অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মিরপুর স্টেডিয়ামের আজকের বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যকার একদিনের ক্রিকেট ম্যাচটি শুরু হয়েছে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায়। দিবারাত্রির ক্রিকেট ম্যাচ সবসময় দুপুর আড়াইটা কিংবা ৩টায় শুরু হলেও আজকের ম্যাচটি কেনো দুপুর ১২টায় শুরু হলো সেটা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
খেলাটি সপ্তাহের অন্য কোনো দিনে অনুষ্ঠিত হলেও হয়তো কথা থাকতো না। কিন্তু পবিত্র জুমার দিনে নামাজের সময় খেলা রাখা নিয়েই বিতর্ক। ক্রিকেটপ্রেমী ও সাধারণ মানুষ বলছেন, বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ। প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ এদেশে মুসলমান। ক্রিকেটাররাও প্রায় সবাই মুসলমান। এমনকি তাদের সিংহভাগই নামাজীও। কেনো তাদেরকে ধর্মীয়ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ জুমার নামাজ আদায়ের সুযোগ দেয়া হলো না?
শুধু ক্রিকেটাররাই নয়, হাজার হাজার দর্শককেও আজকের জুমার নামাজ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ইচ্ছে থাকা সত্বেও তরা জুমার নামাজ আদায় করতে পারেননি। এনিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন তারা। তাদের মতে, অন্য কোনো দেশ হলেও কথা ছিলো, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এমনটা কখনোই কাম্য নয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, দিবারাত্রির ম্যাচ সাধারণত দুপুর আড়াইটা বা তিনটায় শুরু হলেও কেনো আজকে ১২টায় শুরু হলো? নামাজের পর খেলা শুরু হলে কি খুব সমস্যা হয়ে যেতো? কারা এই সময় নির্ধারণ করেছে? তারা কেনো জুমার নামাজের ব্যাপরটি বিবেচনায় নেননি? নিশ্চই এখানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ছিলো। কেনো তারা এই ব্যাপরটিকে এড়িয়ে গেছেন? নাকি ইচ্ছেকৃতই এমনি করেছেন?
সদ্য অনুষ্ঠিত বিপিএলেও জুমার দিনের খেলাগুলো ৩০ মিনিট পরে শুরু হতে দেখা গেছে। এই বিলম্বের একমাত্র কারণ ছিলো, ক্রিকেটাররা যাতে জুমার নামাজ আদায় করতে পারেন। এবং দর্শকরাও যাতে জুমার নামাজ আদায় করে স্টেডিয়ামে ঢুকতে পারেন। বিপিএলে এমনটা করা গেলে আজকের খেলায় কেনো করা যাবে না সেটা নিয়েই প্রশ্ন ক্রিকেটপ্রেমীদের।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বড় বা মূল অংশই নামাজি। তারা এমনিতেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। দেশের বাইরে সফরে গিয়েও মসজিদে জুমার নামাজ পড়েন। মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান, মুমিনুল হক, তাইজুল ইসলাম ও নুরুল হাসান সোহানদেরকে নিয়মিতই নামাজ পড়তে দেখা যায়। এমনকি মাহমুদুল্লাহ ও তামিম গুগল খুঁজে জুমার নামাজের খুতবা বের করেছেন এমন খবরও পত্রিকায় এসেছে।
আজকের বাংলাদেশ শ্রীলংকা ক্রিকেট ম্যাচের বিতর্কিত সময়সূচী নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষোভ ঝেড়েছেন অনেকেই। শাহ আলম নামে একজন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এর পরিচালকদের নিন্দা জানাই, কারন বাংলাদেশের খেলার জন্য অনেক মানুষের জুমার নামাজ আজ মিস হবে।’
মাহমুদা আক্তার জেনি নামে একজন লিখেছেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ট ৯২% মুসলমানের এই দেশে পবিত্র শুক্রবার জুমার নামাজের সময়টা বিবেচনা করে খেলার সময় নির্ধারণ করলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কি এমন ক্ষতি হতো? জুমার দিন জুমার নামাযের সময় কেন ক্রিকেট খেলা হবে? বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা কি মুসলমান নয়? কোন ক্রিকেটার যদি নামাজের সময় মাঠ ছেড়ে মসজিদে যেতে চায় তবে কি নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হবে? তবে কি খেলোয়াড়দের কোন ধর্মীয় অনুভুতি থাকতে নেই? কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি ।’
মো. সুমন রেজা বলেছেন, ‘আমরা ক্রিকেট সবাই ভালোবাসি, কিন্তু নামাজের চাইতে বেশি নিশ্চয়ই নয়। আজ শুক্রবার বেলা ১২টায় কোথায় সবাই নামাজের প্রস্তুতি নেবে, তা না নিয়ে খেলতে যেতে হবে! কেন? খেলাটা নামাজের পরে দিলে কি এমন সমস্যা হতো?’
মো. নাজিম উদ্দিন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আচ্ছা বিসিবি কি আমাদের আবেগ নিয়ে খেলা করতেছেন? আজকে জুমার দিন যখন মানুষ জুমার নামাজ পড়তে রেডি হবে, তখন দর্শকদের মাঠে ডুকতে হবে,একটা মুসলিম দেশে এটা কি করে সম্ভব। তারপর টিকেটের মাঝে বাংলাদেশ বানান ভুল। আবার ১৫০ টাকার টিকেট নিতেছে ৪৫০ টাকা। সব কিছু নিয়ে বিসিবির এত খামখেয়ালি কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায়না।’