অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের কথিত দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে বন্দি জীবন-যাপন করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। আইনি মারপ্যাঁচের কারণে আটকে আছে তার জামিনের বিষয়টি। নিম্ন আদালত থেকে নথিপত্র আসার পর জামিনের বিষয়ে আদেশ দেবেন আদালত।
তবে, রাজনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ মামলায় জামিন হলেও সরকার খালেদা জিয়াকে জামিন দেবে না। অন্য মামলা দিয়ে তাকে কারাগারেই আটকে রাখার চেষ্টা করবে। তাদের মতে, সরকারের টার্গেট হলো খলেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেই নির্বাচন করা।
এদিকে, খালেদা জিয়াকে ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বিএনপি নেতারা এমন বক্তব্য দিলেও বাস্তবে তারা নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে পারবে কিনা এনিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন বিশ্লেষকরা।
আর নির্বাচন হবে কিনা, হলেও কীভাবে হবে, খালেদা জিয়া কারামুক্ত না হলেও ২০ দল সেই নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা সেটা এখনো ঠিক হয়নি। কিন্তু ২০ দলের শীর্ষ নেতাকে জেলে রেখেই জোটের শরিক দল কর্নেল অলির এলডিপি আগামী নির্বাচনে কয়টি আসন থেকে নির্বাচন করবে সেটা নিয়ে দর কষাকষি শুরু করেছেন।
শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কর্নেল অলি জানিয়েছেন যে, ৩০টি আসনের একটি তালিকা তিনি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে দিয়েছেন। এনিয়ে সম্প্রতি কর্নেল অলির বাসায় মির্জা ফখরুল বৈঠক করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের হাতে অলি আহমেদ এরই মধ্যে ধরিয়ে দিয়েছেন এলডিপির ৩০ প্রার্থীর নামের তালিকা। যারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে এলডিপি মনোনীত জোটপ্রার্থী হিসেবে লড়তে আগ্রহী। সম্প্রতি কর্নেল (অব.) অলির মহাখালী ডিওএইচএস’র বাসায় যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে কর্নেল অলির সঙ্গে বৈঠক করেন ফখরুল। আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম, নির্বাচন ও আসন বণ্টন নিয়েও আলোচনা হয় সেখানে। ওই বৈঠক থেকেই কর্নেল অলি আগামী নির্বাচনে তার দলের সম্ভব্য ৩০ প্রার্থীর তালিকা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীকে দেন।
ওই ত্রিশ জনের তালিকায় রয়েছেন এলডিপির চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম (চট্টগ্রাম-১৪), মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭), প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল করিম আব্বাসী (নেত্রকোনা-১), অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোহম্মদ খলিলুর রহমান (জয়পুরহাট -২), প্রফেসর মোহম্মদ আব্দুল্লাহ (চাঁদপুর-৩), আব্দুল গণি (মেহেরপুর-২), সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-১), প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. কামালউদ্দিন মোস্তফা (মাগুরা-১), ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম ভুঁইয়া (ব্রাহ্মণ বাড়িয়া-৫), ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নুরুল আলম (চট্টগ্রাম-৭), উপদেষ্টা মো. আবু জাফর সিদ্দিকী (ময়মনসিংহ-২), ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নেয়ামুল বশির (চাঁদপুর-৫), যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দীন চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৬), ড. জহিরুল হক (ঝালকাঠি-১), সাংগঠনিক সম্পাদক সালাহ উদ্দীন রাজ্জাক (গোপালগঞ্জ-১), সাংগঠনিক সম্পাদক এম. এ বাশার (ময়মনসিংহ-৮), শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. এয়াকুব আলী (চট্টগ্রাম-১২), ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. হামিদুর রহমান (ময়মনসিংহ-৯), অ্যাডভোকেট চৌধুরী এম এ খাইরুল কবির পাঠান (নেত্রকোণা-৫), যুগ্ম মহাসচিব তমিজ উদ্দীন টিটু (ঢাকা-৫), উপদেষ্টা অধ্যাপিকা কারিমা খাতুন (বগুড়া-১), সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপিকা তপতী রানী কর (ময়মনসিংহ-৬), সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল আনোয়ার (ঝালকাঠি-২), উপদেষ্টা শফিউল আলম ভূঁইয়া (চট্টগ্রাম-১), অ্যাডভোকেট মোবারক হোসেন (টাঙ্গাইল-৪), যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান (বগুড়া-৩), প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান (মাদারীপুর-২), মোস্তফা কামাল চৌধুরী (নওগাঁ-১) ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান রূপা (সুনামগঞ্জ-৩)।
এদিকে, শুক্রবার কর্নেল অলির এ চিঠির কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই এনিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। অনেকে প্রশ্ন করছেন, কর্নেল অলি আসলে কী চায়? তিনি কি খালেদা জিয়ার মুক্তি চান নাকি বিএনপিকে সরকারের ফাঁদে ফেলার চক্রান্ত করছেন?
বিশ্লেষকরা বলছেন, দলের চেয়ারপারসন যেখানে ভিত্তিহীন মামলায় কারাগারে বন্দি জীবন-যাপন করছেন, সেখানে তাকে মুক্ত না করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কর্নেল অলির এই চিঠি কীভাবে গ্রহণ করলেন? আর আগামী নির্বাচনের আসন বণ্টন নিয়ে তো জোটের বৈঠকেও এখনো পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি। তাহলে খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে কি অলি-ফখরুলরা অন্য কিছু করতে যাচ্ছেন?
অন্যদিকে কর্নেল অলি বড় নেতা হলেও তার দল এলডিপি একটি গণবিচ্ছিন্ন সংগঠন। এটা একটা আঞ্চলিক দল। চট্টগ্রামের দুইটি আসন ছাড়া দেশের কোথাও তাদের জোনো জনসমর্থন নেই। এক্ষেত্রে ৩০ আসন দাবি একটি হাস্যকর বিষয়ও বটে।