অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ভেজাল খাবারকে নির্ভেজাল করতে এবার চরম মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। বাজারে থাকা ১৪টি ব্র্যান্ডের ১৮টি পাস্তুরিত দুধের নমুনা পরীক্ষা করে আশঙ্কাজনক কোনো কিছুই পায়নি বলে মঙ্গলবার আদালতে একটি ভুয়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত বছরের ১৭ মে ‘পাস্তুরিত দুধের ৭৫ শতাংশই নিরাপদ নয়’ মর্মে জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো নজরে আনা হলে এ বিষয়ে রিট আবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২০ মে রিটটি করেন আইনজীবী তানভির আহমেদ। এরপর হাইকোর্ট এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় বিএসটিআই। হাইকোর্টে সংস্থাটির জমা দেওয়া প্রতিবেদনে ওই ১৪ ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধে আশঙ্কাজনক কিছু নেই বলে জানানো হয়েছে। ব্র্যান্ডগুলো হলো-পুরা, আয়রান, আড়ং ডেইরি, ফার্ম ফ্রেশ মিল্ক, মো, মিল্ক ভিটা, আফতাব, আল্ট্রা, তানিয়া (২০০ গ্রাম ও ৫০০ গ্রাম), ইগলু, প্রাণ মিল্ক, ডেইরি ফ্রেশ, মিল্ক ফ্রেশ এবং কাউহেড পিওর মিল্ক।
অপরদিকে, একই দিনে বাজারে জনপ্রিয় পাস্তুরিত দুধ আড়ং, প্রাণ, মিল্কভিটা, ফার্মফ্রেশ, ইগলু, ইগলু চকলেট ও ইগলু ম্যাংগোতে অ্যান্টিবায়োটিক, ডিটার্জেন ও ফর্মালিন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের গবেষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের মূখ্য গবেষক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেছেন, দুধে এন্টিবায়টিকের উপস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগের। এছাড়া আমাদের পরীক্ষায় পাস্তুরিত দুধে ৭ টি নমুনার সব কটিতেই মানব চিকিৎসায় ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
পাস্তুরিত দুধ নিয়ে দুইটি সংস্থার দুই রকম প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর সাধারণ মানুষ শুধু ক্ষুব্দই হচ্ছেন না, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও প্রকাশ করছেন। কারণ, গ্রামাঞ্চলে গাভীর দুধ পাওয়া গেলেও শহরে একমাত্র পাস্তুরিত দুধই মানুষের ভরসা। আগেও একাধিকবার পরীক্ষার পর প্রমাণিত হয়েছে যে দুধে শিসা আছে। কিন্তু এন্টিবায়েটিকযুক্ত এই ভেজাল দুধকে নির্ভেজাল বানিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার ঘটনায় বিএসটিআইয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
আর দেখা গেছে, অনেক ভুয়া কোম্পানি আছে যেগুলোর গায়ে বিএসটিআইয়ের লোগো লাগানো আছে। বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিয়েই তারা বছরের পর বছর ভেজাল খাবার তৈরি করে মানুষকে খাওয়াচ্ছে।
এছাড়া, সাধারণ মানুষ মনে করছে, বাজারের কোনো ফলমূলে ফরমালিন পাওয়া যায়নি বলে মর্মে সোমবার আদালতে যে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে সেটিও ভুয়া। তারা বলছেন, বিএসটিআইয়ের দেয়া প্রতিবেদনেও ফরমালিন আছে।