অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
শীঘ্রই ঘোষিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি। কেন্দ্রীয় কমিটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ইতিমধ্যে কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে কেন্দ্র ও স্থানীয় নেতার কাছে লবিং করছেন পদপ্রত্যাশীরা। পদপ্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান ও ছাত্রলীগকর্মী তাপস সরকার হত্যা মামলার আসামী। রয়েছে গ্রুপিং টেন্ডারবাজি ছিনতাই ও ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ। প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন অছাত্র। রয়েছেন ছাত্রলীগ থেকে আজীবন বহিস্কৃতরাও।
যদিও অভিযুক্তদের কমিটিতে স্থান দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। একই কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থানীয় কর্ণধার নগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন এবং আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। কমিটি নিয়ে নগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন বলেন, আমি ইতিমধ্যেই চারজনের নাম দিয়েছি। যাচাই বাছাই করে কমিটি দিবে কেন্দ্রীয় সংসদ।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই এবং যারা বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদেরকেই বাছাই করা হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ও রানিং ছাত্রদেরকেই প্রাধান্য দেয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’টি গ্রুপ রয়েছে। এদের মধ্যে একটি নগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন এর অনুসারী। অন্যটি আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এর অনুসারী। ইতিমধ্যেই কমিটির এ দু’টি পদ পেতে দু’টি গ্রুপ থেকে ১৪ জন লবিং শুরু করেছেন। এদের মধ্যে সভাপতি পদে জামান নূর, এনামুল হক আরাফাত, এইচ এম তারিকুল ইসলাম, সুলতান সায়েম, রিমন, ফজলে রাব্বী সুজন, জাহেদ আওয়াল, ফারুক হোসেন এবং মুনতাসির মুন ইতিমধ্যেই লবিং করেছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে ইকবাল হোসেন টিপু, মিজানুর রহমান বিপুল, ইমাম উদ্দিন ফয়সাল ফারভেজ, রকিবুল হাসান দিনার, টিপু চৌধুরী ও আবু তোরাব পরশের কথা বেশী শোনা যাচ্ছে।
সভাপতি পদপ্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ: এদের মধ্যে সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী সুজন আবারো প্রার্থী হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন সবগুলো টেন্ডারে ২ শতাংশ করে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া ২০১০ সালে একটি অস্ত্র মামলার আসামি তিনি। যার কারণে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহকারী পরিচালক পদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও যোগ দিতে পারেননি। সুজনের আরেক প্রার্থী মুনতাসির মুন। মুন বিশ্ববিদ্যালয় ‘একাকার’ গ্রুপের নেতা ছিলেন। সম্প্রতি গ্রুপ পরিবর্তন করে ‘এ’ গ্রুপ থেকে সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন।
একই পদ প্রত্যাশী সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচ এম তারেকুল ইসলামও রয়েছেন আলোচনায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার ছাত্রত্ব শেষ হয় ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসেই। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজুল হায়দার রোটনের মাধ্যমে তিনি লবিং করছেন বলে জানা গেছে। এনামুল হক আরাফাত গত কমিটির সহ সভাপতি যিনি ইতিহাস বিভাগের ছাত্র। তিনি মহিউদ্দিন ব্লকের বৃহত্তম ‘সিএফসি’ গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। রিমন চার বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপ আউট হয়েছেন।
তাপস হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি সাবেক অর্থ সম্পাদক এস এম জাহেদুল আউয়ালও পদটি পেতে মরিয়া। তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি জালিয়াতি চক্রের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন কড়া নজরদারিতে ছিলেন তিনি। তবে অভিযোগের বিষয়ে তিনি অস্বীকার করে আসছিলেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন জেমস এ পদের প্রত্যাশী। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় হল থেকে ল্যাপটপ চুরির অভিযোগ রয়েছে। তবে সে বিষয়ে তিনি অস্বীকার করে বলেন, “এটা পুরোটাই মিথ্যা। আমাকে হেয় করার জন্য একটি পক্ষ এসব কথা রটিয়েছিল।”
এদিকে ১/১১ এর এক রাজনৈতিক মামলায় দীর্ঘদিন জেল হাজতে থাকা সাবেক সহ-সভাপতি জামান নূরও একই পদের প্রত্যাশী বলে গুঞ্জন রয়েছে। রাজনীতিতে ত্যাগী এ নেতা ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলেও বিভিন্ন বেড়াজালে এখন পর্যন্ত মাত্র চারটি সেমিস্টার শেষ করতে পেরেছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ: এদিকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে বেশ কয়েকজনের তৎপরতা দেখা গেছে। যার মধ্যে দিয়াজ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবু তোরাব পরশ অন্যতম।
একই পদ পেতে সরব রয়েছেন সাবেক উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু। বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শ্লোগান মাস্টার’ হিসেবে খ্যাত টিপু মার্কেটিং বিভাগের এমবিএ শিক্ষার্থী। গত দু’বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সবচেয়ে বড় গ্রুপ ‘সিক্সটি নাইন’ এর নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি। ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি টিপুকে শিবির বিরোধী অভিযানে দেখা গেছে। নিজ গ্রুপের ব্যাপারে একাট্টা ও শিবির বিরোধী কর্মকান্ডে যুক্ত থাকায় গ্রুপে শক্ত অবস্থানসহ অন্যান্যদের কাছে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন।
গুরুত্বপূর্ণ এ পদটি পেতে বেশ আলোচনায় রয়েছেন তাপস হত্যা মামলার চার্জশিট ভুক্ত পলাতক আসামি সাবেক উপ-দফতর সম্পাদক মিজানুর রহমান বিপুল। তার ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে ২০১২ সালে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষেই একাধিকবার অকৃতকার্য হওয়ায় তার ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যায়। সম্প্রতি তার বিষয়ে ছাত্রদলের সহ-সভাপতি পদে থাকার অভিযোগ উঠলেও তিনি তা অস্বীকার করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজী বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এছাড়া তাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইতোপূর্বে দল থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
আরেক পদপ্রত্যাশী রকিবুল হাসান দিনার নাট্যকলা বিভাগ থেকে স্নাতোকত্তর শেষ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন গ্রুপের নেতৃত্বে না থাকার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও সুপরিচিত নন তিনি। সম্প্রতি রাজনীতিতে আসা দিনার দিয়াজ হত্যা মামলার পলাতক আসামী আবুল মনসুর জামশেদ ও আলমগীর টিপুর অনুসারী বলে পরিচিত।
সাবেক উপ-সাহিত্য সম্পাদক ইমাম উদ্দিন পারভেজ ফয়সালও সাধারণ সম্পাদক পদটি পেতে মরিয়া। তার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল আলমের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে।