অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও তার শিক্ষামন্ত্রণালয়। সচিবালয় থেকে শুরু করে ফুটপাথের চায়ের দোকান পর্যন্ত এখন শুধু একটাই আলোচনা।
বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।’ এজন্য যেকোনো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি সেক্টর হলো শিক্ষা খাত। বাংলাদেশে যেটাকে বলায় হয় শিক্ষামন্ত্রণালয়। এই শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষা অধিদপ্তর, পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগসহ শিক্ষার সব বিভাগ। আর এসবকে নিয়ন্ত্রণ করে শিক্ষামন্ত্রণালয় ও তার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী।
দেশের সব শিক্ষককে ছবক দেন শিক্ষামন্ত্রী। এমনকি শিক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যায়গুলোর উপাচার্যদেরকেও তিনি বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ ও ছবক দিয়ে থাকেন। বলা যায়, শিক্ষামন্ত্রী হলেন সব শিক্ষকের শিক্ষক। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যদি ডক্টরেট ডিগ্রীধারী হন তাহলে শিক্ষামন্ত্রীর পড়ালেখা বা যোগ্যতা কেমন হওয়া দরকার?
অনেকেরই ধারণা বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ একজন উচ্চ শিক্ষিত লোক। কারণ, উচ্চ শিক্ষিত ছাড়াতো আর দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরিচালনা করা যায় না। এ ধারণা যাদের ছিল সেটা সম্পূর্ণ ভুল।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত যে কয়জন ব্যক্তি শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের সবচেয়ে কম শিক্ষিত হলেন বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এমনকি বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রী মাস্টার্সও পাস করেন নি। তিনি বিএ পাস মাত্র।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনের হলফনানায় নুরুল ইসলাম নাহিদ নিজ হাতে লিখেছেন তার সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা বি এ। সিলেট এম সি কলেজ থেকে পাস করেছেন তিনি। যদিও বিভিন্ন জায়গায় তার পরিচিতির মধ্যে লেখা আছে যে তিনি এমসি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করেছেন। ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ে তিনি কিসে পড়েছেন সেটা কোথাও উল্লেখ করেন নি। তবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পড়ালেখা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ আছে।
২০১৫ সালে মুন্সীগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেছেন দুর্বৃত্তরা তার উচ্চশিক্ষার সনদ পুড়িয়ে ফেলেছে। আমি ও বাংলাদেশ আ’লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন একই আবাসিক হলে থাকতাম। তিনি বলেছেন, একদিন দুস্কৃতকারীরা আমাদের আবাসিক হলে আগুন ধরিয়ে বই-খাতা, আসভাবপত্র ও মূল্যবান কাগজ পত্রাদি পুড়িয়ে দেয়। সেই আগুনে সব কিছুর সঙ্গে আমার উচ্চ শিক্ষার সার্টিফিকেট পুড়িয়ে দিয়েছিল দুস্কৃতকারীরা। সেই থেকেই আমার উচ্চ শিক্ষার কোন সার্টিফিকেট আমার কাছে নেই। তার এই বক্তব্য বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিল নেই বলেও মনে করে করছেন অনেকে।
কারণ, শিক্ষা সনদ হারিয়ে, পুড়ে, চুরি গেলে বা নষ্ট হলে থানায় জিডি করে পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সংশ্লিষ্ট বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করলে এক মাসের মধ্যে নতুন সনদ দেয়া হয়। মন্ত্রী কেন তার কথিত উচ্চশিক্ষার ‘দুর্বৃত্ত কর্তৃক পুড়িয়ে ফেলা’ সনদটি তুলছেন না, তা নিয়ে মানুষের বিরাট প্রশ্ন। মন্ত্রী চাইলে তো দিনে দিনেই তার সনদটি তুলতে পারেন।
এরপর, সংসদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনভিপ্রেত মন্তব্য করায় ডাকসুর সাবেক সাহিত্য সম্পাদক জাফর ওয়াজেদ ২০১৫ সালের ১০ মার্চ শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।
স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সনদ নেই। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন, কিন্তু লেখাপড়ায় ঠনঠন। সনদ না থাকায় তাকে সিনেটের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট সদস্য করা যায়নি। এ থেকেও প্রমাণিত হয় যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ উচ্চ শিক্ষিত নন।