অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “প্রশ্নপত্র ফাঁস নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে এটা চলে আসছে।” তিনি আরো বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁস কত মিনিট আগে হয়? ২০ মিনিট আগে, এক ঘণ্টা আগে। কেউ যদি চট করে ছবি তুলে প্রকাশ করে দেয়, আমাদের কি করার আছে?’
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, প্রশ্নপত্র ফাঁস অবৈধ নয়; ‘ঐতিহ্যগত স্বাভাবিক’ ব্যাপার! এমন মন্তব্য করে আসলে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসকে বৈধতা দিয়ে দিলেন!
বিশ্লেষকরা বলছেন, আমরা যুগ যুগ ধরে এ দেশে বাস করি, আমরা এই ঐতিহ্য লালন করি না। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা আমরাও দিয়েছিলাম। প্রশ্ন ফাঁসের কোন গন্ধ তো পাইনি। আপনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ছেন। ভালো কথা। গত কালকের পরীক্ষা শুরুর দুই ঘণ্টা আগে টিভিতে দেখলাম প্রত্যেকের হাতে হাতে রসায়নের প্রশ্নপত্র। তথ্যপ্রযুক্তি তো সারা বিশ্বজুড়ে। ‘ও’ লেভেল ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা বাংলাদেশসহ পৃথিবীজুড়ে হচ্ছে, সব দেশেই মোবাইল আছে, স্মার্টফোন আছে। শুনেছেন কোথাও পরীক্ষার আগের রাতে প্রত্যেকের মোবাইলে প্রশ্নপত্র? অন্যের অযোগ্যতা নিজের কাঁধে নেবেন না। দয়া করে অযোগ্য শিক্ষা মন্ত্রীকে বিদায় করুন, যোগ্য একজন মন্ত্রী আনুন।
প্রশ্নপত্র ফাঁস বিষয়ে শেখ হাসিনা আরো বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রশ্নপত্র ফাঁস বলে একটি সুর তুলে দেওয়া হচ্ছে। তাই বলে মন্ত্রী, সচিবকে চলে যেতে হবে?
এ প্রসঙ্গে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন মালিক শেখ হাসিনার সমালোচনা করে বলেন, ‘জনগণের অর্থে বেতনভোগী দায়িত্বপ্রাপ্তদের যদি কোন দায়-দায়িত্ব না থাকে, তাহলে দায়টা কার? তবে কি দায়টা শুধুই দূর্ভাগা জাতির!’
প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছেন, ‘প্রশ্নফাঁকারীদের ধরিয়ে দেন, তাদের শাস্তি দেব’। এর জবাবে তুহিন মালিক বলেছেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীরা সরকার, প্রশাসন, মন্ত্রণালয় কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নয়। চোর ধরার সব দায় কি তাদের? ৩২ ধারার খড়গ মাথায় নিয়ে কি গণমাধ্যমকর্মীরা চোরের সন্ধান দিয়ে আজীবন জেল খাটবে?’
তুহিন মালিক আরো বলেন, ‘দায়িত্বপ্রাপ্তরাই দায়িত্বশীল হবেন। দায়-দায়িত্ব তাদেরকেই নিতে হবে। এটাই রাষ্ট্র ও সরকার ব্যাবস্থার অমোঘ নিয়ম। দুঃখজনকভাবে সত্য যে, প্রধানমন্ত্রী আজকেও যে সংবিধানের দোহাই দিলেন, তিনি সেই সংবিধানটাই বুঝতে পারলেন না!’
এদিকে তারেক রহমানকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেছেন, মায়ের সঙ্গে দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত তারেক রহমান মুদ্রা পাচারের মামলায়ও আদালতের দণ্ড নিয়ে বিদেশে রয়েছেন। বিএনপিতে কি একটাও নেতা নেই যিনি দেশে অবস্থান করছেন; যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা যেত?
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের অতীত ভুলে গেছেন। তাঁর নিজের নামে তারেক রহমানের চেয়ে বেশি মামলা ছিলো। যেগুলো বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হয়েছিলো। সবগুলোই ছিলো রাজনৈতিক মামলা। ক্ষমতার জোরে তিনি নিজের মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নিয়ে এখন অন্যকে দুর্নীতিবাজ বলছেন।
শেখ হাসিনার বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, আমি একটা বিষয় বুঝতে পারি না যে, বিএনপির গঠনতন্ত্র নিয়ে, কে প্রধান হলো, না হলো উনাদের এত মাথাব্যথা কেন, উনাদের এত আশঙ্কা কেন?
খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলে নির্বাচনে না আসতে পারলে নির্বাচন কারও জন্য থেমে থাকবে না প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ কায়দায় মিথ্যাচার করেছেন। খালেদা জিয়াকে নিয়ে তাদের (সরকার) এত আশঙ্কা কেনো, ভয় কেন? উনি নির্বাচন করতে পারবেন কি পারবেন না। নির্বাচন না করতে পারলে আপনার সুবিধা হয়, আমরা ভালো করেই বুঝি।
সাংবাদিকে প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়াকে কটাক্ষ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আদালত দিয়েছেন। বেশি কিছু তো দেওয়ার নেই, একজন মেইড সার্ভেন্ট দিয়েছে। এরপর যদি আরও কিছু ডিমান্ড করে, তখন কি করবেন।’ এ কথা বলে হাসতে হাসতে নিজের দু’গালে হাত বুলিয়ে প্রসাধনীর কথা ঈঙ্গিত করেন শেখ হাসিনা!
একজন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর এমন কটাক্ষমূলক বক্তব্য ও ইঙ্গিতের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিশিষ্টজনরা। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও সমালোচনার ঝড় বইছে। কেউ বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য জাতি হিসেবে লজ্জার।