অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার গৃহপালিত বিচারপতি দিয়ে গঠিত কথিত আন্তর্জাতি অপরাধ ট্রাইব্যুনানের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় অতীতের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বহাল রেখেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। শেখ হাসিনার প্রতি একজন কমিটেড বিচারপতি হিসেবে সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আইন কানুনের কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করে এবং নীতিনৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে পূর্বসুরীদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
জামায়াত নেতাদের অপরাধের মাত্রা কতটুকু? হত্যা-ধর্ষণ আর অগ্নিসংযোগের সঙ্গে কি তারা আসলেই জড়িত ছিল? ঘটনার সময় তারা কি আসলেই ঘটনাস্থলে ছিলেন? যারা সাক্ষ্য দিচ্ছেন তারা কি আসলেই তখন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছেন? ৪০ বছর আগে ছোট সময় দেখা ঘটনার বিবরণ এমন সবিস্তারে দিচ্ছে কিভাবে? সাক্ষীরা কি এসব নিজ থেকে বলছেন নাকি কেউ শিখিয়ে দিয়েছে? এই ৫-১০ জন সাক্ষী ছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ জামায়াত নেতাদের বিষয়ে কি বলে? তারা সত্যিকার অর্থেই অপরাধ করে থাকলে স্বাধীনতার পর ৪০ বছরের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের পরিবারের লোকজন কোনো মামলা করেনি কেন? জামায়াত নেতারা যুদ্ধাপরাধী হলে ৯৬ সালের নির্বাচনের আগে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলন করেছিল কেন? ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেনি কেন? বিএনপির সঙ্গে জোট করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার পরই কেন মামলা করা হল? তাহলে এর পেছনে কি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে?
এসব প্রশ্নে উত্তর খোঁজার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এটা করা বিচারপতিদের নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব। কিন্তু বাংলাদেশে এখন কিসের সংবিধান আর কিসের নৈতিকতা? এসব যাচাই-বাছাই করার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী কি নির্দেশনা দিয়েছেন সেটা আমল করতে বিচারপতিরা সর্বদা ব্যস্ত থাকেন। এখন সাক্ষী প্রমাণের চেয়ে সরকার প্রধানের নির্দেশনাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। রায় দেয়া হয় সেটার আলোকেই। আদালতে এখন সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নির্ধারণ হয় না আসামির মৃত্যুদণ্ড হবে নাকি যাবজ্জীবন হবে। গণভবনের নির্দেশ অনুযায়ী বিরোধীদলের নেতাদের সাজা প্রদান করা হয়।
নিরপরাধ কারো বিরুদ্ধে কোনো গুরুতর অভিযোগ উঠলে বা কোনো দুর্নীতি বা হত্যাকাণ্ডে জড়ানো হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আত্মপক্ষ সমর্থন করে নির্দোষ প্রমাণের জন্য আদালতের আশ্রয় নেয়। কিন্তু, বাংলাদেশের নিম্ন ও উচ্চ আদালত এখন এমন আজিব আদালতে পরিণত হয়েছে যেখানে নিরপরাধ ব্যক্তিরা অপরাধী হয়ে যাবজ্জীবন সাজা কিংবা মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে বেরিয়ে আসতে হয়। তাই সচেতন মহল বলে থাকেন,-বাংলাদেশের আদালত এখন নিরপরাধ মানুষকে অপরাধী বানানোর মেশিন।
