অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ১০ দিন বাকী। ক্ষমতা কি নিজেদের হাতেই থাকবে নাকি চলে যাবে এনিয়ে এখন সার্বক্ষণিক চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের নীতিনির্ধারকরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোটের বিশ্লেষণে তারা কোনো ইতিবাচক দিক পাচ্ছেন না। এনিয়ে এখন শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা হাইটেনশনে দিন কাটাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহের শুরুতে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে লম্বা সময় নিয়ে গণভবনে একটি বৈঠক করেছেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে ডিজিএফআই, এনএসআই, এসবি, সিআইডিসহ আরও কয়েকটি বেসরকরি সংস্থার সর্বশেষ করা জরিপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রতিটি সংস্থার জরিপের ফলাফলই আওয়ামী লীগের বিপক্ষে গেছে। দেশের কোথাও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই।
একটি সংস্থার জরিপে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যদি সরে দাঁড়ায় তাহলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা প্রচারণাতেই বের হতে পারবে না। বের হলেই তারা জনরোষের শিকার হবে।
আরেকটি সংস্থার জরিপে বলা হয়েছে, সারাদেশে মাত্র ২৫ জন প্রার্থী আছেন যারা যেকোনো পরিবেশেই বিজয়ী হতে পারবেন। এই জরিপে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় আসতে হলে ভিন্নভাবেই নৌকার প্রার্থীদেরকে বিজয়ী করে আনতে হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপি ও জামায়াত শিবির নেতাকর্মীরা একটু সুযোগ পেলেই মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর কেন্দ্র দখল, জালভোট ও ব্যালট ছিনতাই ঠেকাতে ভোটের দিন তারা শক্ত অবস্থানে থাকবে। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে তারা বড় ধরণের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। এসব নিয়ে এখন চরম সংকটে আছেন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
সূত্রটি বলছে, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্যরা শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের ওপর প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারণ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার জরিপের সঙ্গে জয়ের জরিপের ফলাফল অনেক গরমিল। একজন কেন্দ্রীয় নেতা শেখ হাসিনাকে বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সারাদেশের সার্বিক চিত্র ভাল না। কিন্তু আপনার ছেলে আমেরিকায় বসে কয়দিন পর পর জরিপ করে বলছেন যে, নৌকা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জরিপতো বলছে ভিন্ন কথা। এনিয়ে আমাদেরকে সঠিকভাবে চিন্তা ভাবনা করতে হবে। অন্যথায় আমাদেরকে সামনের দিনগুলোতে চরম খেসারত দিতে হবে।
এদিকে সরকারের সামনে এখন নতুন আরেক সংকট এসে উপস্থিত হয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার থেকে শুরু করে ইসির সব সদস্য ও সচিবরা সরকারের নির্দেশনার আলোকে সব কিছু করলেও জ্যেষ্ঠ কমিশনার মাহবুব তালুকদার হাটছেন ভিন্ন পথে। মাহবুব তালুকদারের কারণে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনাই ভেস্তে যাচ্ছে বলে মনে করছে সরকার। আর নির্বাচন কমিশন যে সরকারের নির্দেশেই সব কিছু করছে সেটাও এখন মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। আর মাহবুব তালুকদার সম্প্রতি বিরোধী জোটের প্রার্থীদের প্রচারণায় হামলা-ভাঙচুরের বিষয়ে কিছু অতি সত্য কথা বলায় তার ওপর শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারা চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
জানা গেছে, এমন অবস্থায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থাকবে কি থাকবে না সেটা নিয়ে ভাবছে। তবে, দলের অধিকাংশ নেতাই সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এনিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়েছে বলেও জানা গেছে।