অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
২০০০ সালের পর থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে আক্রমনাত্মক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, ইসলামোফোবিয়া বা ইসলাম প্রসংগে পশ্চিমাদের ভীতি যেভাবে বেড়েছিল তা বর্তমান সময়ে এসে কিছুটা কমেছে কিন্তু সার্বিকভাবে মুসলমানদের অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। মুসলমানদের মর্যাদা কমেছে এবং তাদের মধ্যে নানা ধরনের সংকট বিস্তারলাভ করেছে। এমন তথ্যই বেরিয়ে এসেছে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বৃহত্তর সংস্থা অর্গানেইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি) এর একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে।
সম্প্রতি ইসলামোফোবিয়া অবজারভেটরী রিপোর্ট এর একাদশতম সংস্করন প্রকাশ করেছে ওআইসি যাতে দেখা যাচ্ছে যে ইসলামোফোবিয়ার হার আগের তুলনায় কিছুটা হলেও কমেছে।
মূলত এই প্রতিবেদনের এই ফলাফলটি নির্নয় করা হয়েছে ইসলামোফোবিয়ার মোট ঘটনাবলী গননা করে। তাতে দেখা যাচ্ছে আগের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে ইসলামোফোবিয়ার কারনে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে ২০১৭ সালের প্রথম ৩ মাসে সেরকম ঘটনার সংখ্যা অনেকটাই কমে এসেছে।
এই প্রতিবেদনের কিছু অংশ সম্প্রতি তুরস্কের প্রসিদ্ধ দৈনিক সাবাহতেও প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পরিস্থিতিকে পর্যবেক্ষন করে এই প্রতিবেদনটি তৈরী করা হয়েছে যা আগামীকাল থেকে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ওআইসি রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামোপোবিয়া, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমুলক আচরনের মাত্রা যুক্তরাষ্ট্রে এবং ইউরোপে কমেছে। আগে এই দুই অঞ্চলে এই ধরনের ঘটনা অনেক বেশী ঘটতো। তবে সার্বিকভাবে মুসলমানরা এখনো সেখানে ভাল নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসলামোফোবিয়ার হার কমার কিছু কারনও আছে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদী নীতিমালার ব্যর্থতা। মুলত ট্রাম্পের মুসলমান বিরোধী কট্টর অবস্থানকে তার সংগী সাথীরাও ভালভাবে নেয়নি। ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত নিয়মিতভাবেই তার প্রশাসন ও মন্ত্রীসভার বেশ কয়েকজন শীর্ষ ব্যক্তিত্ব পদত্যাগ করেছেন। এই পদত্যাগগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের উপর এবং ট্রাম্পের কট্টর নীতির প্রতি তাদের অনাস্থা এবং অসন্তোষেরই ইংগিতই বহন করে। ট্রাম্প সরকারের এহেন ব্যর্থতা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে তার অহেতুক কড়াকড়ি ও অন্যায় আচরনে হীতে বিপরীত হয়ে বরং যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ভেতরে ইসলামের ব্যপারে বাড়তি সহানুভুতি সৃষ্টি করেছে।
দ্বিতীয় কারনটি হলো মুসলমান শরনার্থীদের ব্যপারে ইউরোপের ইতিবাচক অবস্থান। ইউরোপ নানা সময়ে শরনার্থীদের আশ্রয় দিতে অস্বীকার করলেও প্রথমদিকে জার্মানী এবং পরবর্তীতে আরও বেশ কিছু রাষ্ট্র মুসলমান শরনার্থীদেরকে আশ্রয় দেয়। সমাজে মুসলমানদের এহেন অন্তর্ভুক্তি এবং ইতিবাচক অবদানও ইউরোপে মুসলমানদের ইতিবাচক মুল্যায়ন নিশ্চিত করেছে।
তাছাড়া ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিগত বছরগুলোতে যে নির্বাচন হয়েছে তাতে কট্টর ডানপন্থী দলগুলোর ভরাডুবি হয়েছে। এই দলগুলো সাধারনত জাতীয়তাবাদী ও অভিবাসনবিরোধী এমনকি মুসলমান বিরোধীও হয়ে থাকে। কিন্তু সর্বশেষ নির্বাচনে জনগন তাদেরকে প্রত্যাখান করেছে।
আরেকটি কাজও ইত্যবসরে ইউরোপ ও আমেরিকায় হয়েছে যা ইসলামের ব্যপারে সাধারন মানুষের ভয় কাটাতে সাহায্য করেছে। আর তাহলো বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে আন্তধর্মীয় সংলাপ। স্থানীয় মুসলিম সংগঠনগুলো বিগত বছরগুলোতে এই ধরনের বেশ কিছু প্রোগ্রাম করেছে। এই আয়োজনগুলো বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষগুলো কাছাকাছি আসার এবং একে অপরকে জানার সুযোগ পায়। একইভাবে অন্য ধর্মের প্রতি পরস্পরের সম্মান ও সহিষ্ণুতাও বৃদ্ধি পায়।
ওআইসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে ইসলামের ব্যপারে যে ভয়গুলো কাজ করে সেগুলো আসলে ঠিক ইসলাম প্রসংগে নয় বরং মুসলমানদের নানা ধর্মীয় পোশাকের ব্যপারে। বিশেষ করে বোরকা, হিজাব এবং নেকাবের ব্যপারেই পশ্চিমাদের ভয়টা বেশী।
তবে প্রতিবেদনে এটাও বলা হয় যে, পশ্চিমা দেশগুলোর সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন অনেক মুসলমানই কাজ করছে এবং তাদের ইতিবাচক কার্যক্রম, আচার আচরন, আবেগ ও উদ্যোগের কারনে অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ইসলাম সম্বন্ধে অমুসলিমদের ধারনা ও বিশ্বাসও ক্রমশও ইতিবাচক রূপ নিচ্ছে।
তবে এরপরও বিশ্বজুড়ে ইসলামোফোবিয়ার যে মাত্রা তা এখনও উদ্বেগজনক উল্লেখ করে প্রতিবেদনটির শেষে ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে আরও বেশী সক্রিয় হয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাল কিছু উদ্যেগ গ্রহন করার সুপারিশ করা হয়।
কেননা সম্মিলিত ভুমিকা পালন করার মাধ্যমেই কেবল ইসলাম সম্পর্কে ভীতি হ্রাস করে সহিষ্ণুতা ও সহনশীলতার মধ্যদিয়ে শান্তিপূর্নভাবে সমাজে বাস করা সম্ভব বলে প্রতিবেদনে অভিমত ব্যক্ত করা হয়।