অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ভোটগ্রহণের আর মাত্র ৮ দিন বাকী। পুরোদমে চলছিল প্রচার-প্রচারণা। পথসভা, ঘরোয়া বৈঠক, উঠান বৈঠক, গণসংযোগ, বাড়ি-বাড়ি, ঘরে-ঘরে মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের পদচারণায় মুখরিত ছিল গাজীপুর মহানগরীর প্রতিটি এলাকা। সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে উঠেছিল গাজীপুরবাসী। কিন্তু, হঠাৎ করেই হাইকোর্টের একটি আদেশে পাল্টে যায় সব কিছু। যাকে বলে হরিষে বিষাদ।
সীমানা জটিলতার কারণে রোববার বিকেলে গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দেন হাইকোর্ট। যে সমস্যার কারণে হাইকোর্ট নির্বাচন স্থগিত করেছেন সেটা অবশ্য পূর্ব থেকেই চলে আসছিল। আর নির্বাচন স্থগিত চেয়ে রিটও করেছেন আওয়ামী লীগেরই এক নেতা।
তবে অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, সীমানা জটিলতা একটি অজুহাত মাত্র। সরকার পরিকল্পিতভাবেই এখানে নিজেদের লোক দিয়ে রিট করিয়ে নির্বাচন স্থগিত করেছে।
জানা গেছে, গাজীপুরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জড়িত আওয়ামী লীগ। আজমত উল্লাহর ইচ্ছে ছিল নির্বাচন করার। কিন্তু, দল প্রার্থী দিয়েছে জাহাঙ্গীরকে। আজমত উল্লাহ প্রকাশ্যে বিরোধীতা না করলেও ভেতরে ভেতরে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তার অনেক দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আজমত উল্লাহর সমর্থকরাও জাহাঙ্গীরের জন্য তেমনভাবে কাজ করছে না।
তারপর, এমপি রাসেল ও মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের কাছ থেকে যতটুকু সহযোগিতা পাওয়ার কথা ছিল তার অর্ধেকও পাচ্ছেন না জাহাঙ্গীর। তাদের কর্মী-সমর্থকরা ঠিকভাবে জাহাঙ্গীরের পক্ষে কাজ করছে না। ভোটের দিন কাছাকাছি চলে আসলেও এখন পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা জমাতে পারেন নি জাহাঙ্গীর। এসব নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। আওয়ামী লীগের বড় একটি জাহাঙ্গীরকে ভোট দেবে না বলেও মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
অপরদিকে, ২০ দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসানুদ্দিন সরকার দলীয় কর্মী-সমর্থকসহ সাধারণ জনগণকে নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো গাজীপুরে বিএনপির কোনো অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। নেতাকর্মীরা স্বতস্ফূর্তভাবেই হাসানুদ্দিন সরকারের জন্য কাজ করছে।
এরপর, বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে আছে জামায়াত-শিবিরসহ জোটের অন্যান্য দলগুলোও। আর গাজীপুরে জামায়াত-শিবিরের একটা শক্ত অবস্থান রয়েছে । জামায়াতের শুধু তালিকাভূক্ত ভোটারই আছে ৫০ হাজারের বেশি। এছাড়া জামায়াত-শিবিরের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার কারণে পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টে গেছে।
সব মিলিয়ে গাজীপুরের নির্বাচনী পরিবেশ এখন সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের প্রতিকূলে। গতবারের মতো এবারও বিশাল ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থী পরাজিত হবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। আর জোর করেও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফলাফল দখলে নেয়া সম্ভব নয়। কারণ, গতবারও আওয়ামী লীগ অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি।
এছাড়া, ঢাকার নিকটবর্তী সিটিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয় তাহলে সরকারের জন্য এটা বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এসব চিন্তা করেই সীমানা জটিলতাকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে নির্বাচনটি স্থগিত করার ব্যবস্থা করেছে সরকার।