রুদ্র আহনাফ
দেশের করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বেসামাল হয়ে পড়েছে। যেমন সরকারের ভেতরের কোনো সমন্বয় তেমনি হারিয়েছে শৃঙ্খলাবোধও। যখন যা খুশি সরকার তাই করছে। আর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া করোনা পরিস্থিতি যেভাবে বাড়ছে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকার সঠিক কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারছে না ক্ষমতাসীনরা। আর কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলেও সেটা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারছে না। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন একটা হ য ব র ল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় যতগুলো সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে তার একটিও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারিনি। মহামারির শুরুতে কোন রকম পাত্তা না দিয়ে শেখ মুজিবের জন্মশত বার্ষিকীর আয়োজনে মত্ত ছিলো তারা। এরপর যখন পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলো তখনই সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে করোনার তথ্য গোপন করতে শুরু করলো। এরপর যখন তথ্য গোপন করেও হিমশিম খাচেছ তখনই দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের ব্যবস্থা নিশ্চিত না করেই কথিত লকডাউনের সিদ্ধান্ত দেয়া হলো। যাতে উদুর পিন্ডি বুদুর ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেদের দায় মুক্তি থাকা যায়।
গরিবের দু মুঠো খাবারের আহাজারি, মধ্যবিত্তের আর্তনাদ, অক্সিজেনের অভাবে পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ, হাসপাতালে সিট না পেয়ে অসহায় মায়ের আর্তনাদ সেই সরকারের দেয়া কথিত লকডাউন মানতে পারেনি। এরপর নতুন বোতলে নেয়া হলো পুরনো মদ। কথিত লকডাউন মানুষকে মানতে বধ্য করতে নাম দেয়া হলো কঠর লকডাউন। বলা হেলো বিনাপ্রয়োজনে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারবে না। রাস্তায় জরুরি সেবা ছাড়া কোনো যানবাহন চলবে না। কিন্তু সরকারের এই কঠোর লকডাউনের বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো।
গণপরিবহন বন্ধ রেখেও ঠেকানো যায়নি গ্রাম থেকে শহর কিংবা শহর থেকে গ্রামমুখি মানুষের ঢল। ঠেকাবেই বা কিভাবে কখনও নাড়ির টান কখনও পেটের টানে মানুষ ছুটছে এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। তাদের মুখের দিকে তাকালে স্পষ্ট হয়ে ওঠে রফিক আযাদের সেই কথা ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাবো।
এই জনস্রোতকে নিজেদের দুর্বলতা ঢাকার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হলো। কিন্তু বিধি বাম স্বাস্থ্য খাতের বেহাল দশা তাদের চিন্তার ভাজ আরো বাড়িয়ে দিলো। বেরিয়ে আসতে থাকলো দুর্নীতি অনিয়মের খবর। কোনঠাসা হয়ে পড়লো তারা।
এরপর কথিত লকডাউনে সরকার সব ধরণের শিল্পকারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত দিলো। কিন্তু কারখানা মালিকদের দাবির মুখে সেটাও বাস্তবায়ন সম্ভব হলো না। মালিকপক্ষের তোপের মুখে কারখানা খুলে দিতে বাধ্য হয়। এ যেন অন্য এক অসহায়ত্ব।
চাকরি বাঁচাতে শত ভোগান্তি মাড়িয়ে মানুষ ফিরছে তার কর্মস্থলে। সারাদেশে তৈরি হলো জনস্রোত। বিভিন্ন জায়গায় গণপরিবহন খুলে দেয়ার দাবিতে আন্দোলনও নামলো সাধারণ মানুষ। তোপের মুখে ক্ষনিক সময়ের জন্য গণপরিহন খুলে দিলো সরকার।
এখানে একটি বিষয় খেয়াল করা দরকার। শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত গণপরিবহন ও নৌযান চলাচলের ঘোষনা দেয়া হয়। যেটা অযৌক্তিক ও হাস্যকরও বটে। এই সময়ের মধ্যে কি শ্রমিকরা আসলেই ফিরতে পারবে? নাকি এখানেও তাদের কোন কৌশল? যেহেতু কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষনা আগেই দেয়া হয়েছে শ্রমিকদের ফেরার জন্য পরিবহণ খোলার সিদ্ধান্তটাও আগে জানালে এই ভোগান্তি তৈরি হতোনা। এখন যদি প্রশ্ন করা হয় এই লাখ লাখ নারী-পুরুষ ও শিশুদের দায় কে নেবে? মালিকপক্ষেরও সাফ জবাব তারা এ দায় নিতে পারবেনা। তাহলে তার উত্তর কি আছে সরকারের কাছে?
যে স্বৈরাচার মেতে উঠেছিলো একটি রাষ্ট্র ধ্বংস স্তুপে পরিনত করতে। সেই স্বৈরাশাসক একটি ছোট ভাইরাস করোনার কাছে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কোনভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। শুধু স্বৈরাশাসক নয় সরকারের সব মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারকদের মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। ওদের হাতে যতদিন ক্ষমতা থাকবে ততদিন দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে না। তাদের এসব অসহায়ত্ব, সমন্বয়হীনতা, অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে দেশ পরিচালনায় ওরা মেন্টালি আনফিট।
Discussion about this post