অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফিরে গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা নাকি তাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। সংবাদটি অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে থাকাকালীনই পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন- বিশ্ব নেতারা শেখ হাসিনাকে আবারো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। এর মধ্যে কেউ কেউ নাকি আবার শেখ হাসিনাকে অগ্রীম অভিনন্দনও জানিয়েছেন। বাংলাদেশের বেশ কিছু মিডিয়া এই সংবাদ ফলাও করে প্রচার করেছে।
প্রধানমন্ত্রী হয়তো ভাবছেন যে, পররাষ্ট্র সচিবের কথা দেশের মানুষ বিশ্বাস করতে নাও পারেন। তাই তিনি নিজেই মুখ দিয়ে কথাটা আবার উচ্চারণ করলেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে শুধু সমালোচনাই হচ্ছে না, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে এনিয়ে হাসাহাসিও করতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে এখন ঠাট্টা মশকরাও করছেন।
সচেতন মানুষের মনে যে প্রশ্নটি বড় করে দেখা দিয়েছে সেটা হলো, সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতাদের কথা বললেও নির্দিষ্ট করে কোনো রাষ্ট্র প্রধানের নাম বলতে পারেন নি। সবার মনে এখন প্রশ্ন- কোন সেই বিশ্ব নেতা যে নাকি শেখ হাসিনাকে আবারো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ। আর কিছু দিন আগে ঢাকাস্থ দেশটির রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের গাড়িতে হামলার পর বাংলাদেশ সরকারের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রচণ্ডভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দাতাগোষ্ঠী ইউরোপীয় ইউনিয়নও। তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশে আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচন করতে দেবে না।
তারপর চীন-রাশিয়ার সঙ্গেও বর্তমান সরকারের সম্পর্ক এখন আর আগের মতো নেই। বাহ্যিকভাবে সরকারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ভাল দেখালেও আগামীতে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেবে না চীন। জানা গেছে, সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের একাধিক বৈঠক হয়েছে। চীনের কর্মকর্তারা বিএনপি নেতাদেরকে আশ্বস্তও করেছে।
এরপর আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় বন্ধু হিসেবে পরিচিত সেই ভারতও এখন পর্যন্ত আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগকে কিছুই বলেনি। ভারত সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আমরা তোমাদেরকে চাই, তবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে তোমাদেরকে আবার ক্ষমতায় আসতে হবে। ৫ জানুয়ারির মতো আর কোনো একতরফা নির্বাচনে আমরা সহযোগিতা করতে পারবো না।
বাংলাদেশের ক্ষমতার চাবি কাঠি নিয়ে যারা নাড়াছড়া করে সেই যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারত আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর অন্যদেশগুলো কোন দল ক্ষমতা আসবে বা থাকবে সেটা নিয়ে তারা চিন্তা করে না। যে দলই ক্ষমতায় আসুক তারা সেই সরকারের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রেখে ব্যবসা করে।
জানা গেছে, জাতিসংঘ অধিবেশনের সময় কয়েকটি এনজিও সংস্থার লোকজন শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তার খুব প্রশংসা করেছেন। তারা কোনো রাষ্ট্রের কর্তা ব্যক্তি নয়। যার কারণে শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতা শব্দটা উচ্চারণ করলেও কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের নাম বলতে পারেন নি।