অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. মোতালেব হোসেন, একই মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ ছাড়া নিখোঁজ লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিনকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গত তিন দিনে রাজধানীর পৃথক স্থান থেকে তারা নিখোঁজ হন বলে পরিবার অভিযোগ করেছিল।
মোতালেব হোসেনকে তুলে নেয়ার ব্যাপারটি ঘটনাস্থলের একটি সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট ধরা পড়ে। সেই ফুটেজ চ্যানেল আইসহ কয়েকটি গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। ফুটেজে দেখা গেছে ডিবি পুলিশ যে ধরণের মাইক্রোবাস ব্যবহার করে থাকে সেরকম একটি মাইক্রোতে করেই মোতালেবকে তুলে নেয়া হয়েছে। এখন মোতালেবকে গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার দেখানোর পর অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে যে সিসিটিভি ফুটেজে দেখানো সেই লোকগুলো সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকই ছিলো।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সিসিটিভি ফুটেজে অপহরণকারীদের চেহারা অনেকটাই স্পষ্টরুপে ধরা পড়ায়ই দ্রুত মোতালেবসহ বাকিদেরকে গ্রেফতার দেখিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ ও অপহরণকাণ্ডকে ধামাচাপা দেয়াই এখন পুলিশের টার্গেট।
এর আগে রাজধানীর পল্টনের খানা বাসমতি রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী পরিচয়ে আইএফআইসি ব্যাংক কর্মকর্তা শামীম আহমেদের অপহরণের ঘটনাও সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে। সেই ফুটেজেও অপহরনকারীদের স্পষ্ট ছবি ধরা পড়ায় এবং ফুটেজ গণমাধ্যমের আলোচনায় আসায় খুব দ্রুত তাকেও ছেড়ে দেয়া হয়।
গ্রিন রোড সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের বাসা থেকে বের হয়ে মোহাম্মদপুরে বসিলায় তার নির্মাণাধীন বাড়ির কাজ দেখতে গিয়েছিলেন মোতালেব হোসেন। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায় আগে থেকেই নির্মাণাধীন ভবনের সামনে একটি কালো রঙের প্রাইভেট দাঁড়িয়েছিলো। কিছুক্ষণ পর সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ায়।
সঙ্গে থাকা মোতালেবের ভাতিজা জানিয়েছেন, বাড়ি ভাড়া নেয়ার জন্য কয়েকজন লোক এসে নিচে মোতালেবের সাথে কথা বলেন। সেসময় কয়েকজন তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।
ভিডিও ফুটেজে আরো দেখা যায়, ঘটনাস্থলে আগে থেকেই অপহরণকারীদের কয়েকজন অবস্থান নিয়ে রেকি করছিলো। তাদের কয়েকজনের চেহারা খুব স্পষ্টভাবেই ধরা পড়েছে ফুটেজে।
ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২১শে জানুয়ারি রাত সাড়ে আটটায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রিসিভ এবং ডেসপাচ শাখার উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিনকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকাসহ গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তী সময়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ সূত্র ধরে মোতালেব হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপর এক অভিযানে লেকহেড স্কুলের মালিক মো. খালেদ হাসান মতিনকে গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে গুম করার পর যারাই আটক হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই গ্রেফতারের এমন গল্প সাজানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা, ব্যবসায়ী, ছাত্র, শিক্ষক থেকে শুরু করে নানান পেশার মানুষকেই অপহরণ করা হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। এদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক লোকই ফিরে এসেছেন। হত্যা করা হয়েছে কাউকে কাউকে। নিখোঁজ রয়েছেন অনেকেই।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের রিপোর্ট অনুযায়ী বিগত ২০১৭ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে গুম করা হয়েছে মোট ৮৬ জনকে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনের লাশ পাওয়া গেছে এবং ৪৫ জনকে গুম করার পর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ১৬ জনকে। এখনো পর্যন্ত ১৬ জনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এদিকে শনিবার বিকাল ৪টার দিকে সাদা পোশাকে সাত থেকে আটজন লোক এসে গুলশানের লেকহেড গ্রামার স্কুলের সামনে থেকে মতিনকে তুলে নিয়ে যায় বলে থানায় অভিযোগ করা হয়। পরে রাতে লেকহেড গ্রামার স্কুলের পক্ষে ইদ্রিস আলী নামে একজন থানায় একটি জিডি করেন।
জিডিতে বলা হয়েছে, বিকাল ৪টার দিকে স্কুলের সামনে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার সময় পাশে থাকা একটি মাইক্রোবাসে তাদের সঙ্গে ওঠেন মতিন। এরপর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। আজ রাতে তাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।
উল্লেখ্য, জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ এনে গত নভেম্বরে লেকহেড স্কুল বন্ধ করে দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি করে এবং সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ করে স্কুলটি চালুর নির্দেশ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত।