অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
এবার বাংলাদেশি প্রগতিশীলদের চপেটাঘাত করলো ভারতীয় হাইকোর্ট। শুধু বিবাহের পরে নয় বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে শারীরিক সম্পর্ক ধর্ষণ নয় বলে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন দিল্লির হাইকোর্ট। আদালত বলেন, একজন নারী যদি তার নিজের সম্মতিতে দীর্ঘদিন শারীরিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন তাহলে এটাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে ধর্ষণ বলা যাবে না। তবে এই রায় বৈবাহিক ধর্ষণ’ প্রচারকারীদের চপেটাঘাত হলেও অন্যায় হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেখাগেছে, বাংলাদেশের প্রগতিশীলরা বিবাহের পরে স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করাকে ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ বলে দাবি করে আসছেন। তাদের দাবি বিবাহিত নারীরা তাঁদের স্বামীর কাছ থেকে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
তাদের এসব দাবিকে যেন পাত্তাই দিলেন না ভারতীয় হাইকোর্ট। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, এক নারী তার মামলায় দাবি করেছিলেন, একজন পুরুষ তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ প্রতিশ্রুতির কারণে তাদের মধ্যে মাসের পর মাস শারীরিক সম্পর্ক অব্যাহত ছিল। তিনি এটাকে ধর্ষণ বলে দাবি করেন। তবে জবাবে আদালত বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে শারীরিক সম্পর্ক ধর্ষণ নয় বলে রায় ঘোষনা করেন।
বিচারক বিভু বখরু বলেছেন, বিয়ের কথা বলে শারীরিক সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে তখনই ধরা হবে ভিকটিম যদি সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে মনে করেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে বিয়ের প্রতিশ্রুতি হয়তো যৌন সম্পর্ক স্থাপনে উভয়কে সম্মত করাতে পারে। যদিও একই রকম মনে নাও করতে পারেন সংশ্লিষ্ট যুবক বা যুবতী।
তিনি আরও বলেন, এমন ক্ষেত্রে ওই শারীরিক সম্পর্কে উভয়ের মত আছে বলে ধরে নেওয়া হলেও, ওই যুবতীর মত ছিল না বলে মনে করা হয়। এমন ঘটনাকে ধর্ষণ হিসেবে ধরা হতে পারে। তবে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারার অধীনে এটা ধর্ষণের অপরাধ হবে।
কিন্তু যদি দুজনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকে অথবা দীর্ঘ সময় তারা এমন সম্পর্ক চালিয়ে যান তাহলে সেটাকে দেখা হয় স্বেচ্ছায় সম্পর্ক স্থাপন হিসেবে। এর ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে এর আগে ট্রায়াল কোর্ট খালাস দিয়েছিলেন। হাইকোর্টও তা সমুন্নত রাখেন। অর্থাৎ ওই যুবককে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে খালাস দেন আদালত।
সম্প্রতি ‘ব্রেকআপ হলেই মেয়েরা বলে ধর্ষণ’ ভারতে নারী কমিশনের এমন বক্তব্য নিয়ে তুমুল সমালোচনার জন্ম নেয়। এক সাংবাদিক সম্মেলনে ছত্তীশগড়ের নারী কমিশনের প্রধান কিরন্ময়ী নায়েক বলেছিলেন, ‘বেশিরভাগ সময়ই মেয়েদের সম্মতিতেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে। লিভ-ইন সম্পর্কেও থাকে। তারপর সম্পর্ক ভেঙে গেলেও ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করে মেয়েরা। নারী কমিশন এমন বহু গার্হস্থ্য সমস্যার সমাধান করে থাকে। আমরা অনেক সময় মেয়ে ও ছেলেদের বকাবকিও করি। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি।’ এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার জন্ম নিলেও দিল্লির হাইকোর্টের রায় সব সমালোচনার জবাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বিয়ের পরে নতুন করে প্রতিবার যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নারীর অনুমতি নিতে হবে এটা ভ্রান্ত ও মুর্খতাপ্রসূত বক্তব্য হিসেবে দেখছেন আলেম সমাজ। তারা বলছেন, বিয়েতে পুরুষের পক্ষ থেকে নারীকে ইজাব বা প্রস্তাব করার পর নারীর পক্ষ থেকে কবুল বলা হয় সেসময়ই নারীর উপর পুরুষের যৌন সম্পর্কের স্থায়ী সম্মতি আদায় হয়। এর প্রমাণ হিসেবে শুধু একা নারী নয় নারীর অভিভাবক ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাক্ষীও রাখা হয় বিবাহে।
বিবাহে কবুল বলা বা সম্মতি প্রদানের পর একান্ত শারীরিক সমস্যা ছাড়া পুরুষের যৌন সম্পর্কের আগ্রহে সাড়া না দেয়ার সুযোগ থাকে না। ইসলামের বিধান অনুযায়ী পুরুষ এক্ষেত্রে স্ত্রীকে বাধ্য করতে পারে। পুরুষরা যে সবসময় বাধ্য করে এমনটাও না। এটা মূলত পারস্পরিকভাবেই ঘটে থাকে। এক্ষেত্রে গুরুতর কারণ ছাড়া স্ত্রী সম্মত না হলে ইসলামের বিধান অনুযায়ী পুরুষেরই বরং মামলা করার অধিকার আছে। স্ত্রী যদি তার স্বামীর এই চাওয়াকে অস্বীকার করে তাহলে আসলে তাদের মাঝে আর বিয়েই বহাল থাকে না।
এদিকে ভারতীয় হাইকোর্টের এই রায় বৈবাহিক ধর্ষণের দাবিকারীদের উচিৎ জবাব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশব্যাপী ধর্ষণের মহামারি ও ধর্ষণরোধে কঠোর আইন পাশ হওয়ার প্রেক্ষিতে একটি ধর্মবিদ্বেষী মহল উঠে পড়ে লেগেছে স্বামীর ইচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ককে জোরজবরদস্তি বা ধর্ষণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। বাংলাদেশের হাই কোর্ট এর দাবিতে লিগ্যাল নোটিশ দেয়ার মত ন্যাক্কারজনক ঘটনাও ঘটেছে। বৈবাহিক ধর্ষণ যেমন যুুক্তিহীন তেমনি বিবাহের পূর্বে প্রেম ভালোবাসার নামে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলাও নিষিদ্ধ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো যে, কোন ব্যাপারে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের কোনো কথা বলতে দেখা যায়নি এমনকি এর প্রতিবাদও করেননি। অথচ এগুলো মারাত্মকভাবে একটি ইসলামীবিদ্বেষী ও সমাজবিধ্বংসী ব্যাপার।
উল্লেখ্য, এর আগেও শিক্ষিত ও প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সংসর্গকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা যাবে না বলে রায় ঘোষনা করে বম্বে হাইকোর্ট। ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি টিএনএনের খবরে বলা হয়, প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে এক নারী মামলা করেন। ২১ বছর বয়সী এক যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেন তাঁর সাবেক প্রেমিকা। ওই প্রেমিকার অভিযোগ, যুবক তাঁকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এরপর তাঁরা একে অপরের ঘনিষ্ঠ হন। কিন্তু হঠাৎ তাঁদের সম্পর্কে চিড় ধরে। একপর্যায়ে ওই সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপরই প্রেমিকা ওই যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। এ নিয়ে মামলার রায়ে মুম্বাই হাইকোর্ট বলেন, শিক্ষিত ও প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সংসর্গকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা যাবে না।
আরও পড়ুন: বৈবাহিক ধর্ষণ বলে কিছু নেই