় নামসর্বস্ব ছাত্রসংগঠন নিয়ে জোট গঠনের ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেন। যারা ‘ফ্যাসিবাদীবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ নামে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বলে সূত্র জানায়।
এর ফলে বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর বাকি দশের অধিক ছাত্র সংগঠনে মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে এমনকি জোটে না থাকারও সিদ্ধান্তও তারা নিতে পারে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। জোটভুক্ত হতে যাচ্ছে যে সকল ছাত্রসংঠনগুলো- জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ফেডারেশন, জেএসডি ছাত্রলীগ, নাগরিক ছাত্রঐক্য, ভাসানী ছাত্র পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্রসংহতি, রাষ্ট্র সরকার ছাত্রআন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্র ফোরাম (মন্টু), জাতীয় ছাত্রসমাজ (কাজী জাফর),জাগপা ছাত্রলীগ(রবিউল), গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এনডিপি), জাতীয় ছাত্র সমাজ (বিজেপি, পার্থ),জাগপা ছাত্রলীগ (লুৎফর)।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় সংগঠন তাদের ৬ টি ছাত্র সংগঠন দাবি করলেও এখন পর্যন্ত ৪ টির নাম পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ছাত্র ফেডারেশনেই একমাত্র কিছু সংখ্যক কর্মী বা কয়েকটি কর্মসূচি করতে দেখা যায়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (রব) রয়েছে মাত্র ৪/৫ জন কর্মী। নাগরিক ছাত্রঐক্যের ৮/১০ জন, ভাসানী পরিষদের এখন পর্যন্ত আহবায়ক ও সদস্য সচিব ব্যতিত কাউকে দেখা যায়নি।
৪ সংগঠনের উদ্যোগে “ভোটাধিকার আদায়ে ছাত্র সমাজ” ব্যানারে ২ টি কর্মসূচিতে উপস্থিতির সংখ্যা ৫০ ছাড়াতে পারেনি। এই নামসর্বস্ব ছাত্র সংগঠন নিয়ে ছাত্রদলের সাথে ঐক্য করার জন্য বিএনপির জহির উদ্দিন স্বপনের মাধ্যমে পরিকল্পনা করছে রব-মান্না-সাকী। উদ্দেশ্য একটিই ছাত্রঐক্যের ব্যানার দেখিয়ে জোটে বিএনপি থেকে সর্বোচ্চ আসন নিশ্চিত করা এবং ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদলের ছায়ায় নিজেদের অস্তিত্ব তৈরি করা বলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে শরীক দলের একাধিক নেতাকর্মীর জানান।
একাধিক সূত্র বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের ৪ ছাত্র সংগঠনের মধ্যেও ফাটল ধরেছে, ভাসানী ছাত্র পরিষদ মঞ্চের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ইসলামি ছাত্র আন্দোলন নেতৃত্বে জোটে অংশগ্রহণ করেছে। নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি ব্যতিত সকলে পদত্যাগের ঘটনাও শোনা গিয়েছে। ফলে জোনায়েদ সাকির ছাত্র ফেডারেশন ও রবের বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ব্যতিত কেউ এই প্রক্রিয়ায় রাজি নয়।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান বলেন, ফ্যাসিবাদ আন্দোলনে আমরা রাজপথে আছি। অন্যান্য যারা এই সরকার বিরোধী রয়েছে তারাও আমাদের আন্দোলনে যুক্ত রয়েছেন। দেশ ও বর্তমান সঙ্কট নিরসনে সবাই ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। সব ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে আমরা তাদের মতামতের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ কিংবা যুগপৎ ধারায় আন্দোলনের চেষ্টা করব। ইসলামী দলগুলো যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে রাশেদ বলেন,দেখুন আমরা আসলে ডানপন্থি দল নই। আমরা মধ্যমপন্থি দল। আমরা সবাইকে নিয়েই কাজ করি। ইসলামপন্থিরা তাদের অবস্থান পরিস্কার করলে তারা কিভাবে কাজ করবে, আন্দোলন করবে,তখন ভাববো।
অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে যাচ্ছে শুধু ছাত্রশিবিরকে বাদ দেওয়া নয়, মূলত ইসলামবিরোধীতাই হচ্ছে রব-মান্না-সাকীদের উদ্দেশ্য। যে কোনো ইসলামফোব গোষ্ঠীর প্রধান টার্গেট হয়, জামায়াত-শিবির। পরে তারা এই প্রক্রিয়াকে ইসলামবিরোধীতায় রূপ দেয়। বিএনপি-ছাত্রদল একই এজেন্ডা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। রামদের খপ্পরে পড়ে তারা এখন ইসলামফোবিয়ায় ভুগছে। সকল ইসলামী দলের সাথেই তারা সম্পর্কচ্ছেদ করছে।
Discussion about this post