অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা বিলুপ্ত করে সেগুলোর বিস্তারিত বিন্যাস সংযোজনের মাধ্যমে নতুন এই আইনের খসড়া প্রণীত হয়েছে। নতুন আইনের ১৭ থেকে ৩৮ ধারায় বিভিন্ন অপরাধ ও শাস্তির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
এ আইনে উল্লিখিত অপরাধ ও শাস্তি নিয়েই বিতর্ক তৈরি হয়েছে সর্বত্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতাভুক্ত। সেখাইনে এ আইন নিয়ে চলছে বিতর্ক আর সমালোচনার ঝড়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বলা হয়েছে, কেউ যদি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনও ধরনের প্রপাগান্ডা চালান, তাহলে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ধর্মীয় বোধ ও অনুভূতিতে আঘাত করে, তাহলে ১০ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়া, ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনও ধরনের তথ্য উপাত্ত, যেকোনও ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে এবং এ অপরাধে ১৪ বছর কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে।
৩২ ধারা অনুযায়ী সরকারি অফিসে ঘুষ লেনদেনের কোনও চিত্র, কিংবা কোনও বড় ধরনের দুর্নীতির ফাইলের ছবি নেওয়া বা ভিডিও করা গুপ্তচরবৃত্তি হিসেবে বিবেচিত হবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিটিজেন জার্নালিজমের মাধ্যমে এখন প্রত্যেকে তার আশপাশের অসংলগ্নতা তুলে ধরে। এভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক অবৈধ কর্মকাণ্ডও প্রকাশ হচ্ছে। এসব চোর বাটপারদের রক্ষা করার জন্যই এ ধারাটি তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
এদিকে এসব বিতর্কিত অপরাধ ও শাস্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল বিতর্ক চলছে। কেউ কেউ এই আইনকে নতুন বোতলে পুরনো মদের সাথে তুলনা করেছেন। কেউ কেউ ধর্মীয় অবমাননার তুলনায় বঙ্গবন্ধু অবমাননার শাস্তি বেশি হওয়ার সমালোচনা করেছেন।
জনপ্রিয় অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও লেখক ডা. পিনাকি ভট্টাচার্য তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘নতুন বোতলে যে পুরোনো ৫৭ ধারা আসতেছে সেই আইনে চেতনা অবমাননার শাস্তি ১৪ বছরের আর ধর্ম অবমাননার শাস্তি ১০ বছরের। কী বুঝলেন? চেতনা ধর্মের চাইতে বেশী অনুভুতিপ্রবণ। ঠিক কিনা ’
গনজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার লিখেছেন, ‘সরকারী অফিসে ঘুষ খাইতে সমস্যা নাই। কেউ গোপনে ভিডিও/রেকর্ড/ছবি তুললেই ১৪ বছর জেল। বিলিভ ইট অর নট এটাই নতুন ডিজিটাল আইন! আইনটা উল্টা হলে কেমন হয়? যারাই সরকারী অফিসে চোর-ডাকাতদের ভিডিও/রেকর্ড/ছবি তুলে দেবে তাদের জাতীয় পুরস্কার দেয়া হবে!’
সাংবাদিক ওয়াহিদ ফারুকী তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ধর্মীয় মুল্যবোধে আঘাত করে ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রচারের সাজা ১০ বছর। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সাজা ৭ বছর। মুক্তিযুদ্ধ বা জাতির পিতাকে অবমাননা করে প্রচার বা সহায়তার সাজা ১৪ বছর জেল এবং ১কোটি টাকা জরিমানা । অন্যের সাইট হ্যাক করলে ১৪ বছরের জেল। প্রতিক্রিয়াঃ অবমাননার সংজ্ঞা কিন্তু তাহারাই নির্ধারন করবেন! ভাগ্যিস আওয়ামী বিরোধীতার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড বিধান রাখেনি!’
সাংবাদিক ও কবি রেজাউল করিম রনি তার ফেসবুকে এ সম্পর্কে দীর্ঘ মন্তব্য করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘সারা দেশে তো মিষ্টির বন্যা শুরু করা দরকার..। এই তথাকথিত আইনের পরে দেশে যে কোন ধরণের ‘সাংবাদিকতা’ -ই অপরাধ হিসেবে গন্য হতে বাধ্য। দেশে মাত্র দুইটা শ্রেণী থাকবে- এক. দলীয় সাংবাদিক বা পিয়ার। দুই. মিনিমাম সাংবাদিকতা করতে চাওয়া ‘অপরাধী’ অথবা রাষ্ট্রদ্রোহী।
যারা গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে যায়া তেলের দাম বাড়ান, এবার মিষ্টি বিতর করেন। সারা দেশে তো আপনাদের উৎসব করার কথা। মিষ্টির বন্যায় সব ভাসায় দেয়া দরকার। সব তেল ধুয়ে মুছে ফেলার মত মিষ্টি ছড়াই দেয়া দরকার। আশা করি এরা এখন খুশিতে বগল বাজাবেন। আশা করি সদ্য যোগ দেয়া হেফাজতও খুশি হবে। ধর্ম অবমাননার চেয়ে পিতার অবমাননার শাস্তি বড়। তারা নিশ্চয়ই মেনে নিবেন ধর্ম নয়, পিতাই বড়। এবং দেশে মদিনা সনদ বাস্তবায়ন হচ্ছে হলে শাসকের প্রসংশাও করবেন।
প্রকৃত সাংবাদিকদের হাত থেকে ঘুষখোর, গুন্ডা-পান্ডাদের রক্ষাকবজ হিসেবে এই কালা কানুন ভাল কাজে আসবে। সরকারকে আপনারা সংবর্ধনা দেন। এতো বড় একটা কাজ করল। চুপ থাকা ঠিক হবে না।
তবে সমস্যা নাই। উৎসহী জনতাই ভরসা। মিডিয়ার উপর আর মানুষ ভরসা করে না। ‘ম্যান ইজ মিডিয়া/ম যুগে বাস করে এইসব আইনের নামে সন্ত্রসবাদি কানুন দিয়ে বেশি দূর ফায়দা হাসিল হবে না। চাই উৎসাহী জনতার সাহস।’