অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সদ্য অনুষ্ঠিত ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ২০০ প্রশ্নের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিংবা ধর্ম প্রসঙ্গে একটি প্রশ্নও রাখা না হলেও শুধুমাত্র কমিউনিজম নিয়েই রাখা হয়েছে ৪টি প্রশ্ন। এ অবস্থায় প্রশ্নকর্তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। প্রশাসন ও শিক্ষাব্যবস্থা কি তাহলে কমিউনিষ্টরা নিয়ন্ত্রণ করছে? এমন প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।
জানা যায়, গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত বিসিএসের ৩৮তম প্রিলিমিনারী পরীক্ষা দেশের ২৮৩টি পরীক্ষা কেন্দ্রে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশ নেয় এযাবতকালের সর্বোচ্চ সংখ্যক তিন লাখ ৪৬ হাজার ৫৩২ জন পরীক্ষার্থী।
বিসিএসের প্রশ্নপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে এর ২০০টি প্রশ্নের মধ্যে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ও ইসলাম বা অন্য কোনো ধর্ম সম্পর্কে একটি প্রশ্নও রাখা হয়নি। যদিও শুধু কমিউনিজম বা বাম রাজনীতি নিয়েই অন্তত ৪টি প্রশ্ন রাখা হয়েছে।
৪ নং সেট ও সুরমা কোড নামের একটি প্রশ্ন অ্যানালাইসিস বিডির হাতে এসেছে। সেটাতে দেখা গেছে প্রথম প্রশ্নটিই করা হয়েছে লেলিনের একটি বইয়ের নাম দিয়ে। প্রশ্নটি ছিলো- `Imperialism, the highest stage of capitalism’ বইটি কার লেখা? এর উত্তর হবে ভি. আই. লেলিন। এরপর ১৬নং প্রশ্নে বলা হয়েছে- ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল কোনটি? তার উত্তর হবে কমুনিষ্ট পার্টি। ২০নং প্রশ্নে বলা হয়েছে- অক্টোবর বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছেন কে? এর উত্তর হবে ভি. আই. লেলিন। এছাড়া ৬নং এও মার্কসবাদ দিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে।
মার্কস-লেলিনদের নিয়ে এত প্রশ্ন রাখায় সবার মনে প্রশ্ন উঠেছে প্রশ্নকারীরা আসলে কি চান? তারা কি বিসিএস প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে কমিউনিজম শিক্ষা দিতে চান? বামপন্থি শিক্ষায় শিক্ষিত করে বিসিএস ক্যাডার নিয়োগ দিতে চান?
দেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। কমিউনিজম ইসলাম ধর্মের সম্পূর্ণ বিপরীত একটি মতাদর্শ। এমন পরিস্থিতিতে ইসলাম কিংবা অন্য কোনো ধর্ম সম্পর্কেই একটিও প্রশ্ন না করে ধর্মবিরোধী কমিউনিজম নিয়ে ৪টি প্রশ্ন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারীরাও।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কমিউনিজম নিয়ে প্রশ্ন রাখাটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু দেশের স্বাধীনতার স্থপতিকে নিয়ে কিংবা ধর্ম বিষয়ে একটিও প্রশ্ন না করে শুধুই কমিউনিজম নিয়ে ৪টি প্রশ্ন করা সম্পূর্ণ পক্ষপাতিত্ব। এখানে সুস্পষ্টভাবে একটি মতাদর্শকে হাইলাইট করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় অন্য বিষয়গুলোকে চেপে যাওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে কমিউনিজমে বিশ্বাসী লোকের সংখ্যা ১ শতাংশেরও কম। অথচ তারাই আজ সরকারি দল আওয়ামী লীগের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রশাসনিক সকল উঁচুস্তরে বসে আছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও ছাত্রজীবনে বাম দল করতেন। তার নেতৃত্বে প্রশ্নফাঁসের সর্গরাজ্য কায়েম করে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এবার তারা দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষিত বিসিএস ক্যাডারদেরকে টার্গেট করেছে।
বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ট্যাংকের উপর উল্লাস করা ইনু, বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানো মতিয়া, রাশেদ খান মেনন, নুহ-উল-আলম লেলিন, নুরুল ইসলাম নাহিদদের মত কট্টর বামরা আওয়ামী লীগ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখল করে বসে আছে। তারা পাঠ্যপুস্তক থেকে অধিকাংশ মুসলিম লেখক ও কবিদের গদ্য-পদ্য সরিয়েছে, এখন বিসিএস প্রশ্নের মাধ্যমে পতিত কমিউনিজমকে শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিত এসব বিষয়ে খেয়াল রাখা এবং দেশের সিংহভাগ মানুষের স্বার্থ ও অনুভূতির প্রতি নজর দেয়া।