অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি জাকির হোসেন মিলনকে গত ৬ মার্চ বিএনপির কর্মসূচি থেকে আটক করে পুলিশ। এরপর শাহবাগ থানায় মামলা দিয়ে তাকে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ডে নিয়ে অমানিক নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়। সোমবার সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মিলনের লাশ বের করে নিয়ে আসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি নেপালে বাংলাদেশি বিমান দুর্ঘটনার আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে।
একজন সুস্থ-স্বাভাবিক ও তরুণ ছাত্রনেতাকে ধরে নিয়ে রিমান্ডের নামে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিশিষ্টজনেরা সহ সচেতন মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় উদ্বেগ-আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলেও এদেশের মানুষ এমন দৃশ্য দেখেছিল। শেখ মুজিবুরের শাসনব্যবস্থা যারা পায়নি এবার তাদের সেই দৃশ্যটা দেখার সুযোগ হয়েছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে আওয়ামী লীগ। এদেশের মানুষ কখনো ভুলতে পারবে না সেই মুজিব বাহিনী আর রক্ষীবাহিনীর হত্যা, নির্যাতন ও সীমাহীন অত্যাচারের কথা। আওয়ামী লীগের সেই ইতিহাস ছিল এক কালো ইতিহাস। মানুষ হত্যার ইতিহাস। মুখ দিয়ে মানবতার কথা বলা আর হাত দিয়ে মানুষ হত্যা করা। বিনা অপরাধে হত্যা করা হয়েছে শত শত আলেম-ওলামা আর হাজার হাজার নারী-পুরুষকে। মুজিববাহিনীর অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। নির্যাতিত মানুষের আর্তচিৎকারের সেই ধ্বনি যেন এখনো আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগের জুলুম-নির্যাতনের এই ইতিহাস নতুন করে কিছু বলার নেই।
স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে আহমদ মূসার লেখা ‘স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সূচনা পর্ব: ইতিহাসের কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগ’’ নামক বই থেকে পাঠকদের অবগতির জন্য এখানে মাত্র তিনটি ঘটনার উল্লেখ করা হলো।
এক. কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার ইকোরটিয়াই মুজিব বাহিনীর হাতে নিহত আববাস উদ্দিনের ভাই সামসুদ্দিন বলেছেন, ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে শাহজাহান, আজিজ ও বাচ্চুর নেতৃত্বে একদল মুজিব বাহিনীর লোক এসে আমার মায়ের সামনে আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করল। ওরা যাওয়ার সময় বলে গেছে ওর লাশ শৃগাল কুকুরে খাবে, কেউ কবর দিলে তাকেও হত্যা করা হবে। কেউ কাঁদলে তাকেও হত্যা করা হবে। সকালে মেরে ওরা আবার বিকালে এসে দেখে গেছে লাশ কেউ কবর দিয়েছে কি না। কেউ কান্নাকাটি করছে কি না। পরে রাতের আঁধারে গ্রামবাসী বিলে নিয়ে লাশটি পুঁতে রাখে। এই হলো আওয়ামী লীগের মানবাধিকার রক্ষার শ্লোগানের বাস্তব চিত্র।
দুই. একই এলাকায় মুজিব বাহিনীর নির্মম বুলেটের আঘাতে নিহত হয় রশিদ। রশিদের বাবা আব্দুল আলী বললেন, ওরা আমার কাছে এক হাজার টাকা চাঁদা চাইছিল। আমি গরীব মানুষ। টাকা দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। কিছুদিন পর শাহজাহানের নেতৃত্বে একদল লোক এসে আমার সামনে আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করে। আমার হাতে কুঠার দিয়ে বলল মাথা কেটে দে, ফুটবল খেলব। আমি কি তা করতে পারি? আমি যে তার বাপ। অত্যাচার আর কতক্ষণ সহ্য করা যায়? সহ্য করতে না পেরে অবশেষে নিজ হাতে ছেলের মাথা কেটে দিলাম। আমার ছেলে আওয়ামী লীগ করত না। এটাই ছিল তার অপরাধ। প্রিয় পাঠক, পৃথিবীর ইতিহাসে এর চেয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আর কী হতে পারে? ওরা হত্যা করে আবার বাবাকে বাধ্য করেছে ছেলের মাথা কেটে দিতে। ওরা কি মানুষ ছিল?
তিন. ভেড়ামারার কামালপুর কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক ফজিলাতুন্নেসাকে গুলি করে হত্যা করে মুজিববাহিনীর লোকেরা। নিহতের ভাই ফিরোজ আহসান বললেন, তারা আমার বোনকে হত্যা করে আমাদের কাউকে লাশটি দাফন করতে দেয়নি। আমার বাড়িতে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের একটি মিটিং হয়েছিল। এটাই আমার বোনের অপরাধ।
আওয়ামী লীগের বর্তমান শাসনামলে দেখা গেছে হত্যাকাণ্ডের ধরণ পাল্টাচ্ছে। ৭৪ সালে তারা নিজেরাই মানুষকে ঘর থেকে ধরে এনে নির্মমভাবে হত্যা করতো। আর এখন বিরোধী মতের মানুষকে হত্যা করাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক দিয়ে। যার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হলো ছাত্রদল নেতা মিলন হত্যাকাণ্ড।
মিলনের দুলাভাই রাশেদুল হক বলেছেন, সুস্থ মিলনকে ধরে নিয়ে গেলো, সেই মিলন তিনদিন পুলিশ রিমান্ডে ছিলো। আজকে আমাদের জানানো হলো মিলনের লাশ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আছে নিয়ে যান। আমরা কোন মিলনকে নিয়ে আসবো? যে মিলনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো তাঁর শরীরে তো কোন দাগ ছিলো না, মর্গে নিথর শুয়ে থাকা এই মিলনের শরীরে এত দাগ কিভাবে এলো? মর্গে নিথর শুয়ে থাকা মিলনের হাত-পায়ের ২০টি আঙ্গুলের একটিতেও নখ অবশিষ্ট নাই।
ছাত্রদল নেতা মিলনের এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে কঠোর সমালোচনা। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, ৭৪‘র সেই মুজিব বাহিনী দেশে আবারো ফিরে এসেছে। পার্থক্য তারা শুধু গায়ের পোশাক বদল করেছে। আর সবই ঠিক আছে।