• যোগাযোগ
শুক্রবার, মে ৩০, ২০২৫
Analysis BD
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে
No Result
View All Result
Analysis BD
No Result
View All Result
Home বিশেষ অ্যানালাইসিস

যেভাবে হত্যা করা শহীদ মুজাহিদকে

- আহমেদ আফগানী

নভেম্বর ২২, ২০২২
in বিশেষ অ্যানালাইসিস
যেভাবে হত্যা করা শহীদ মুজাহিদকে
Share on FacebookShare on Twitter
আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ জন্ম ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি। তিনি তার পিতা, প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা আব্দুল আলীর কাছে তার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তীতে, জনাব আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ফরিদপুর ময়জুদ্দিন স্কুলে ভর্তি হন এবং তারও পরে তিনি ফরিদপুর জেলা স্কুলে অধ্যয়ন করেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশুনা সুসম্পন্ন করার পর তিনি ফরিদপুরে রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। রাজেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্নাতক ডিগ্রী শেষ করার পর তিনি ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় আগমন করেন। জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাত্র দুই-আড়াই মাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ক্লাস করার পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় জনাব মুজাহিদ আর সেখানে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারেননি। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনীর রাজনৈতিক সহযোগী আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন আলী আহসান মুজাহিদ। তিনি এই বাহিনীকে বাঙালি নিধনের নির্দেশ দেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এমন অভিযোগ দাখিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এটিসহ জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে ৩৪টি অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে অভিযোগ গঠন হয়েছে সাতটি অভিযোগের ভিত্তিতে।

বিচার প্রক্রিয়ার টাইমলাইন

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার- ২৯ জুন ২০১০
৩৪ টি অভিযোগ দাখিল- ১৬ জানুয়ারি ২০১২
৭ টি অভিযোগ গঠন- ২১ জুন ২০১২
ট্রাইব্যুনালের রায়- ১৭ জুলাই ২০১৩
আপিলের রায়- ১৬ জুন ২০১৫
রিভিউ আবেদন খারিজ- ১৮ নভেম্বর ২০১৫
রায় কার্যকর- ২২ নভেম্বর ২০১৫ [১]

আসুন আমরা দেখি কী ছিল শহীদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে গঠিত সাতটি অভিযোগ  [২]

