অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতির মাঠ। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হবে এ রায়। রায় নেতিবাচক হলে রাজপথ আবারও উত্তপ্ত ও সহিংস হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। বিএনপি নেতাদের বক্তব্য বিবৃতি থেকে এমন আভাসই পাওয়া যাচ্ছে।
৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর সরকারের বিরুদ্ধে কয়েক মাস বিএনপি রাজপথের আন্দোলনে ছিলো। কিন্তু সরকারি দলের কঠোর অবস্থান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় ক্যাডারের মত ব্যবহার করায় সেই আন্দোলনে সফলতা আসেনি। এরপর থেকে আর রাজপথের কোনো আন্দোলনে দেখা যায়নি বিএনপিকে।
জাতীয় নির্বাচনের এক বছরেরও কম সময় বাকি আছে। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র অ্যানালাইসিস বিডিকে জানায়, খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখতে সব রকমের চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। গোয়েন্দা সূত্রগুলোও এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এটা করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদাকে সাজা দিয়ে কারাগারে প্রেরণের চিন্তা ভাবনা করছে। এমন আশঙ্কা থেকে বিএনপিও এই রায় ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিএনপির নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়ে অপ্রত্যাশিত কিছু হলে তা মোকাবিলায় যথেষ্ট পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে দলের ৭৫টি টিম তৃণমূলে এ বিষয়ে দলীয় নির্দেশনা পৌঁছে দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ এক সদস্য জানান, ‘রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়ার মামলার রায় মোকাবিলায় শক্তি ও সামর্থ্য যতটা আছে, তা দিয়ে আমরা মোকাবিলা করবো। কর্মসূচি আসবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নেতিবাচক রায় হলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে। তিনি বলেন, বিএনপি ওই রায় নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো কর্মসূচি দিক বা না দিক, কিছু যে ঘটবে না, সে নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরো বলেন, আশঙ্কা করছি, ৮ ফেব্রুয়ারি সরকার কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে যদি আদালত থেকে নেতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত প্রকাশ পায়, তাহলে তখন থেকে এই সরকারের পতনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হবে। তিনি বলেন, ‘সময় বলে দেবে কে নেতৃত্ব দেবে, আর কে রাজপথে থাকবে। সরকারকে বলব, জেলের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা তো খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৃহত্তর কারাগারেই আছি। আমরা সবাই খালেদা জিয়ার জেল পার্টনার।’
এদিকে শুক্রবার নোয়াখালীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অবশ্যই অংশ নেবে। নির্বাচন ও আন্দোলন—দুটির জন্যই প্রস্তুত বিএনপি। ভোটের অধিকার আদায়ে দেশের মানুষ একসঙ্গে রাস্তায় নামলে রাজনৈতিক চিত্র পাল্টে যাবে। মানুষ একবার গণতন্ত্রের জন্য মাঠে নামলে বোঝা যাবে কার শক্তি কতটুকু।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মামলার যে পরিস্থিতি তাতে খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আর তার মতো জনপ্রিয় নেতাকে কারাগারে নিলে প্রস্তুতির দরকার হবে না। সারাদেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে। ম্যাডামের জনপ্রিয়তা দলমত নির্বিশেষে ছড়িয়ে পড়বে।’
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়ার মামলা মোকাবিলায় কঠিন চাপ সইতে হবে দলটিকে। এক্ষেত্রে রাজপথে কঠিন আন্দোলনের বিকল্প নেই। তবে খালেদা জিয়া জেলে থাকলে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ হবে বলেও মনে করেন দলটির কয়েকজন নেতা।