অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা প্রদান করে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে খালেদাকে বাইরে রেখে মোটামুটি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করে ফের ক্ষমতায় যেতে মরিয়া দলটি।
অন্যদিকে দলের চেয়ারপারসনকে বাইরে রেখে জাতীয় নির্বাচনে না যাওয়ার এবং বয়কট করার পাল্টা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। শনিবার রাতে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। রায় বিপক্ষে গেলে জামিন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার পক্ষেও ঐকমত্যে পৌঁছেন দলের নেতারা।
সরকারের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে সম্প্রতি একটি গণমাধ্যম জানিয়েছে, সরকার খালেদা জিয়ার মামলাকে কেন্দ্র করে একাধিক বিকল্প কৌশল রেখে পরিকল্পনা করছে। তাকে গ্রেফতার করা হলে প্রথমত প্রতিক্রিয়া কেমন হয়, সেদিকে নজর রাখতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রটির দাবি, সরকার চাইছে, যেকোনও মূল্যে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রাখা। এক্ষেত্রে কোনও একটি দুর্নীতি মামলায় তার বিরুদ্ধে রায় আনার পক্ষে সরকার। তবে চূড়ান্ত কী হবে, এটি এখনও নিশ্চিত নয় গোয়েন্দা সূত্রটি। সূত্রের ভাষ্য, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হলেই খালেদা জিয়ার মামলায় রায়ের দিকে পূর্ণ নজর দেবে সংস্থাটি।
অ্যানালাইসিস বিডিকে একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ মনে করছে খালেদা জিয়াকে সাজা প্রদান করে জেলে পাঠালে বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হবে। এমনকি নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে বিএনপি কয়েক খণ্ডও হয়ে যেতে পারে। আর খালেদাবিহীন এমন হযবরল বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করলে টানা তৃতীয়বারের মত ক্ষমতায় যাওয়া আওয়ামী লীগের জন্য একটুও কঠিন হবে না।
আওয়ামী লীগের এমন পরিকল্পনা আন্দাজ করতে পেরে বিএনপিও নড়েচড়ে বসেছে। দলের চেয়ারপারসনকে আগামী নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার কোনো ষড়যন্ত্র হলে সেই নির্বাচন বয়কট করা হবে বলে দলটির নীতি নির্ধারকরা একমত হয়েছেন। খালেদাবিহীন কোনো নির্বাচন এদেশে হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এছাড়া মামলার রায় ‘তড়িঘড়ি’ করাকে ‘সরকারি ষড়যন্ত্র’ দাবি করে এর বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। মামলার ভবিষৎ রায় নিয়ে আইনি ও রাজনৈতিক পর্যালোচনা এবং করণীয় নির্ধারণে শনিবারের বৈঠকটি আহ্বান করা হয়। এনিয়ে আজ রোববার জোটের সঙ্গেও বৈঠক করবেন খালেদা জিয়া।
বৈঠক সূত্র জানায়, সরকারের তড়িঘড়ি দেখে মনে হচ্ছে খালেদা জিয়াকে মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে সরকার নীলনকশা করেছে। এ ক্ষেত্রে চেয়ারপারসনকে সাজা দেয়া হলে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে সবাই মত দেন। এ সময় এক নেতা জানতে চান, সরকার যদি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচন দিতে চায় তখন আমরা কী করব?
এ সময় সবাই মত দেন, ওই সময়ের পরিস্থিতি দেখে তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রায় দেখে কর্মসূচি ঘোষণা করা উচিৎ হবে বলে বৈঠকে সবাই এক মত হন। রায় বিপক্ষে গেলে জামিন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার পক্ষে মত দেন সবাই।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার মামলার রায় অপ্রত্যাশিত হলে রাজপথে কর্মসূচি দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কর্মসূচি সহিংসতার দিকে যেতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে ‘সরকারের তরফে’ উস্কানি থাকার শঙ্কা করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য। তিনি বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। সহিংসতার কোনও ইচ্ছা বা পরিকল্পনা নেই। এটা আওয়ামী লীগ করতে পারে।’
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নেতিবাচক রায় হলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে। তিনি বলেন, বিএনপি ওই রায় নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো কর্মসূচি দিক বা না দিক, কিছু যে ঘটবে না, সে নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। তিনি আরো বলেন, আশঙ্কা করছি, ৮ ফেব্রুয়ারি সরকার কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে যদি আদালত থেকে নেতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত প্রকাশ পায়, তাহলে তখন থেকে এই সরকারের পতনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হবে। সময় বলে দেবে কে নেতৃত্ব দেবে, আর কে রাজপথে থাকবে।’
এদিকে, বিএনপির সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের দিকে দৃষ্টি রেখেছেন। যদিও তারা এখনই কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন। একাধিক রাজনীতিকের ভাষ্য— খালেদা জিয়ার মামলা ও রায় মোকাবিলায় তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা কী হবে, এর ওপরে নির্ভর করছে অন্যান্য দলের অবস্থান। সেকারণে রায়ের আগে কেউ-ই মুখ খুলতে চাননি।