প্রথম অভিযোগ:
পাকিস্তানের বাঙালি সহযোগীদের বিরুদ্ধে একটি দৈনিকে প্রবন্ধ লেখার অপরাধে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ৫ নম্বর চামেলীবাগের ভাড়া করা বাসা থেকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করা হয় ইত্তেফাকের সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে। এর পর তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
রায়ঃ ফাঁসী
দ্বিতীয় অভিযোগ:
একাত্তরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন থানায় বৈদ্যডাঙ্গি, মাঝিডাঙ্গি ও বালাডাঙ্গি গ্রামে হিন্দুদের প্রায় সাড়ে তিনশ’ বাড়ি পুড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসররা। হামলাকারীদের গুলিতে ৫০ থেকে ৬০ জন নরনারী নিহত হন। ওই ঘটনায় ফরিদপুর শহরের হামিদ মাওলানা ছাড়াও ৮/১০ জন অবাঙালি অংশ নেন।
রায়ঃ খালাস
তৃতীয় অভিযোগ:
মুজাহিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের তৃতীয় অভিযোগটি নির্যাতনের। অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের যে কোন একদিন ফরিদপুর শহরের খাবাসপুর মসজিদের সামনে থেকে রাজাকাররা ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামট (রথখোলার) মৃত রমেশ চন্দ্র নাথের পুত্র রণজিৎ নাথ ওরফে বাবু নাথকে আটক করে। বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে তাঁকে ফরিদপুর পুরনো সার্কিট হাউসে আসামি আলী আহসান মুজাহিদের সামনে পাকিস্তানি সেনা অফিসার মেজর আকরাম কোরাইশীর কাছে হাজির করা হয়। তখন মুজাহিদ ওই মেজরের সঙ্গে কথা বলার পর বাবু নাথের ওপর অমানষিক নির্যাতন চালানো হয়। তার একটি দাঁত ভেঙ্গে ফেলা হয়। নির্যাতনের পর হত্যা করার উদ্দেশে মুজাহিদের ইশারায় তাকে বিহারি ক্যাম্পের উত্তর পাশে আব্দুর রশিদের বাড়িতে আটকে রাখে রাজাকাররা। রাতে রণজিৎ নাথ বাবু তার জানালার শিক বাঁকা করে ওই ঘর থেকে পালিয়ে জীবন বাঁচান।
রায়ঃ পাঁচ বছর কারাদন্ড
চতুর্থ অভিযোগ:
এ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৬ জুলাই সকাল বেলা ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থেকে স্থানীয় রাজাকাররা মোঃ আবু ইউসুফ ওরফে পাখিকে (পিতা- মৃত মোঃ জয়নাল আবেদীন, গ্রাম-পূর্ব গোয়ালচামট খোদাবক্সপুর, থানা-কোতোয়ালি, জেলা-ফরিদপুর) মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে আটক করা হয়। এরপর তাকে ফরিদপুর স্টেডিয়ামে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। আটক বন্দিদের মধ্যে পাখিকে দেখে মুজাহিদ সঙ্গে থাকা পাকিস্তানি মেজরকে কিছু একটা বলেন। এর পরই তার ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। সেখানে ১ মাস ৩ দিন আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে আবু ইউসুফ পাখির বুকের ও পিঠের হাড় ভেঙ্গে যায়। পরে তাকে যশোর ক্যান্টনমেন্টে পাঠানো হয়।
রায়ঃ খালাস
পঞ্চম অভিযোগ:
রাষ্ট্রপক্ষের পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট রাত ৮টায় পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি আসামি মুজাহিদ পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি মতিউর রহমান নিজামীসহ ঢাকার নাখালপাড়ার পুরনো এমপি হোস্টেলের আর্মি ক্যাম্পে যান। সেখানে তারা আটক সুরকার আলতাফ মাহমুদ, জহির উদ্দিন জালাল, বদি, রুমি, জুয়েল ও আজাদকে দেখে তাদের গালিগালাজ করেন। এসময় তারা পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনকে বলেন, প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আদেশের আগেই তাদের হত্যা করতে হবে। মুজাহিদ অন্যদের সহায়তায় আটকদের একজনকে ছাড়া অন্যান্য নিরীহ-নিরস্ত্র বন্দীদের অমানুষিক নির্যাতনের পর হত্যা করে লাশ গুম করেন।
রায়ঃ যাবজ্জীবন
ষষ্ঠ অভিযোগ:
একাত্তরের ২৭ মাচের্র পর দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকার মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ক্যাম্প তৈরি করে। পরে রাজাকার ও আল-বদর বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তারাও ওই স্থানে ক্যাম্প করে প্রশিক্ষণ গ্রহণসহ অপরাধমূলক নানা কার্যক্রম চালায়। আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি হওয়ার সুবাদে আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। ছাত্রসংঘের ও আল-বদর বাহিনীর সুপিরিয়র নেতা হিসেবে তিনি আর্মি ক্যাম্পের ঊর্ধতন সেনা অফিসারের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী নানা অপরাধের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করতেন। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগে বলা হয়েছে, এ ধরনের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আসামি মুজাহিদ ১০ ডিসেম্বর থেকে বুদ্ধিজীবী নিধনে অভিযান চালায়। দখলদার পাক সেনাদের সহযোগী বাহিনী নিয়ে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতনসহ যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন।
রায়ঃ ফাঁসী
সপ্তম অভিযোগ:
রাষ্ট্রপক্ষের এ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৩ মে মুজাহিদের নির্দেশে রাজাকার বাহিনী ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করে। শান্তি কমিটির বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বকচর গ্রামের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় হামালা চালিয়ে বীরেন্দ্র সাহা, উপেন সাহা, জগবন্ধু মিস্ত্রি, সত্যরঞ্জন দাশ, নিরদবন্ধু মিত্র, প্রফুল্ল মিত্রকে আটক করা হয়। উপেন সাহার স্ত্রী রাজাকারদের স্বর্ণ ও টাকা দিয়ে তার স্বামীর মুক্তি চান। রাজাকাররা সুনীল কুমার সাহার কন্যা ঝুমা রানীকে ধর্ষণ করে। পরে আটক হিন্দু নাগরিকদের হত্যা করে তাদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুজাহিদের নির্দেশে অনিল সাহা দেশত্যাগে বাধ্য হন।
রায়ঃ ফাঁসী
শহীদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে ১ নম্বর অভিযোগকে ৬ নম্বর অভিযোগের সঙ্গে সমন্বিত করে দুটি অভিযোগের একসঙ্গে ফাঁসীর রায় দেওয়া হয়। ১ নম্বর অভিযোগে ছিল, শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন হত্যা ও ৬ নম্বর অভিযোগে ছিল গণহত্যায় নেতৃত্ব দেয়া, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা, হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়ন ইত্যাদির ঘটনা। প্রথম অভিযোগে শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হত্যার ঘটনায়ও তার সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব) দায় ছিল বলে উল্লেখ করা হয় রায়ে। ৭ নম্বর অভিযোগে ছিল, ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ ও গণহত্যার ঘটনা। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।

