অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা উত্তর সিটি মেয়রের শূন্যপদে উপনির্বাচন ও সম্প্রসারিত অংশের কাউন্সিলর নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। ৩ মাসের জন্য নির্বাচন স্থগিত করা হলেও বর্তমান সরকারের আমলে এ নির্বাচন আর হবে কিনা এনিয়ে বিশিষ্টজনসহ সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদের নির্বাচন আপাতত আর হচ্ছে না। আর মানুষের মনে সন্দেহ জাগার যুক্তিসঙ্গত কিছু কারণও রয়েছে।
৩৬টি ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গঠিত। এই ৩৬টি ওয়ার্ড নিয়েই এতদিন যাবত উত্তর সিটির কার্যক্রম চলে আসছে। এরমধ্যে সরকার সিটি করপোরেশনকে সম্প্রসারণ করতে গিয়ে নতুন আরও ১৮টি যুক্ত করেছে।
জানা গেছে, উত্তর সিটির ৩৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। নতুন করে যুক্ত করা ১৮টি ওয়ার্ডের কিছু সমস্যার কারণে হাইকোর্ট আসন্ন সিটি নির্বাচন স্থগিত করেছেন। আদালত মূলত ৩টি কারণে সিটি নির্বাচন স্থগিত করেছেন।
প্রথমত: ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৮ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এখন যিনি প্রার্থী হবেন তিনি কিন্তু জানেন না তিনি ভোটার কিনা। তাছাড়া মনোনয়নপত্রে ৩০০ ভোটারের স্বাক্ষর থাকতে হবে। ভোটার তালিকা প্রকাশ না হলে এটা সম্ভব হচ্ছে না।
দ্বিতীয়ত: স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ৫ (৩) উপধারা অনুযায়ী ‘মেয়রের পদসহ কর্পোরেশনের শতকরা ৭৫ ভাগ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইলে এবং নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হইলে, কর্পোরেশন, এই আইনের অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে, যথাযথভাবে গঠিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।’এ আইন মতে, উত্তর সিটি কর্পোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি মিলে কাউন্সিলর শতকরা ৭৫ ভাগ হয় না। কারণ নতুন ১৮টিতে তো নির্বাচনই হয়নি। সে হিসেবে মেয়র পদই তো গঠিত হচ্ছে না।
তৃতীয়ত: সম্প্রসারিত ১৮টি ওয়ার্ডে যারা কাউন্সিলর হবেন তারা কত দিনের জন্য নির্বাচিত হবেন। তারা কি পাঁচ বছরের জন্য হবেন, না আড়াই বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। তাও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
১৮টি ওয়ার্ডের গুরুতর এমন ৩টি সমস্যা থাকার পরও নির্বাচন কমিশন কেন মেয়র পদের উপনির্বাচনের সঙ্গে এই ওয়ার্ডগুলোর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলো। সবার মুখে এখন এই প্রশ্ন।
বিশিষ্টজনেরা বলছেন, সমস্যাগুলো নির্বাচন কমিশনারদের অবশ্যই জানা আছে। তফসিল ঘোষণা করার পর যে নির্বাচন স্থগিত চেয়ে কোনো ব্যক্তি আদালতে রিট করতে পারেন সেটাও তাদের জানা ছিল। পুরো ঘটনাটিই ঘটেছে পরিকল্পিতভাবে। সরকারের অদৃশ্য হাতের ইশারাতেই যে নির্বাচন কমিশন কাজটি করেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার বুঝতে পেরেছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাদের দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর নির্বাচন সুষ্ঠু না হলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এটার প্রভাব পড়বে। এমনকি বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হলেও প্রভাব পড়বে। এজন্য সরকার নির্বাচনটি বন্ধ রাখার একটি পথ খুঁজছিল। নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ড নিয়ে যেহেতু একটু জামেলা আছে, সরকার সেই সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে। আর এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন সহযোগিতা করেছে।