‘দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী বিএনপির সঙ্গ ছাড়ছে জামায়াতে ইসলামী’ বলে যে গুঞ্জন উঠেছে, ওই দুই দলের কয়েক নেতার সঙ্গে কথা বলে তার কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি। গতকাল বুধবার দেশ রূপান্তরকে তারা জানান, গুঞ্জনের বিষয়টি সরকারের অপপ্রচার হতে পারে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামী জোটেই থাকছে। কারও কথায় কেউ কাউকে ছেড়ে যাবে না। কারণ, বহু ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সখ্য এখনো অটুট রয়েছে। ভবিষ্যতেও থাকবে।
‘জামায়াত কি বিএনপির সঙ্গ ছাড়ছে’ এমন প্রশ্নে ২০-দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটি সরকারের অপপ্রচার হতে পারে। এমন কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। জামায়াতের কোনো নেতা আমাকে এ বিষয়ে কিছু জানাননি। তা ছাড়া বিএনপির সঙ্গ ছাড়ার বিষয়ে জামায়াতের নেতারা কোনো বৈঠক করেছেন এমন খবরও আমার জানা নেই।’ তিনি বলেন, ‘২০-দলীয় জোটের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখি আমি নিজেই। কোনো সমস্যা, সুবিধা-অসুবিধা জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা আমাকেই প্রথমে জানান। সর্বশেষ ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীকে সর্বোচ্চ আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছে। ছাড় দেওয়ার বাইরে তাদের কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীও ছিলেন। এ নিয়েও জোটে কোনো বিভেদ হয়নি।’ বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘জামায়াতকে নিয়ে এত অ্যালার্জি থাকলে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে দিক। কিন্তু সরকার তো তা করছে না। বরং এটা নিয়ে রাজনীতি করছে।’
সম্প্রতি সংসদ অধিবেশনে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াত নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। তাই এ বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামীর এক প্রভাবশালী নেতা দেশ রূপান্তরকে জানান, বিএনপির সঙ্গ ছাড়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি জামায়াতে ইসলামী। তাদের বৈঠকে এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকার-সমর্থিত কেউ কেউ এমন সংবাদ প্রকাশ করছে। এ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদের সভাপতিত্বে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সভা হয়। সভায় বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ এই সরকারের অধীনে বিগত ১০ বছরে কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। সভায় বিএনপির সঙ্গ ছাড়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলেও জানান জামায়াতের প্রভাবশালী ওই নেতা। তিনি আরও বলেন, বহু ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সখ্য অটুট রয়েছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। ২০ দলীয় জোটে জামায়াতে ইসলামী ছিল, আছে, থাকবে। কারও কথায় কেউ কাউকে ছেড়ে যাবে না।
১৯৯৯ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোট মিলে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করা হয়। ২০০১ সালে ওই সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় যায়। তখন জামায়াতে ইসলামীর দুই নেতাকে মন্ত্রী করা হয়।
জামায়াত বিএনপির সঙ্গ ছাড়ছে কি না জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জোটের কোনো বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে গুঞ্জন আছে।’
জোটের সমন্বয়ক ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। তার দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম দেশ রূপান্তরকে জানান, জামায়াত বিএনপির সঙ্গ ছাড়ছে এমন কোনো খবর তার জানা নেই। এ বিষয়ে সম্প্রতি তার দলের চেয়ারম্যানের সংবাদ সম্মেলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন তিনি। শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তাদের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে করেছিলেন চেয়ারম্যান অলি আহমদ। সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত নিয়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক সমালোচনার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে পাল্টা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেছিলেন, জামায়াতের নেতাকর্মীরা কি এ দেশের নাগরিক নন? তারা কি রাজনীতি করার অধিকার রাখেন না? তারা যদি এ দেশের নাগরিক হয়ে থাকেন, তাহলে তাদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনা কেন থাকবে? সংসদে সরকারের শুধু দুই-তৃতীয়াংশ এমপি নয়, শতভাগ এমপি রয়েছে। তারা আইন করে বলে দিক, জামায়াতের নেতাকর্মীরা এ দেশের নাগরিক নয়। তাহলেই এই সমালোচনা থাকবে না।
সূত্র: দেশ রূপান্তর