অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে একদিকে রাজনীতিতে বাড়ছে উত্তাপ-উত্তেজনা অপরদিকে চরম উদ্বগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে বিএনপির অভ্যন্তরে। বিশেষ করে দলীয় প্রধানকে রক্ষায় কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
দেখা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সরকার পতনের অনেক কর্মসূচি ঘোষণা করেও সেগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। অধিকাংশ কর্মসূচির ক্ষেত্রে দেখা গেছে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে দলটির সিনিয়র নেতারা আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন। দলের চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মাঠে নামলেও সিনিয়র নেতারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় সব কর্মসূচিই মাঠে মারা গেছে।
দলের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আব্দুল্লাহ আল নোমান, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মাহবুবুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন নেতার সরকারের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক বজায় রেখেছেন এমন অভিযোগও উঠেছে। এসব কারণে সিনিয়র নেতাদের ওপর চরম ক্ষুুব্ধ হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এমনকি তারেক রহমান ফোনে মির্জা ফখরুলকে শাসিয়েছেন। তাদের কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হয়ে যায়।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা যায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খালেদা জিয়া যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন দলের সিনিয়র নেতাদের চাপে তিনি সেই আন্দোলন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। আর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে খালেদা জিয়া যে অবরোধের ডাক দিয়েছিলেন ওই সময় এক পর্যায়ে এসে সরকারের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল। সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে তখন সরকারের প্রতি দেশি বিদেশি চাপও ছিল। তৃণমূল নেতাকর্মীরা মাঠে থাকলেও রহস্যজনক কারণে হঠাৎ করেই বিএনপির সিনিয়র নেতারা অদৃশ্য হয়ে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি নেতাদের স্বার্থপরতার কারণেই খালেদা জিয়ার নেওয়া কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এরপর থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের চরম আস্থার সংকট দেখা দেয়। এরপর থেকেই দলের ভেতরে বড় ধরণের সংস্কারের দাবি উঠে তৃণমূলের পক্ষ থেকে। এমনকি দলের চেয়ে যেসব নেতা নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখে তাদেরকে বাদ দেয়ারও দাবি উঠে।
অতীতের কোনো কর্মসূচি সফল না হওয়ায় ধীরে ধীরে গভীর সংকটের দিকে ধাবিত হয় বিএনপি। আর সরকারও বিএনপি নেতাদের দুর্বলতাকে বুঝতে পেরে বিভিন্ন মামলার জালে ফেলে দলটিকে একেবারে নিশ্চিহ্নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
সর্বশেষ খোদ বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া এখন কারাগারে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। ধারণা করা হচ্ছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেই যাবে। আর রায়ে সাজা হলে খালেদা জিয়াকে একদিনের জন্য হলেও জেলে যেতে হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, খালেদা জিয়া জেলে যাবেন নাকি বাসায় থাকবেন সেটা নির্ভর করছে বিএনপির ওপর। বিএনপি নেতারা যদি আগের মতো রহস্যজনক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তাহলে খালেদা জিয়াকে নিশ্চিত জেলে যেতে হবে। আর বিএনপি নেতারা যদি ব্যক্তি স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে দলীয় প্রধানকে রক্ষায় মাঠে নামতে পারে তাহলে হয়তো ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে।
তারা মনে করছেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় প্রধানকে রক্ষায় যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুুত আছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে কতটুকু সক্রিয় থাকে সেটাই এখন দেখার বিষয়।