অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন(ডিএনসিসি) উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে আজ। যদিও ইতোমধ্যেই এই নির্বাচন নিয়ে রাজনীতির মাঠ সরগরম হয়ে উঠেছে।
গ্রীন সিগনাল পেয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন সাবেক বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম। বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো প্রার্থীতা চূড়ান্ত করা না হলেও তাবিত আউয়ালের নাম শোনা যাচ্ছে।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে হঠাৎ চমক দেখিয়েছে জামায়াত। জোটের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের আমির মু. সেলিম উদ্দিনকে তারা এককভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এরইমধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রীক ঘরোয়া একাধিক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন সেলিম উদ্দিন। তার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভোট চেয়ে প্রচারণা চলছে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
গতকাল রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে ২০ দলীয় জোটের এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় দুই ঘন্টা ব্যাপী অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বলতে গেলে প্রধান আলোচ্য বিষয়ই ছিলো ডিএনসিসি উপনির্বাচন। এই আলোচনার বড় সময় জুড়েই আলোচিত হয় জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে। জোটের প্রায় সব দলের নেতারাই এই বিষয়টিকে সামনে তুলে আনেন।
জানা গেছে, বৈঠকে উপস্থিত জামায়াতের একমাত্র নেতা আব্দুল হালিম জোট নেতাদের নানা প্রশ্নের সম্মুখিন হলেও তিনি দলের একক প্রার্থীতা নিয়ে অনড় ছিলেন। যদিও তিনি দলের শূরা কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন এবং জোটের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার প্রতি আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তরের এক নেতা অ্যানালাইসিস বিডিকে জানিয়েছেন, ‘২০ দলীয় জোট গঠিত হয়েছে মূলত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে উদ্দেশ্য করে। স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে জোটগত সিদ্ধান্তের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এটা জোটের অন্তর্ভুক্ত সবগুলো দলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও জোটগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে।’
জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণের আরো কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এই বিষয়ে একই ধরণের বক্তব্য পাওয়া গেছে। ডিএনসিসিতে এককভাবে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে দলের অনড় সিদ্ধান্তের কথাই সবাই বলেছেন। তবে প্রার্থী প্রত্যাহারের সম্ভাবনাকে অধিকাংশ নেতা নাকচ করলেও কেউ কেউ রাজনীতির শেষ বলে কিছু নেই বলেও মন্তব্য করেছেন।
এদিকে গতকালের বৈঠকে বিএনপিসহ জোটের অন্য দলগুলোর চাপ সত্বেও জামায়াত তাদের একক প্রার্থীতা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা করে এই বিষয়ে মীমাংসা করতে জোট-সমন্বয়ক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জোটের পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, মো. সেলিম উদ্দিনকে জামায়াতের মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে দলটির উদ্যোগে বিস্ময় প্রকাশ করা হয় বৈঠকে। জোটের একজন সিনিয়র নেতার ভাষ্য, জামায়াতের প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে কমবেশি সবাই আলোচনা করেছেন। সবাই বলেছেন, হঠাৎ করে তারা কেন প্রার্থী দিলো। তবে শরিকদের আলোচনার পর জামায়াতের প্রতিনিধি দলটির নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম বৈঠকে বলেন, আমরা অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী দিয়েছি। এটি চূড়ান্ত নয়। বিষয়টি বিবেচনা করা যাবে।
জানা যায়, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জামায়াতসহ জোটের অন্য দলগুলোর সাথে কোনো প্রকারের আলোচনা করেনি বিএনপি। একক সিদ্ধান্তেই বিএনপি প্রার্থী দিয়েছে এবং সোচনীয়ভাবে হেরেছে। বিএনপির এই ভরাডুবির জন্য অনেকের মত জোটের দলগুলোও জোটের সাথে আলোচনা না করাকেও একটি কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন। আলোচনা না করায় জোটের বিশেষ করে জামায়াতের বিপুল পরিমান ভোট বিএনপি পায়নি বলেই অনেকে মনে করেন।
এদিকে রংপুরের সেই ক্ষোভ থেকেও জামায়াত ডিএনসিসিতে তাদের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে বলেও মনে করছেন অনেকে। এছাড়া কেউ কেউ বলছেন জামায়াত হয়তো রাজধানী ঢাকাতে তাদের শক্তি দেখাতে চাচ্ছে। তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে তাদের জনপ্রিয়তা যাছাইয়ের জন্যও হয়তো এই নির্বাচনটি এককভাবে করতে চাচ্ছে।
জামায়াত যদি সত্যি সত্যি রাজধানীতে তাদের শক্তি এবং জনপ্রিয়তা যাছাইকেই টার্গেট করে থাকে তাহলে ডিএনসিসিতে তারা তাদের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করবেন না বলেই মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।