অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আগামী ৮ এপ্রিল দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে। এ সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া তিনি আরও কিছু কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
যেকোনো দেশের মন্ত্রী-সচিব বা উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সফর বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটা যদি প্রতিবেশী দেশ ভারতের কোনো মন্ত্রী বা সচিবের তাহলে এটার তাৎপর্য আরও বেড়ে যায়।
তবে, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিবেশী দেশ ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের আসন্ন এ সফরে রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। আর এ নিয়ে টেনশনের মধ্যে আছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারাও।
আর এসব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও টেনশনের যুক্তিসংগত কিছু কারণও আছে। ভারতের মন্ত্রী-সচিব ও অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা সফর শেষ করে দিল্লী যাওয়ার পর পরই বাংলাদেশে একটা না একটা ঘটনা ঘটেছে। যেসব ঘটনাগুলো দেশ ও জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্য বয়ে এনেছে।
পেছনের দিকে তাকালে দেখা যায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের আগে ঢাকায় এসেছিলেন ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং। তিনি সফর শেষে দিল্লি ফেরার পরই একদলীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। পরবর্তীতে এসব তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে যে ভারতের নির্দেশেই আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করেছিল। ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকার পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতকে ছাড়াই নির্বাচন করার নির্দেশনাটি বাংলাদেশ সরকারের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল। ভারতের এই নির্দেশনা পাওয়ার পরই বিএনপি-জামায়াতকে বাদ দিয়েই নির্বাচন আয়োজনের সাহস করে সরকার। আর সেই নির্বাচনের মধ্যদিয়েই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মৃত্যু ঘটে।
এরপর গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে এসেছিলেন ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি। প্রণব বাংলাদেশে এসে আওয়ামী লীগ সরকারের খুব প্রশংসা করেছেন। দেশে বর্তমানে বিরোধী রাজনৈতিকদলগুলো কোনো মিছিল-মিটিং করতে না পারলেও প্রণব বলে গেছেন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নাকি অব্যাহত আছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন প্রণব মুখার্জি।
প্রণব মুখার্জি চলে যাওয়ার অল্প কিছুদিন পরই সরকার কথিত একটি দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠায়। বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, আগামীতে আবার ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে প্রণব বাবুর পরামর্শেই সরকার খালেদা জিয়াকে কথিত একটি দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজা দিয়েছে। সরকারের টার্গেট খালেদা জিয়াকে জেলে রেখেই আগামী নির্বাচন করবে সরকার।
এসব কারণে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলের সফর নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে আবারো উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ভারতের পররাষ্ট্র্র সচিবের সফরের পরে বাংলাদেশে নতুন করে আবার কী ঘটবে? আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কী বার্তা নিয়ে আসছেন বিজয় কেশব গোখলে? ভারত কী আবারো প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে ছাড়াই আওয়ামী লীগকে দিয়ে একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করবে? এসব প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।