আমরা এখন দেখবো স্পেসেফিক যে তিনটি অভিযোগে ফাঁসী দেয়া হয়েছে সে অভিযোগগুলোর পর্যালোচনা। 

পর্যালোচনা-১ (১ নং অভিযোগ)

১৯৭১ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে, পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক সিরাজউদ্দিন হোসেনের ‘ঠগ বাছিতে গাঁ উজাড়’ নামক একটি প্রবন্ধের প্রতিক্রিয়ায় মুজাহিদ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দৈনিক সংগ্রামে ‘অতএব ঠগ বাছিও না’ নামে একটি কলাম লিখেন। অভিযোগে বলা হয়, সিরাজউদ্দিন হোসেন মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষের মানুষ হওয়ায় তিনি বরাবরই পাকিস্তানী সেনাদের বর্বরতার সমালোচনা করতেন। তাই তিনি স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি রাজাকার, আল বদর ও শান্তি কমিটির লোকদের বিরাগভাজন হন। এমনই এক অবস্থায় ১৯৭১-এর ১০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মাংকি ক্যাপ পরিহিত ৭-৮ জন যুবক কাঁধে রাইফেল নিয়ে সিরাজউদ্দিন হোসেনের ৫ চামেলীবাগস্থ বাসায় আসে এবং তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এই চার্জের আলোকে মুজাহিদকে সিরাজউদ্দিন হোসেনের অপহরণ ও হত্যার পেছনে প্ররোচণা, সহায়তা ও অবদান রাখার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।

# এই অভিযোগটি প্রমাণের জন্য এই ট্রাইব্যুনালে একজন মাত্র সাক্ষী হাজির করে প্রসিকিউশন। তিনি হলেন, অপহৃত বুদ্ধিজীবী শহীদ সিরাজউদ্দিনের ছেলে শাহীন রেজা নূর। সাক্ষী  শাহীন রেজা নূর স্বীকার করেন দৈনিক সংগ্রামের তথাকথিত কাউন্টার কলাম ‘অতএব ঠগ বাছিও না’ এর লেখক কে তা তিনি জানে না। ‘অতএব ঠগ বাছিওনা’ এই নিবন্ধের লেখক কে ছিলেন তা আমার জানা নেই। অথচ লেখার অভিযোগ মুজাহিদের বিরুদ্ধে, যা আদালতে প্রমাণ হয়নি। আর কারো লেখার জবাবী লিখা লিখলেই তার খুনের দায় নিতে হবে কি?

# ট্রাইব্যুনোলে জেরার এক পর্যায়ে সাক্ষী শাহীন রেজা নূর স্বীকার করেন, তার পিতাকে অপহরণের পর পর তিনি ১৯৭২ সালে রমনা থানায় দালাল আইনে একটি মামলা করেছিলেন। তিনি ঐ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। ঐ মামলায় একজন আসামী ছিল যার নাম ছিল খলিল। আদালতে আসামী খলিল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছিল এবং বিচারে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। ঐ বিচারের রায় সম্পর্কিত সংবাদ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তখন প্রকাশিত হয়েছিল। যদিও ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদের বিরুদ্ধে সিরাজউদ্দিন হোসেনের অপহরণ ও হত্যার দায়ে অভিযোগ এনেছে। অথচ এই ব্যাপারটি বহু আগেই, একেবারে ঘটনার পরপরই আদালতে নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে। এক অপরাধের বিচার কয়বার হবে? কেন ৭২ সালের মামলায় মুজাহিদ অভিযুক্ত ছিলেন না? এটা কি সাজানো অভিযোগ নয়?

# পরবর্তীতে সাক্ষী জেরায় আরও স্বীকার করেন যে, তিনি তার মা এবং তার ভাইদের কেউ কেউ শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেনের অপহরণ এবং তাকে হত্যা সংক্রান্ত স্মৃতিচারণমূলক লেখা লিখেছেন কিন্তু তার কোন লেখাতেই মুজাহিদকে এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত করেননি। শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনের স্ত্রী নূরজাহান সিরাজী তার স্বামীর অপহরণের স্মৃতিচারণ করে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ বইতে প্রবন্ধ লিখেছেন সেখানে তিনি তার স্বামীর অপহরণ বা হত্যাকারী হিসাবে মুজাহিদের নাম উল্লেখ করেননি। সর্বশেষ সাক্ষী শাহীন রেজা নূর জেরায় স্বীকার করেন, এই ট্রাইব্যুনাল ছাড়া ইতিপূর্বে মুজাহিদ সাহেবের বিরুদ্ধে তিনি কোথাও কোন অভিযোগ করেননি এবং এই ট্রাইব্যুনাল ব্যতীত অন্য কোথাও মুজাহিদকে আলবদর বা তার কমান্ডার হিসেবে আখ্যায়িত করে কোন বক্তব্যও রাখেননি। শুধু জামায়াত করার কারনেই কি তাহলে এত বছর পর এই অভিযোগ! আর বিচারকেরা গড্ডলিকার প্রবাহে গা ভাসিয়ে ফাঁসীর রায় দিয়েছেন। [৩]

পর্যালোচনা-২ (৬ নং অভিযোগ)

# মুজাহিদ সাহেব যে কখনো আলবদর নেতা বা কমান্ডার ছিলেন না, এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ দিয়েছেন এই মামলার সরকারপক্ষের তদন্ত কর্মকর্তা (আবদুর রাজ্জাক খান) নিজেই। তিনি ট্রাইব্যুনালে জেরার জবাবে খুবই স্পষ্ট করে বলেছেন, এই মামলার পুরো তদন্তকালে রাজাকার, আলবদর, আল শামস বা শান্তি কমিটির কোনো তালিকাতেই মুজাহিদের নাম ছিল না বা পাওয়া যায়নি। এছাড়া অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা আরও স্বীকার করেছেন যে, মুজাহিদ রাজাকার বা আলবদরই ছিলেন না।
# এছাড়া সরকারপক্ষের অন্য একটি ডকুমেন্ট ‘আলবদর’ নামক বইতেও কোথাও মুজাহিদের নাম নেই। যেখানে আলবদর বইটিই লেখা হয়েছে, আলবদরদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সেখানে কমান্ডার হিসেবে মুজাহিদের নাম থাকবে না, এটা কীভাবে সম্ভব? মূলত আলবদর ছিলো তখন সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত একটি শাখা। এটি সম্পূর্নরুপে সেনাবাহিনীর তথা এ কে নিয়াজীর আওতাধীন ছিলো। রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপন করা মুনতাসির মামুনের বইয়ে এ কে নিয়াজীর ইন্টারভিউতেই সেটি উল্লেখ রয়েছে। তাহলে কীভাবে শহীদ মুজাহিদকে আল বদর কমান্ডার হিসেবে শাস্তি দেয়া যেতে পারে? [৪]

# ১৯৭১ সালে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের গার্ডের দায়িত্বে থাকা রহম আলী এখনো জীবিত।  তাকে আদালতে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েও উপস্থাপন করা হয়নি। কারণ তিনি মিথ্যে বলতে রাজি হননি। তাকে সাক্ষী না বানিয়ে এই অভিযোগের সাক্ষী বানানো হয় তার ছেলে রুস্তম আলীকে। রুস্তম সেসময় ছিল নাবালক। এই রুস্তমই সাক্ষ্য দেয়ার কিছুদিন আগে বিটিভির সাক্ষাৎকারে বলেছেন তিনি কোন বাঙ্গালিকে এখানে আসতে দেখেননি। তাহলে সে কিছু পরই কিভাবে শহীদ মুজাহিদকে দেখার দাবী করে?

# মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের তৎকালীন প্রিন্সিপ্যালও জীবিত। ইনস্টিটিউটের বর্তমান প্রিন্সিপ্যাল তৎকালীন প্রিন্সিপ্যালের সন্তান। তিনিও জানিয়েছেন তিনি এখানে কখনোই নিজামী বা মুজাহিদ কাউকেই দেখেন নি। প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন প্রিন্সিপ্যাল, তৎকালীন গার্ড, বর্তমান প্রিন্সিপ্যালের সাক্ষ্য না নিয়ে সাক্ষ্য নেয়া হলো গার্ডের ছেলের। তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় স্বীকার করেছেন সেসময় ইনস্টিটিউটের কোয়ার্টারে থাকা কোন স্টাফ, কোন শিক্ষক/ কর্মকর্তা/ কর্মচারী অথবা কোন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করেননি। তিনি কথা বলেছেন কেবল নাবালক রুস্তমের সাথে।

# একমাত্র সাক্ষী রুস্তম স্বীকার করেছে, সে কোন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেনি। তবে সে চাকুরী পাওয়ার জন্য অবৈধভাবে পঞ্চম শ্রেণীর সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছে। সে বলতে পারেনি মুজাহিদ ছাড়া অন্য একজনেরও নাম, যে এখানে এসেছে এবং নির্যাতন করেছে। অথচ সে বলেছে মাত্র একদিন সে বাজারে যাওয়ার সময় গেইটে মুজাহিদ সাহেবকে দেখেছে। তাহলে সেখানে প্রতিদিন নির্যাতন করতো কারা? এরকম একটি মিথ্যেবাদী ও আইন লঙ্ঘনকারী লোকের সাক্ষ্যে কীভাবে একজন মানুষের শাস্তি হতে পারে?

পর্যালোচনা-৩ (৭ নং অভিযোগ)
# প্রথমত এমন একটি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ফরিদপুরের কোন  ইতিহাস বইতেই পাওয়া যায় না। প্রসিকিউশন কর্তৃক যে কয়টি বই দলিল হিসেবে উপস্থাপন করা হয় তার একটিতেও এই হত্যাকাণ্ডের ব্যপারে কোন কিছু উল্লেখ নেই। ফরিদপুরের শহীদদের তালিকায় এই গ্রামের মানুষদের নাম নেই। এই ঘটনায় নিহতদের স্মরণে কোন স্মৃতিস্তম্ভও পাওয়া যায় না।

