অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
তাবলিগ জামাতের মূলনীতি নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে বহু বছর ধরেই। ফাজায়েলে আমল নামে ছয় উসূলের একটি বইয়ের নির্দেশনার আলোকেই তাদের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, কুরআনের মৌলিক বিষয়গুলো তাদের এই বইয়ে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। বিশেষ করে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি তারা সব সময়ই এড়িয়ে চলে। ফাজায়েলে আমল নামক বইয়ে অল্প কিছু কুরআনের আয়াত ও কয়েকটি সহীহ হাদিস আছে। এখানে আবার বেশ কিছু জাল হাদিস ও কাল্পনিক গল্পকে হাদিস বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এসব নিয়েই মূলত দীর্ঘদিন যাবত আলেম ওলামাদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি হয়ে আসছে।
তারপর তাবলিগের লোকদের বিরুদ্ধে গুরুতর একটি অভিযোগ হল, তারা মানুষকে ভাল কাজের কথা বললেও সকল প্রকার অন্যায়ের প্রতিবাদ করা থেকে বিরত থাকে। এমনকি আল্লাহ, রাসুল, কুরআন, হাদীস ও ইসলামী শিক্ষা নিয়ে ধর্মবিদ্বেষীরা গালিগালাজ করলেও এবিষয়ে কোনো কথা বলেনি তাবলিগ জামাতের লোকজন। আর তাবলিগ জামাতের প্রধান কার্যালয় হলো ভারতের দিল্লিতে। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করলে সারা বিশ্বের মুসলমানরা বারুদের মতো জ্বলে উঠে। কিন্তু, দিল্লিতে বসেও তাবলিগ জামাতের লোকজন একটি টু শব্দও করেনি।
এসব কারণে মানুষের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরেই তাবলিগের ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয় রয়েছে। অনেকেই বলে থাকে ইসলামকে কেবলই মসজিদের ভেতর আবদ্ধ করে রাখার লক্ষ্যেই তাবলিগ জামাত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনেক আলেম ওলামা এর পেছনে অনেক চক্রান্ত আছে বলেও মন্তব্য করে থাকেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের তাবলিগ জামাতের মূলকেন্দ্র নিজামুদ্দীন মারকাযের প্রধান মওলানা সাদ কান্ধলভির কিছু বক্তব্য নিয়ে আবার নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তাবলিগের লোকজন অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের বিরুদ্ধে। তারা এখনো মাইকে আজান দেয় না। বিশ্ব ইজতেমায়ও এটা করা হয়। এনিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ তাদের প্রতি প্রচন্ড ক্ষুব্ধ। এখন মাওলানা সাদের কিছু বিতর্কিত বক্তব্য মানুষকে আরও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।
মাওলানা সাদ বলেছেন, ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল ফোন রাখা হারাম। কারো পকেটে ক্যামেরা বিশিষ্ট মোবাইল রেখে নামায পড়লে নামায শুদ্ধ হবে না। যে উলামায়ে কেরাম ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখেন, তাঁরা উলামায়ে ছূ (নিকৃষ্ট)। বারবার কসম করে বলেন, তাঁরা হলেন উলামায়ে ছূ। এমন আলেমরা হল গাধা। মোবাইলে কুরআন শরীফ পড়া এবং শোনা, প্রস্রাবের পাত্র থেকে দুধ পান করার মতো। উনার শব্দ হল, পেসাবদানী ছে পানি পিনা হাঁয়’। কুরআন শরীফ শিখিয়ে যাঁরা বেতন গ্রহণ করেন, তাঁদের বেতন বেশ্যার উপার্জনের চেয়ে খারাপ। যেই ইমাম এবং শিক্ষকরা বেতন গ্রহণ করেন, তাদের আগে বেশ্যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
তিনি আরও বলেছেন, রাসূল (সা.)এর পর কেবল তিনজনের বাই’আত পূর্ণতা পেয়েছে, বাকী সকলের বাই’আত অপূর্ণ। তিন জন হলেন; শাহ ইসমাঈল শহীদ, মাওলানা ইলিয়াছ ও মাওলানা ইউসূফ। বিশেষ করে সাদ বলেছেন, তাবলিগ না করে কেউ বেহেস্তে যেতে পারবে না।
এদিকে, ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দসহ বাংলাদেশের বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরামও মনে করছেন মাওলানা সাদের এসব বক্তব্য শুধু বিভ্রান্তিকরই নয়, কুরআন-হাদীসের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এসব ভারতের কোনো সম্প্রদায়ের শেখানো কথা। ইসলামের নামে মাওলানা সাদ এখন ভারতের কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। কোনো মুসলমানের জন্য সাদের এসব কথা কখনো জায়েজ হবে না।
এদিকে, দেশের বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরামের তীব্র বিরোধীতার পরও সরকার মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমিত দেয়া নিয়ে এখন বিভিন্ন মহলে সমালোচনা চলছে। তারা বলছেন, দেশের ওলামায়ে কেরাম যেখানে সাদকে চাচ্ছেন না সেখানে সরকার তাকে দেশে ঢুকতে দিলো কেন? এখানে সরকারের স্বার্থ কী?