অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিগত ৯ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একক আধিপত্য বিস্তার করে আসছে ছাত্রলীগ। নাম সর্বস্ব বামপন্থী কয়েকটি ছাত্রসংগঠন ছাড়া দেশের বৃহত্তর ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের কোনো প্রকাশ্য তৎপরতা বা কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। আর বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নীতি-আদর্শও ছাত্রলীগের নীতি আদর্শের সঙ্গে অনেকাংশেই মিল আছে। বলা যায় মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
কিন্তু হঠাৎ করেই কয়েক দিন অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। আর এ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পেছনে মূল ভূমিকা পালন করছে ক্যাম্পাসে একক আধিপত্য বিস্তার করে থাকা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। আর ছাত্রলীগের এ অপতৎপরতা শুরু হয়েছে মূলত গত ১৭ জানুয়ারি আদালত কর্তৃক ৬ মাসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনের আয়োজন করতে ঢাবি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়ার পর থেকেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭টি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত করার পর থেকেই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও অনার্সের বিভিন্ন পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা। এনিয়ে বেশ কয়েকবার সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এর মধ্যে আবার ৭ কলেজের অধিভূক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কয়েকদিন ধরেই তারা অধিভূক্তি বাতিলের দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন-বিক্ষোভ করছে। শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল তাদের এই মানববন্ধন-বিক্ষোভ।
এদিকে, আদালতের আদেশের পর ঢাকসু নির্বাচন নিয়ে যখন গণমাধ্যম, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজনেরা তৎপর হয়ে উঠেছে ঠিক তখনই হঠাৎ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং তাদেরকে মারধর করে ও ছাত্রীদের ওপর নীপিড়ন চালিয়ে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের এই নীপিড়নের প্রতিবাদে ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কার্যালয় ঘেরাও করে অবস্থান করতে থাকে। ওই দিন আবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা এসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। রড-হকিস্টিক দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। এমনকি ছাত্রলীগ নেতারা ছাত্রীদের পরনের জামা পর্যন্ত খুলে নেয়ার চেষ্টা করেছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছাত্রলীগের এ তাণ্ডবের ভিডিও ও ছবি প্রকাশের পর সারাদেশে শুধু সমালোচনার ঝড়ই উঠেনি, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ছাত্রলীগের এ কর্মকাণ্ডে প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
ভিসিকে উদ্ধার করতে ছাত্রলীগ নেতারা এসে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিয়েছে মর্মে ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমন দাবি করলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ভিন্ন তথ্য। এ হামলা ছাত্রলীগ পরিকল্পিতভাবেই করেছে। আর এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা যায়, হাইকোর্টের নির্দেশের পর ঢাকসু নির্বাচনের আয়োজন করতে ঢাবি কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ দেয়া হচ্ছে। তৎপর হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ছাত্রসংঠনগুলোও। আর চলতি বছরের শেষের দিকে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ অবস্থায় আদালতের নির্দেশনা মেনে কর্তৃপক্ষ যদি ঢাকসু নির্বাচনের আয়োজন করে তাহলে সেটা সরকারের জন্য আরেক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
কারণ, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশে যত নির্বাচন হবে সবগুলোই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে। আর ঢাকসু নির্বাচন যদি সুষ্ঠুভাবে হয় তাহলে ছাত্রলীগের চরম ভরাডুবির আশঙ্কা রয়েছে। ঢাবির নিয়ন্ত্রণ তখন ছাত্রলীগের হাত থেকে চলে যাবে। আর ছাত্রলীগকে জেতাতে গিয়ে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে এর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে। সরকার এ মূহূর্তে এ ধরণের কোনো ঝুঁকিতে যেতে চাচ্ছে না। যার কারণে ঢাকা সিটি উত্তরের মেয়র নির্বাচনও স্থগিত হওয়ার মতো পরিবেশ সরকার পরিকিল্পতভাবে সৃষ্টি করেছিল।
আর বিশিষ্টজনেরাও বলছেন, বিগত ৯ বছরে ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ যা করেছে তা অবর্ণনীয়। চুরি-ডাকাতি, অপহরণ, ছিনতাই, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নীপিড়ন-নির্যাতনসহ এমন কোনে অপকর্ম নেই যা ছাত্রলীগ করেনি। এ অবস্থায় ঢাকসু নির্বাচন হলে ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাস ছাড়তে হবে। তাই তারা পরিকল্পিতভাবেই ঢাবি ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। যাতে ঢাবি কর্তৃপক্ষ আদালতকে বলতে পারেন যে পরিবেশ নির্বাচনের উপযোগি নয়। এখন নির্বাচন হলে বড় ধরণের সংঘাতের ঘটনা ঘটতে পারে। অজুহাত তৈরির জন্যই মূলত ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।