# এই ঘটনার সাক্ষী শক্তি সাহা ভারতে অবস্থান করেন। এই অভিযোগটি প্রথমে ছিল না। আবুল কালাম আযাদের মামলা তদন্তে সেই তদন্তকারী কর্মকর্তা এই অভিযোগটি খুঁজে পান। মূলত তিনি ভারতে থাকা শক্তি সাহাকে খুঁজে পান এবং তাকে নিয়েই চক্রান্ত করেন। বিস্তারিত দেখুন ভারত থেকে আসা অভিযোগে শহীদ মুজাহিদের বিচার।

# শক্তি সাহা দাবী করে তার বয়স ৫৭ বছর। সে অনুসারে ৭১ সালে তার বয়স ১৩ বছর। সে নিজেকে হিরো প্রমাণ করতে গিয়ে বলে সে নাকি ৭০ এ ভোট দিয়েছে। তাহলে কি সে সত্তর সালে ১২ বছর বয়সে ভোট দিয়েছে? হয় সে বয়স নিয়ে মিথ্যে বলেছে। অথবা সে ভোট নিয়ে মিথ্যা বলেছে অথবা সে বেআইনিভাবে জাল ভোট দিয়েছে। এমন একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য কি গ্রহণযোগ্য?

# সাক্ষী স্বীকার করে সে তিনবার ভারত গিয়েছে। জেরায় সাক্ষী শক্তি সাহা স্বীকার করেন তিনি ভারতে থাকতেন এবং কোনো প্রকার পাসপোর্ট এবং ভিসা ছাড়াই ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে এসেছেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে গেছেন বলেও সাক্ষী স্বীকার করেন। ডিফেন্স আইনজীবীর এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, তার স্ত্রীর মৃত্যুর পরে তার সৎকারও ভারতেই সম্পন্ন করা হয়েছে। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নূর হোসেন ভারতে গিয়েই তার জবানবন্দী রেকর্ড করেছেন বলেও তিনি স্বীকার করেছেন। তাহলে একজন আইন অমান্যকারী হিসেবে যেখানে তাকে শাস্তি দেয়ার কথা উল্টো তার কথা বিবেচনায় এনে শহীদ মুজাহিদকে ফাঁসীর মত বড় শাস্তি দেয়া হয়েছে! [৫]

# জেরায় সাক্ষী শক্তি সাহা বলেন, সে ভারতে কোন চাকরী করে না। আবার একটু পরই সে তার জবানীতে বলে তদন্তকারী ভিডিওর মাধ্যমে আমার কর্মস্থল চব্বিশ পরগনার দমদম থানাধীন হলদিরামে রাজলক্ষী বেডিংএ ধারণ করে। সে বাংলাদেশে থাকাকালীন সুদীর্ঘ সময়ে তার বাবার হত্যার বিষয়ে কোন মামলা/ অভিযোগ দায়ের করেনি। তার বড় ভাই গোপিনাথ সাহা ফরিদপুরেই আছেন এবং তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। তিনি জানিয়েছেন এই হত্যাকান্ডে মুজাহিদ সাহেব জড়িত ছিলেন না।

# সাক্ষী শক্তি সাহা দাবী করেছে তার মেঝো ভাই ক্ষীরোদ সাহা মুজাহিদ সাহেবের ছোট ভাইয়ের সাথে রাজেন্দ্র কলেজে পড়তো। সে সুবাদে শক্তি সাহা মুজাহিদ সাহেবকে চিনতেন। অথচ পর্যালোচনায় জানা যায় ক্ষীরোদ সাহা এখনো জীবিত এবং তিনি জানিয়েছেন তিনি ম্যট্রিকের পর আর পড়াশোনা করেন নি। তাহলে কলেজে পড়ার তো প্রশ্নই আসে না। ক্ষীরোদ সাক্ষী থাকা সত্ত্বেও মিথ্যা বলতে রাজি না হওয়ায় প্রসিকিউশন তাকে আদালতে হাজির করেনি।

# হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে শক্তি বলে সে বাকচরে তার বোনের বাড়িতে গাবগাছে উঠে গাব খাওয়ার সময় মুজাহিদ সাহেবকে দেখেছে খুনের নেতৃত্ব দিতে। সরেজমিনে দেখা যায় তার বোনের বাড়ি থেকে তাদের বাড়ি দেখা যায় না। সে যা বলেছে তা সর্বৈব মিথ্যা। যেখানে তার বড় ভাই ও মেঝো ভাই বলেছে, তাদের বাবার হত্যাকাণ্ডের সাথে মুজাহিদ সাহেব জড়িত নন সেখানে ভারতে অবস্থানরত শক্তি সাহার সাক্ষ্য কীভাবে মুজাহিদ সাহেবকে ফাঁসীর রায় দেয়ার জন্য উপযুক্ত হতে পারে।

যেখানে সকল স্বাক্ষীর বক্তব্যই অসংযত, যেখানে স্বাক্ষীদের বিশ্বাসহীনতা আর মিথ্যা কথায় পরিপূর্ণ জালিয়াতী বার বার ধরা পড়েছে সেখানে এহেন নিন্মমানের সাক্ষ্যের উপরে নির্ভর করে ফাঁসী দেয়াতো দূরের কথা একদিনের শাস্তি দেয়াও বেআইনি। আর সেই বেআইনি কাজটিই করেছে হাসিনার পদলেহন করা সিনহার নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগ।

আরো দেখুন শহীদ মুজাহিদের প্রহসনের বিচার

তথ্যসূত্রঃ
১- সাকা-মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর  
২- মুজাহিদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ 
৩- মুজাহিদের আপিলে ডিফেন্সের যুক্তিতর্ক শুরু 
৪- আমরা আশাবাদী মুজাহিদ খালাস পাবেন -খন্দকার মাহবুব হোসেন 
৫- মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন ভারতীয় নাগরিক শক্তি সাহা

সম্পর্কিত সংবাদ

মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাব
Home Post

মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাব

মে ২১, ২০২৫
ইশরাকের মেয়র হতে বাধা কোথায়?
Home Post

ইশরাকের মেয়র হতে বাধা কোথায়?

মে ২১, ২০২৫
নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করতে হবে
Home Post

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করতে হবে

এপ্রিল ৩০, ২০২৫

Discussion about this post

জনপ্রিয় সংবাদ

  • বিতর্কিত আজিজের সাক্ষাৎকার নিয়ে লে. কর্নেল মুস্তাফিজের বিশ্লেষণ

    বিতর্কিত আজিজের সাক্ষাৎকার নিয়ে লে. কর্নেল মুস্তাফিজের বিশ্লেষণ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • ভাষা আন্দোলন ও এর ঘটনা প্রবাহ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • রক্তাক্ত ২৮ ফেব্রুয়ারি: নির্বিচার গণহত্যার দিন

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির যত মামলা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • নাসিরের ক্ষমতার উৎস সেই বেনজীর ধরাছোঁয়ার বাইরে কেন?

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

সাম্প্রতিক সংবাদ

মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাব

মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাব

মে ২১, ২০২৫
ইশরাকের মেয়র হতে বাধা কোথায়?

ইশরাকের মেয়র হতে বাধা কোথায়?

মে ২১, ২০২৫
নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করতে হবে

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করতে হবে

এপ্রিল ৩০, ২০২৫
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন ধারার প্রবর্তন অপরিহার্য

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন ধারার প্রবর্তন অপরিহার্য

এপ্রিল ৩০, ২০২৫
হাওর ধ্বংস করে আবদুল হামিদের প্রমোদ সড়ক

হাওর ধ্বংস করে আবদুল হামিদের প্রমোদ সড়ক

মার্চ ২০, ২০২৫
  • Privacy Policy

© Analysis BD

No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে

© Analysis BD