অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের চলমান বন্দুকযুদ্ধের নামে মানুষ হত্যার ব্যাপারে সরগরম হয়ে উঠছে একের পর এক দেশী বিদেশী মিডিয়া। এবার এই তালিকায় যুক্ত হলো বৃটিশ জনপ্রিয় পত্রিকা গার্ডিয়ান। কক্সবাজারের পৌর কাউন্সিলর একরামকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যার একটি অডিও রিপোর্ট নিয়ে তারা গতকাল ৬ জুন একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। “Audio clip ‘captures Bangladeshi police killing drugs suspect’ Death of Akramul Haque raises fresh fears over extrajudicial killings in drugs crackdown” শিরোনামের এই রিপোর্টে বলা হয় সম্প্রতি একটি টেলিফোনিক কথোপকথোন ফাঁস হয়েছে যা বাংলাদেশ সরকারের চলমান মাদক বিরোধী অভিযানকে নতুন করে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
কক্সবাজারের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক গত ২৭মে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় বলে জানায় র্যাব। বাংলাদেশের এই এলিট ফোর্সটি একরামকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করে এবং তার কাছ থেকে দুটি অস্ত্র এবং কয়েক হাজার পিস ইয়াবাও উদ্ধার করা হয়েছে।
এই ঘটনার ৪ দিন পর নিহত একরামের স্ত্রী আয়েশা কক্সবাজার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার দিন রাতে তার স্বামীর সাথে মোবাইল কথোপকথোনের মোট ৪টি ক্লিপ ফাঁস করেন যাতে বোঝা যায় বাস্তব ঘটনা র্যাবের ইতোপূর্বের দাবীর তুলনায় পুরোপুরি আলাদা।
প্রথম তিনটি ক্লিপে নিহত একরাম তার মেয়েকে জানান, তাকে একটু জরুরী কাজে স্থানীয় এক সরকারী কর্মকর্তার কাছে যেতে হচ্ছে। ‘আমি গাড়িতে আছি, এখন বেশী কথা বলতে পারবোনা।’ এটাই ছিল মেয়েকে বাবার শেষ কথা।
শেষ কলটি একরামকে দিয়েছিলেন আয়েশা নিজেই। কিন্তু এবার কিছু লোকজনের এলোমেলো কথাই কেবল শোনা যায়। এর মধ্যে একরামের কন্ঠ একবার শোনা যায়, তিনি বলছিলেন, ‘আমি এগুলোর সাথে জড়িত নই।’ এর পরপরই গুলির শব্দ। তারপর একটা মানুষের গোঙ্গানি, এরপর আবার একটা গুলি। আয়েশা আর তার মেয়েরা গুলির শব্দ শুনেই ফোনের অপর প্রান্তে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে দেন।
আয়েশা ও তার মেয়েরা যখন ফোনে চিৎকার করছিল তখন অপরপ্রান্তে তারা পুলিশের গাড়ির সাইরেন শুনতে পাচ্ছিলো। একজন বলে উঠে, বুলেটগুলো নিয়ে নাও। আরেকজন প্রশ্ন করে লাশের হাত দুটোকে কি বাঁধা হয়েছে?
আয়েশা সংবাদ সম্মেলনে এই ক্লিপটি সাংবাদিকদেরকে শোনান এবং দাবী করেন তার স্বামীকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। আয়েশার এই সংবাদ সম্মেলন এবং অডিও ক্লিপটি পরের দিন বাংলাদেশের প্রধানতম ইংরেজী জাতীয় দৈনিক ডেইলী স্টারের প্রথম পাতায় ফলাও করে ছাপা হয়। এর পর থেকে ১৮ ঘন্টা এই পত্রিকাটির অনলাইন ওয়েবসাইটটা বন্ধ করে রাখে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ।
এরপরই আবার এই মাদক বিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধের নামে মানুষ হত্যার বিষয়টি সামনে চলে আসে। মাত্র ৩ সপ্তাহে এই অভিযানে এই পর্যন্ত ১৩১ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ অবশ্য এইসব হত্যাকেই বন্দুকযুদ্ধ হিসেবে দাবী করে এবং নিহতের কাছে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে বলেও জানায়।
তবে বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য একেএম ওয়াহিদুজ্জামান অভিযোগ করেন কথিত এই মাদক বিরোধী অভিযানে এই পর্যন্ত তাদের দলের ১৫ জন নেতাকর্মীকে মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এত বড় অভিযানে দুই একটা ভুল হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। দেশটির মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রেজাউল হক অবশ্য এই সকল হত্যাকান্ডের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন সকল কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার তদন্ত দাবী করেছে।
এই বিষয়ে র্যাবের মতামত জানার জন্য বেশ কয়েকবার তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও সংস্থাটির পক্ষ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।