অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ব্যাংক, শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন সেক্টর থেকে যেসব অর্থ লুটের ঘটনা ঘটেছে এদের মধ্যে বড় ধরণের ঘটনাগুলো আওয়ামী লীগের বর্তমান শাসনামলে। বিশেষ করে শেয়ারবাজার লুট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা ছিল ভয়াবহ অর্থ কেলেংকারির ঘটনা। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ডকে ভেঙ্গে দিয়েছে। দুইটি ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের লোকজন জড়িত থাকায় সরকার দীর্ঘ তদন্তের নামে ছয়নয় করে ধামাচাপা দিয়েছে।
আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিদিন বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বায়ুবীয় উন্নয়নের ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে দেশের মানুষকে দুর্নীতি-লুটপাটের ঘটনাগুলো ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। বলা যায়, সরকারের কথিত উন্নয়নের ভাসমান জোয়ারের ঠেলায় দেশবাসীও সরকারের দুর্নীতি-লুটপাটের ঘটনাগুলো ভুলে যাচ্ছে।
তবে, ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির এই ভয়াবহ অর্থ কেলেংকারির ঘটনাটিকে সরকার ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করলেও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই গতবছর জানিয়েছে, নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চুরি গেছে।
রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) কর্মকর্তা ল্যামন্ত সিলার ফিলিপাইনে সাইবার নিরাপত্তা ফোরামের এক বৈঠকে বলেছিলেন, আমরা সবাই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা জানি; যা ব্যাংকিং খাতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হামলাগুলোর একটি বড় উদাহরণ।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে বিশাল অংকের এই টাকার চুরির পরই বিশিষ্টজনসহ সচেতন মানুষেরা বলেছিলেন, রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকজন জড়িত। এমনকি সরকার প্রধান ও তার পরিবারের লোকজন এ চুরির সঙ্গে জড়িত। আর এতে সহযোগিতা করেছেন ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
এছাড়া সরকার গঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ীই দেখা যায় এঘটনার সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকজন জড়িত। যার কারণে একাধিকবার তারিখ দিয়েও তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করছে না সরকার। থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে এ কারণেই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত কৌশলে বিষয়টিকে এড়িয়ে চলছেন।
ড. ফরাস উদ্দিন তার তদন্ত রিপোর্টে বলেছেন, ব্যাংকের ভেতর ৫ জন কর্মকর্তা এ রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত। তাদের সহযোগিতায় রিজার্ভ থেকে টাকা লুট হয়েছে।
কিন্তু, দেশবাসী আজও জানতে পারেনি জড়িত এই ৫ কর্মকর্তা কারা এবং কাদের ইন্ধনে তারা এ কাজ করেছিল।
তারপর সিআইডি’র তদন্তে আরও ভয়াবহ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। রিজার্ভ চুরির আগে দেশি-বিদেশি কিছু রহস্যজনক লোক বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করেছিল। যাদের নাম এন্ট্রি করা হয়নি। আর সেটাও হয়েছে গভর্নর ড. আতিউর রহমানের নির্দেশে। অপরিচিত এসব লোক কারা ছিল এবং কেন নাম এন্ট্রি ছাড়াই তাদেরকে ব্যাংকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিলেন সিআইডির এমন প্রশ্নের কোনো সঠিক জবাব দেননি ড. আতিউর।
তারপরও এত বড় ঘটনার পর তিনি বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। অর্থমন্ত্রীকে কেন জানান নি সিআইডি’র এমন প্রশ্নের উত্তরও দেননি তিনি। তারপর এঘটনায় তিনি কোনো মামলা বা আইনগত ব্যবস্থাও নেন নি। বরং এত বড় অর্থচুরির ঘটনা গোপন রেখে তিনি চলে গেলেন ভারতে।
বিশিষ্টজনরা মনে করছেন, সরকার প্রধানের নির্দেশেই ড. আতিউর রহমান বিষয়টি গোপন রেখে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। গভর্নর ড. আতিউরকে ব্যবহার করেই প্রধানমন্ত্রী ও তার ছেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ বিশাল অংকের টাকা চুরি করেছেন।