দেখা গেছে, জামায়াতের নিরপরাধ শীর্ষনেতাদেরকে সরকার কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা-ভিত্তিহীন ও বায়ুবীয় অভিযোগ এনে মামলা করে। সরকারের এসব অভিযোগ সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে কথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও উচ্চ আদালত নিরপরাধ মানুষগুলোকে অপরাধী বানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধেও।এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকেও কথিত দুর্নীতির মামলায় অপরাধী বানিয়ে সাজা দিয়েছে।
উচ্চ আদালতের মেশিনে সর্বশেষ অপরাধী হয়ে বের হলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম।
জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে দেশের কোথাও কোনো মামলা ছিল না। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তার বিরুদ্ধে রংপুরের কেউই কখনো কোনো অভিযোগ তুলেনি। ২০১২ সালে যখন তিনি জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল হলেন তখনই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের গন্ধ খোঁজা শুরু করেন শেখ হাসিনা। একটা পর্যায়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে হত্যা-ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মিথ্যা ও বায়ুবীয় অভিযোগ আনা হয়। আর এসব বায়ুবীয় অভিযোগকে প্রমাণ করার জন্য ভাড়া করা হয় কথিত সাক্ষী। যারা ঘটনার সময় সংশ্লিষ্ট এলাকাতে ছিলেন না। এমনকি সাক্ষীদের কেউ কেউ ওই এলাকার বাসিন্দাও নয়।
দেখা গেছে, ৪ নং অভিযোগের ঘটনার তথাকথিত প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী রতন চন্দ্র দাস কারমাইকেল কলেজের পাচক ছিলেন মর্মে উল্লেখ করেছেন। তিনি ঐ সময়কার কলেজের প্রিন্সিপ্যালের নাম জানেন না, ছাত্রলীগের সভাপতি বা কোন নেতার নাম জানেন না। কিন্তু এ টি এম আজহারুল ইসলামের নাম তিনি মনে রেখেছেন । এসব কি কোনো পাগলেও বিশ্বাস করবে?
তারপর, সরকার পক্ষের আরেক বানানো সাক্ষী শোভা কর নিজেকে এ টি এম আজহারুল ইসলামের ক্লাসমেট বলে দাবি করেছেন। এ টি এম আজহারুল ইসলামের এসএসসি শিক্ষাবর্ষ ছিল ১৯৬৭-৬৮ সাল। আর শোভা করের শিক্ষাবর্ষ ছিল ১৯৭০-৭১। তাদের দাখিলকৃত ডকুমেন্টেই দেখা যায় যে, সাক্ষীর বক্তব্য দালিলিক ডকুমেন্ট দ্বারা প্রমাণিত হয় না। সর্বোচ্চ আদালত তো দূরের কথা এসব লোকের সাক্ষ্যতো গ্রাম্য আদালতেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
এরপর, ঝাড়ুয়ার বিলে ১২শ’লোককে গণহত্যা ও ২শ লোককে অপহরণের পরে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ অভিযোগের সাক্ষী মেছের উদ্দিন আব্দুর রহমান কেউই ১২/১৪ গ্রামের নন এবং তারা ভিকটিম পরিবারেরও কেউ নন! একজন দেখেছেন ৩ কিলোমিটার দূর থেকে, আরেক জন দেখেছেন দেড় কিলোমিটার দূর থেকে! এত বড় একটা জঘন্য ঘটনায় মাত্র ২জন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের অবস্থাই যখন এই তার পরে শোনা সাক্ষী তিনজনের বক্তব্য ধর্তব্যের মধ্যেই আসে না। উপরন্তু প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা যে এটিএম আজহারুল ইসলামকে নিশ্চিতভাবে দেখেছেন একথা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলেননি।
এসব বানানো সাক্ষী দিয়েই গণহত্যার মতো অভিযোগ প্রমাণ করেছে শেখ হাসিনার অনুগত বিচারপতিরা। আসলে বিচার হলো একটা রূপ দেখানো ঘটনা। রায় কি হবে সেটা গণভবন থেকে আগেই নির্ধারণ করে দেয়া আছে। সেটার আলোকেই বিচারপতিরা রায় দিচ্ছেন। শেখ হাসিনার এই আদালত থেকে কোনো নিরপরাধ মানুষের নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বেরিয়ে আসার সুযোগ নেই। নিরপরাধ মানুষের চরিত্রে কালিমা লেপন করতেই নিম্ন ও উচ্চআদালতে বসে আছেন বিচারপতি নামের মুজিববাহিনীর লোকজন।