অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
পশ্চিমবঙ্গে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমবর্তনে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে ভারত গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সমাবর্তনের আড়ালে যে শেখ হাসিনার ভারত সফরের ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ সেটা ধারনা করেছিলেন। আর শেখ হাসিনা ভারত থেকে দেশে ফেরার পরই মানুষের ধারণাটা আরও স্পষ্ট হয়ে গেছে।
এমনকি, শেখ হাসিনা কলকাতা থাকতেই ভারতের প্রভাবশালী বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজার এনিয়ে একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে মোদির কাছে শেখ হাসিনার করা দাবিগুলো তুলে ধরা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিট দিয়েছে, পশ্চিমাঞ্চলের সন্ত্রাস দমন করেছে, প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশ ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। এখন ভারতের প্রতিদান দেয়ার পালা। আর সেই প্রতিদানটা হলো আগামী নির্বাচনে আবারো ক্ষমতায় আসার জন্য আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়া।
আনন্দবাজারের এই প্রতিবেদন নিয়ে এখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনার এই আবদার রক্ষা করবেন কিনা রাজনীতিক বিশ্লেষকরাও এনিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার দাবির বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি কিছুই বলেনি। তিনি শুধু শুনেছেন। মোদি শেখ হাসিনার উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন, তবে শেখ হাসিনার দাবির বিষয়ে কোনো মুখ খুলেন নি।
তাদের মতে, আগামী নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে ভারতের সহযোগিতা চাইলেও আপাতত ভারতের পক্ষে শেখ হাসিনার এই দাবি পূরণ করা সম্ভব হবে না।
কারণ, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারতের একতরফা সমর্থনে ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ। প্রধান বিরোধী দল ওই নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় দেশি-বিদেশি সকল মহলের কাছেই একতরফা এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এমনকি একটি একতরফা নির্বাচনে সহযোগিতা করায় বাংলাদেশের সাধারণ জনগণও ভারতবিরোধী হয়ে উঠেছে। ভারতের সম্পর্কটা বর্তমানে শুধুই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়া দেশের মানুষ এখন ভারত বিরোধী।
তারপর, একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ বিগত সাড়ে চার বছরে যা করেছে সবই জনস্বার্থ বিরোধী। বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ও ব্যাংক লুটের ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলকেও নাড়া দিয়েছে। এছাড়া স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে এত মানবাধিকার কখনো লঙ্ঘন হয়নি, বিগত সাড়ে চার বছরে যা হয়েছে। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের খুন-হত্যা, ধর্ষণ, চাদাবাজি, মানুষের বাড়িঘর দখল ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন-নীপিড়নের কারণে আওয়ামী লীগ এখন পুরোপুরি জনবিচ্ছিন্ন।
মুখে উন্নয়নের কথা বললেও আসলে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে। ক্ষমতা হাত ছাড়া হলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অস্তিত্ব থাকবে না।
এ অবস্থায় জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের দায়-দায়িত্ব ভারত আর নেবে না। আগামীতে ভারত বাংলাদেশে এমন একটি দলকে ক্ষমতায় আনতে চাচ্ছে যাদের প্রতি মানুষের সমর্থন আছে।
এছাড়া, বাংলাদেশ ইদানিং চীনমুখি হওয়ার কারণেও ভারত ক্ষুব্ধ। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারাও সেটা বুঝতে পেরেছে। যার কারণে নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা ঘন ঘন ভারতে যাচ্ছেন।
আর কংগ্রেসের মতো নরেন্দ্র মোদি আর এমন ভুল করবেন না বলেও মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।